4D প্রিন্টিং প্রযুক্তি এসেছে প্রায় ৩০ বছর হয়ে গেল। আর এখনো আমরা এই প্রযুক্তির নতুন সব ব্যবহার, প্রিন্টিং এর জন্যে নতুন ম্যাটেরিয়াল বা নতুন সব 3D প্রিন্টারের উদ্ভাবন দেখছি। তবে এরই মধ্যে এসেছে নতুন প্রযুক্তি, যাকে 4D প্রিন্টিং বলা হচ্ছে।
4D প্রিন্টিং কী
4D প্রিন্টিং সেই প্রক্রিয়াকে বলা হয়, যার মাধ্যমে তাপ, আলো বা অন্য কিছুর প্রভাবে 3D প্রিন্ট হওয়া কোনো জিনিসের কাঠামো বদলে যায়। প্রযুক্তিটি নিয়ে বর্তমানে গবেষণা করছে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি)। তাদের ‘সেলফ-অ্যাসেম্বলি’ ল্যাবে চলমান একটি প্রকল্পে 4D প্রিন্টিং এর মাধ্যমে সেলফ-অ্যাসেম্বল হতে সক্ষম এবং প্রোগ্রাম করা যায়, এমন জিনিস উদ্ভাবনের জন্যে গবেষণা করা হচ্ছে।
কীভাবে কাজ করে 4D প্রিন্টার
বাণিজ্যিক 3D প্রিন্টার যেভাবে কাজ করে, 4D প্রিন্টার সেই একই প্রযুক্তিতে কাজ করে। তবে 4D প্রিন্টারে ইনপুট দেয়ার জন্য পদার্থ হিসেবে ব্যবহার করা হয় ‘হাইড্রোজেল’ বা ‘শেইপ মেমোরি পলিমার’-এর মতো স্মার্ট ম্যাটেরিয়াল। এসব স্মার্ট ম্যাটেরিয়ালের বিশেষ ‘তাপীয়যান্ত্রিক’ (থার্মোম্যাকানিকাল) এবং অন্যান্য ভৌত গুণাবলী রয়েছে। ফলে এসব পদার্থ আকার পরিবর্তনে সক্ষম এবং প্রচলিত 3D প্রিন্টিং ম্যাটেরিয়ালের চেয়ে আলাদা।
অন্যদিকে 3D প্রিন্টিং প্রযুক্তিতে প্রিন্ট করা জিনিসের আকার পরিবর্তন হয় না। অর্থাৎ, একবার প্রিন্ট হয়ে গেলে 3D প্রিন্ট হওয়া বস্তটির আকার একই রকম থাকে। এবার 4D প্রিন্টিংয়ে প্রযুক্তির কিছু সম্ভাব্য ব্যবহার দেখা যাক।
সেলফ-রিপেয়ার পাইপিং সিস্টেম
4D প্রিন্টিংয়ের একটি সম্ভাব্য ব্যবহার হচ্ছে অফিস, বাসাবাড়ি বা অন্যান্য স্থাপনায় ব্যবহৃত পাইপিং বা প্লাম্বিং সিস্টেম। 4D প্রিন্টিংয়ের মাধ্যমে এমন পাইপিং সিস্টেম তৈরি করা সম্ভব, যেটা পানির প্রবাহ এবং চাহিদার ওপর নির্ভর করে আকার পরিবর্তন করতে পারে। আবার পাইপ লিক হলে বা ভেঙে গেলেও নিজে নিজেই ঠিক হতে পারে। কারণ, আগে যেমনটা উল্লেখ করা হয়েছে যে, পরিস্থিতি অনুসারে সেসব ম্যাটেরিয়ালের আকার পরিবর্তিত হয়।
সেলফ-অ্যাসেম্বলি ফার্নিচার
মূলত প্রিন্টারের সাইজের ওপরেই 3D প্রিন্টার থেকে বের হওয়া আসবাবপত্রের আকার নির্ভর করে। অন্যদিকে 4D প্রিন্টার দিয়ে আকার-আকৃতি পরিবর্তন করতে পারে, এমন ফার্নিচার বানানো যাবে। যেমন, 4D প্রিন্টারের সাহায্যে এমন একটা সমান বোর্ড প্রিন্ট করা সম্ভব, যেটাতে পানি দিলে বা তাতে আলো ফেললে সেটা আকার পরিবর্তন করে চেয়ারের আকার ধারণ করবে।
চিকিৎসা ব্যবস্থা
আবার চিকিৎসা ব্যবস্থার মতো যেসব শিল্পের কাজে সূক্ষ্মতার দরকার হয়, সেখানেও 4D প্রিন্টিংয়ের কাজ আছে। প্রোটিন প্রিন্ট করা 4D প্রিন্টারের দারুণ একটা ব্যবহার হতে পারে। গবেষকেরা তাই এখন কাজ করছে এমন প্রোটিন যা নিজে নিজে স্থাপন করতে পারে এবং নিজেকে ভাঁজ করে ফেলতে পারে।
ফ্যাশন শিল্পে
ফ্যাশন শিল্পের ধারণাই পালটে দিতে পারে 4D। এমআইটির সেলফ অ্যাসেমব্লি প্রিন্টিং ল্যাব 4D প্রযুক্তির এসব বিষয়ের সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে একটি আইডিয়া হচ্ছে আবহাওয়া বা কাজের ধরনের উপর নির্ভর করে পোশাকের উপাদান বদলে যাওয়া। যেমন আপনি দৌড়ানো শুরু করলে আপনার জুতার আকার বদলে যাবে, যাতে আপনি আরও বেশি স্বাচ্ছন্দ্য ও আরাম পান দৌড়ানোর সময়।