বর্তমানে বিশ্বজুড়েই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দেখা যাচ্ছে। মূলত বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বাড়ার ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের জলবায়ুর ধরন বদলে যাচ্ছে। কারণ, প্রচুর সংখ্যক গবেষণায় দেখা গেছে যে, বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা বাড়ার সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের দৃশ্যমান সম্পর্ক রয়েছে।
এই তাপমাত্রা বাড়ার প্রধান কারণ হলো গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ। আর গ্রিনহাউস গ্যাসের মধ্যে কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি বাড়ায়। কার্বন ডাই অক্সাইড মূলত সূর্যের বিকিরণকে আমাদের বায়ুমণ্ডলের ভেতরে তাপ আকারে আটকে রাখে। এই শক্তির একটি বড় অংশ পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে বেরিয়ে আসার পর মহাকাশে চলে যাওয়ার কথা। কিন্তু কার্বন ডাই অক্সাইড তা হতে দেয় না।
কার্বন ডাই অক্সাইড-এর আণবিক বন্ধনের ফলেই এই গ্যাসটি তাপ হিসেবে শক্তিকে ধরে রাখতে পারে। অর্থাৎ যত বেশি করে কার্বন নিঃসরণ হয়, ততই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মধ্যে আরও বেশি তাপ আটকে যায়। এবং এর ফলে ভবিষ্যতে অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক পরিণামই ঘটতে পারে।
গ্রিনহাউস গ্যাস মূলত বিভিন্ন উৎস থেকে উৎপন্ন হয়। যেমন গাড়ি এবং পরিবহনে পেট্রল, ডিজেল বা গ্যাসের মতো জ্বালানির ব্যবহার, কাঠ পোড়ানো, দাবানল, বিদ্যুৎ উৎপাদন বা শিল্প কারখানার কার্যক্রমের বিভিন্ন পর্যায়েই কার্বন নিঃসরণ হয়ে থাকে।
এদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আগের চেয়ে এখন বেশি স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। পৃথিবীর অনেক অঞ্চলেই এখন ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ অনেক বেশি পরিমাণে হচ্ছে। এতে সমুদ্রের স্রোতের গতিপথ পরিবর্তিত হচ্ছে। ফলে সামুদ্রিক জীবন যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমন আমাদের গ্রহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাতেও জটিলতা দেখা দিচ্ছে।
তাছাড়া উপকূলীয় অঞ্চলে পানির উচ্চতাও বাড়ছে এর ফলে। অর্থাৎ, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে আর উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। যে কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিষয়টি কেন্দ্র করে অনেক পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
কার্বন-মুক্ত ডেটা সেন্টার-
ভবিষ্যতে নতুন বিভিন্ন প্রযুক্তির ওপর আমরা আরো নির্ভরশীল হয়ে পড়বো। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের মতো সমস্যা মোকাবেলায় প্রযুক্তি খাতও যাতে পরিবেশবান্ধব হয়, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। ডেটা সেন্টার হলো এমন বড় একটি ক্ষেত্র, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার জন্য যেসব দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
ডেটা সেন্টার হিসেবে বেশিরভাগ সময়ই সম্পূর্ণ এক বা একাধিক ভবন ব্যবহার করা হয়। মূলত কম্পিউটার সিস্টেম সংরক্ষণ করাটাই ডেটা সেন্টারের কাজ। তবে এ কাজের জন্য অনেক সময় একটি ছোট শহরের চাহিদার সমান বৈদ্যুতিক শক্তির প্রয়োজন হয় একটি ডেটা সেন্টারের। এর প্রধান কারণ হলো, ডেটা সেন্টারের হার্ডওয়্যার চালানোর জন্য প্রচুর পরিমাণে শক্তি লাগে। এবং সেসব হার্ডওয়্যার বা ডিভাইস ঠাণ্ডা রাখতে আরও বেশি শক্তির দরকার হয়।
সম্প্রতি কম কার্বন নিঃসরণ করে, এমন অনেক ডেটা সেন্টার তৈরি হয়েছে। তাদের লক্ষ্য হলো সম্পূর্ণ কার্বন-মুক্ত জ্বালানি বা শক্তি কাজে লাগানো। যদিও পুরাপুরি কার্বনমুক্ত হতে এখনো অনেক সময় লাগবে। তবে বেশ কিছু ডেটা সেন্টার উদ্ভাবনী অনেক সমাধান নিয়ে আসছে। যেমন, এসব ডেটা সেন্টার লো-পাওয়ার সার্ভার ব্যবহার করছে, ফ্রি এয়ার কুলিং ব্যবহার করছে বা তাদের নিজস্ব যন্ত্রপাতি থেকে নির্গত তাপকে পুনরায় শক্তি হিসেবে ব্যবহার করছে।
গুগল এবং অ্যাপলের মতো এই শিল্পের বড় অনেক প্রতিষ্ঠান ঘোষণা দিয়েছে নিজেদের স্থাপনাগুলিতে ১০০% পুনর্নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করার। অন্যদিকে, মাইক্রোসফট এবং ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানও সবুজ শক্তির ব্যবহার শুরু করেছে।
২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ পুরোপুরি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ব্যাপক পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। পরিবেশবান্ধব ডেটা সেন্টারগুলি সেই পথেই এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নতুন নতুন উন্নয়নের পাশাপাশি আরও পরিবেশবান্ধব সমাধান সামনে আসছে। হতে পারে ডেটা সেন্টার-এর মতো অন্যান্য ক্ষেত্রেও সম্পূর্ণ কার্বন-মুক্ত জ্বালানির ব্যবহার নিশ্চিত করাটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। কিন্তু এই প্রক্রিয়া খুবই মূল্যবান, কারণ পৃথিবীই আমাদের একমাত্র বাসস্থান। আর এই বাসস্থানে টিকে থাকতে হলে একে বসবাসের যোগ্য রাখতে হবে।