বর্তমানে বহুল প্রচলিত সেন্সর প্রযুক্তির মাধ্যমে অবুঝ মেশিন থেকে মানুষের বুদ্ধিমান সহযোগীতে রূপান্তরিত হচ্ছে রোবট। এসব রোবট গতিশীল এক ধারাবাহিকতার অংশ হয়ে উঠছে। মানুষ, অন্যান্য মেশিন এবং যে ডিজিটাল পরিবেশে রোবট কাজ করে, সেগুলির সঙ্গে আরও বেশি করে মানিয়ে নিতে পারছে।
সেন্সরের সাহায্যে নির্মিত মানুষ এবং রোবটের সহযোগিতার সম্ভাব্য উপকারিতা অনেক বেশি। এর মধ্যে রয়েছে শ্রমিকদের সুরক্ষা, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, উদ্ভাবনের মাধ্যমে নতুন আয়ের প্রবাহ সৃষ্টির মতো আরও অনেক কিছুই।
ভবিষ্যতে অটোমেশনের মাধ্যমে তৈরি হবে নানান প্রযুক্তি এবং ডেটার পাহাড়। এর ফলে একসাথে বেশ কয়েকটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হাজির হতে পারে। সৌভাগ্যক্রমে, যেই প্রযুক্তিতে অটোমেশন সম্ভব হয়েছে, সেই একই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই চ্যালেঞ্জগুলি সমাধান করা যাবে।
চ্যালেঞ্জগুলি হলো-
চ্যালেঞ্জ ১- মানুষ ও রোবটের একসঙ্গে কাজ করার ঝুঁকি-
শক্তিশালী মেশিনের মাঝে ‘ভঙ্গুর’ মানবদেহ নিয়ে কাজ করা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। আজ পর্যন্ত মানুষকে সক্রিয় রোবটের কাছাকাছি অবস্থানে কাজ করা থেকে বিরত রেখেই এই ঝুঁকি কমানো হয়েছে। অনেক সময় মানুষকে শিল্ড এবং গার্ডরেইলের মাধ্যমে মেশিন থেকে দূরে রাখা হয়েছে। আবার কখনো কখনো প্রত্যেককে আলাদা আলাদা ঘরে রেখে এই ঝুঁকি কমানো হয়েছে। তবে সহযোগিতামূলক পরিবেশে এই ধরনের কৌশলগুলি আর বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। কারণ মানুষ এখন অনেক বেশি করে তাদের সহযোগী রোবটদের কাছাকাছি থেকে কাজ করা শুরু করেছে।
চারপাশের দুনিয়াটাকে বোঝা এবং সেখানে নিরাপদে কাজ করার জন্যে এসব রোবটরা যান্ত্রিক সুরক্ষার পাশাপাশি একাধিক সেন্সর এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে। পাশাপাশি একটি নতুন রোবট যে পরিবেশে নিজেকে ইনস্টল করা অবস্থায় পায়, তাতে ভবিষ্যতে আরও অনেক সেন্সর সমৃদ্ধ আইওটি (IoT: ইন্টারনেট অফ থিংস) ডিভাইস যুক্ত হবে। এমন অনেক ডিভাইসই এখন বাজারে আসার অপেক্ষায় রয়েছে।
অনেকেই আইওটি এবং রোবোটিকস প্রযুক্তিকে আলাদা ক্ষেত্র হিসাবে বিবেচনা করেন। যে কারণে দুটি শাখার মধ্যে সমন্বয়ের জায়গাগুলি আর আলোচনায় আসে না। তবে পুনরায় তাদেরকে একসাথে কল্পনা করার মধ্য দিয়ে আইওটি এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবোটিকস এখন ইন্টারনেট অফ রোবোটিকস বা আইওআরটি (IoRT) হয়ে গেছে।
চ্যালেঞ্জ ২- ডেটা ওভারলোড-
বিভিন্ন মেশিনে উচ্চ মাত্রার সেন্সর থাকায় যেকোনো শিল্প পরিবেশ ক্রমান্বয়ে সেন্সর থেকে প্রাপ্ত ডেটায় সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। তবে সাধারণ কম্পিউটিং ফ্রেমওয়ার্ক প্রায়ই এই বিপুল পরিমাণ ডেটার চাপ সইতে পারে না। আর প্রসেসিং করার জন্যে ক্লাউডে ডেটা পুশ করাটাও অনেক অ্যাপ্লিকেশনে এখন আর কার্যকর নেই।
