আপনার কর্মজীবনের দক্ষতা ও অর্জন সবার সামনে প্রকাশ করার খুবই কার্যকর একটা প্ল্যাটফর্ম হলো লিংকডইন। ব্যবসায়ী, নতুন উদ্যোক্তা বা অন্য যেকোনো পেশাদারের যদি ঠিকমতো সাজানো একটা লিংকডইন প্রোফাইল থাকে, তাহলে কর্মজীবনে নানান ধরনের সুবিধা লাভ করা যায়।
তবে অনেক সময় আমরা এ বিষয়ে অবহেলা করি। নিজের আইডিয়া বা কোম্পানির ব্র্যান্ডিংয়ের পেছনে অনেক সময় ব্যয় করলেও ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিজের ব্র্যান্ডিংয়ের গুরুত্ব আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না। লিংকডইন এমন একটা মাধ্যম, যেখানে বিভিন্ন পেশার ৭৪০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ যুক্ত আছে এবং তাদের মধ্যে প্রতি মিনিটে ৩ জন লিংকডইনের মাধ্যমে তাদের পছন্দের চাকরি খুঁজে পায়। তাই পেশাজীবনে এগিয়ে যেতে এই প্ল্যাটফর্মে নিজের অবস্থান দৃঢ় না করাটা হবে অবহেলার বিষয়।
১. আপনার ফিল্ডে নিজেকে বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করুন-
আপনার ক্যারিয়ার যেই ফিল্ডে গড়ে তুলেছেন, লিংকডইন প্রোফাইলের মাধ্যমে সেখানে নিজেকে একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রকাশ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। যেমন অনলাইনে লেখা আপনার কোনো আর্টিকেল বা অন্য কোনো কনটেন্টের লিংক প্রোফাইলে যুক্ত করে দিতে পারেন। এছাড়া আপনি যে বিষয় নিয়ে কাজ করেন, সেই বিষয়ে কোনো গভীর বিশ্লেষণমূলক লেখা শেয়ার করে এই ফিল্ডের স্বনামধন্য মানুষদের নজরে আসতে পারেন।
তাই আপনার সুচিন্তিত লেখা ও কন্টেন্ট দিয়ে লিংকডইন প্রোফাইল সাজান, যাতে বাকিরা আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে ধারণা লাভ করতে পারে।
২. ঠিকমতো প্রোফাইল পিকচার বাছাই করুন-
আপনি যত ভালো কন্টেন্ট দিয়ে আপনার লিংকডইন প্রোফাইল সাজান না কেন, প্রোফাইল পিকচার পছন্দ করার সময় খামখেয়ালি করলে আপনাকে অপেশাদার মনে হবে।
তাই ছবি পছন্দ করার সময় কয়েকটা বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি। প্রোফাইল পিকচার হিসেবে কখনো গ্রুপ ফটো ব্যবহার করবেন না। এমন ছবি ব্যবহার করুন, যেখানে ব্যাকগ্রাউন্ড যতটা সম্ভব ফাঁকা আর খালি থাকে। ছবিতে ফ্রেমের ৬০% জায়গা জুড়ে যেন আপনার চেহারা থাকে। এছাড়াও যাতে ঝাপসা না দেখায়, সেজন্যে অবশ্যই ভালো কোয়ালিটির ছবি সিলেক্ট করবেন। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ছবিতে আপনাকে যেন হাস্যোজ্জ্বল দেখায়। সম্প্রতি একটা গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যাদের প্রোফাইল পিকচারে হাসিমুখ থাকে, মানুষ তাদের পছন্দ করে আর অন্যদের তুলনায় তাদেরকেই যোগ্য মনে করে।
সব মিলিয়ে তাদের ব্যাপারে মানুষের মনোভাব ইতিবাচক হয়। অবশ্য ছবিতে আপনার হাসি কেমন হবে, সেটা আপনার নিজস্ব ব্যাপার। আপনার কাজের ক্ষেত্র যদি খোলামেলা পরিবেশে আধুনিক ধরনের হয়, তাহলে মন খুলে হাসি দিতে পারেন। আবার যদি কর্পোরেট পরিবেশে কাজ করেন, তবে হালকা মুচকি হাসি দেয়াই ভালো হবে।
৩. আপনার বায়োগ্রাফি সামারিকে গল্পের মতো সাজান-
যারা কর্মী নিয়োগ করেন, তাদেরকে প্রতিদিন অসংখ্য সিভি, বায়োডাটা এবং রেজুমে দেখতে হয়। তাই লিংকডইনে আপনার সংক্ষিপ্ত বায়োডাটা যাতে সবার চাইতে আলাদা হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আপনার ক্যারিয়ারের সাথে সম্পর্কিত কিছু চলতি শব্দ যদি ব্যবহার করতে পারেন, তবে মানুষ খুব সহজেই আপনার বায়োতে চোখ বুলিয়ে নিতে পারবে। তাই বায়োকে একটা গল্পের মতো সাজান।
কেবল নিজের গুণগান, দক্ষতা বা কাজের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করাটাই এখানে যথেষ্ট না। বায়োতে আপনার কর্মক্ষেত্রের পুরো জার্নিটা তুলে ধরুন। প্রয়োজনে কিছু ব্যক্তিগত কথাবার্তাও যুক্ত করুন। চাইলে দুই/এক লাইনে সেখানে আপনার বুদ্ধিদীপ্ততার প্রকাশ ঘটাতেও পারেন।
৪. আপনার নেটওয়ার্ককে বিস্তৃত করুন-
আপনার ফিল্ডে আপনি যে দক্ষ ও গ্রহণযোগ্য, তা প্রকাশ করার একটা সহজ উপায় হলো নিজের নেটওয়ার্ক বড় করা। এজন্য আপনার ই-মেইল আইডিকে লিংকডইন প্রোফাইলের সাথে যুক্ত করুন। এতে আপনার পরিচিত লোকজনের মধ্যে যাদের সাথে আগে কাজ করেছেন, লিংকডইনে তাদের ব্যাপারে সাজেশন আসবে।
আরেকটা ভালো উপায় হচ্ছে আপনার ফিল্ডের যেসব লিংকডইন গ্রুপ আছে, সেগুলিতে যোগ দেয়া। চাইলে ফিল্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য গ্রুপগুলিতেও যুক্ত হতে পারেন। এসব গ্রুপের বিভিন্ন আলোচনায় আপনি মতামত জানানোর সুযোগ পাবেন। ফলে যারা আপনার মতো চিন্তাভাবনা করে, তাদের সাথে আপনার যোগাযোগ তৈরি হবে।
লিংকডইনে যেমন সরাসরি ইনবক্সে মেসেজ দেয়ার সুবিধা আছে, আবার ওয়ার্ম কল অর্থাৎ লিংকডইন প্ল্যাটফর্মে ফোন করারও ব্যবস্থা আছে। এগুলি ব্যবহার করে আপনার ক্লায়েন্ট বা পার্টনারের সাথে সহজেই যোগাযোগ করতে পারবেন।
আপনার পেশাজীবনে লিংকডইন সহজেই ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। তাই বুদ্ধিমত্তার সাথে এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করুন। লিংকডইন প্রোফাইলে সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয়ে আপনার বুদ্ধিদীপ্ত কন্টেন্ট আপনাকে বাকিদের চেয়ে আলাদা করে রাখবে। এতে আপনার ফিল্ডের সেরা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের নজরে আসতে পারবেন আপনি।