এই সমস্যার সমাধান রয়েছে এজ ডিভাইসে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং বিশাল পরিমাণ ডেটায় অ্যাকসেস সহ এজ ডিভাইস এবং রোবট মানুষের চেয়ে অনেক দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যেহেতু বেশি কাজ করা এবং স্বাধীন ভাবে বেশি সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্যই রোবট তৈরি হয়, সেহেতু কম্পিউটিং-এর কাজ এজ ডিভাইসে হওয়াটাই জরুরি হয়ে পড়ছে।
উদাহরণস্বরূপ, এজ ডিভাইসে জমা হওয়া এবং প্রসেস করা ডেটা দিয়ে চালিত একটি রোবট তার নিজের সিস্টেম ভেঙে পড়ার আশঙ্কা আগেভাগেই শনাক্ত করতে পারে। অ্যাসেম্বলি লাইনে অন্যের সাথে যোগাযোগ করে ঝুঁকিপূর্ণ মেশিনটি নিজেকে বন্ধ করে দিতে পারে। তখন অন্য রোবটগুলি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া রোবটের ঘাটতি পূরণে তাদের কর্মপ্রবাহকে তাৎক্ষণিকভাবেই খাপ খাইয়ে নেয়।
একজন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ার ফলে প্রডাকশন লাইনটি হয়তো কিছুটা ধীর হয়ে আসবে, কিন্তু পুরোপুরি থেমে যাবে না। এরপর একজন কেউ নষ্ট হওয়া সেই রোবটটি ঠিক করে দিলে পুরো সিস্টেমটি আগের পূর্ণ গতিতে ফিরে আসবে।
চ্যালেঞ্জ ৩- এন্ড-টু-এন্ড সাইবার নিরাপত্তা-
আধুনিক বিভিন্ন রোবট দিন দিন আরো বহনযোগ্য, সহযোগিতামূলক, এজ-রেসিডেন্ট এবং অনলাইন ভিত্তিক হয়ে ওঠায় ডেটা সমৃদ্ধ সিস্টেম হ্যাকারদের টার্গেট হতে পারে। ফলে রোবট ব্যবহারকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ম্যালওয়্যার, সাইবার-চাঁদাবাজি, উৎপাদনে বিলম্বের মতো নানান ব্যবসায়িক ঝুঁকিতে পড়তে পারে। পাশাপাশি শক্তিশালী রোবোটিক সিস্টেমকে টার্গেট করে সাইবার হামলাও মানব কর্মীদের জন্য গুরুতর দৈহিক নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
সমাধান কী? একটি পূর্ণাঙ্গ এন্ড-টু-এন্ড সাইবার নিরাপত্তা পদ্ধতিই এর একমাত্র সমাধান। সিস্টেম ইন্টিগ্রেটররা যেসব মেশিন ইন্সটল করছে এবং যে সার্বিক পরিবেশে তারা কাজ করছে, তা ভালোভাবে বুঝতে হবে। পাশাপাশি সম্ভাব্য অ্যাকসেস পয়েন্টগুলি এবং দুর্বল টার্গেটগুলি নিরাপদ করার দিকে নজর দিতে হবে। রোবট অপারেটরের আইটি টিমকে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে এবং বিভিন্ন ঝুঁকি সক্রিয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। একই সঙ্গে নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রতিনিয়ত হালনাগাদ করে রাখতে হবে।
ব্যবহৃত ডিভাইস অকার্যকর হওয়ার পরও অনেক সময় নিরাপত্তার ঝুঁকি থেকেই যায়। তাই যাতে কোনো ডিভাইস সম্ভাব্য অপরাধীর হাতে না পড়ে, সেজন্য টেম্পার-প্রুফিং ব্যবস্থা ব্যবহার করে বা সংবেদনশীল সফটওয়্যার মুছে ফেলার মাধ্যমে ডিভাইসগুলি ক্ষয় করে ফেলা উচিত, যাতে রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং করা আর সম্ভব না হয়।
রোবোটিকস এবং আইওটি কমিউনিটিগুলি ভিন্ন হলেও পরস্পর সম্পর্কিত লক্ষ্য-উদ্দেশ্য দিয়ে চালিত হচ্ছে। আইওটি মূলত বিস্তৃত আকারে সেন্সিং, পর্যবেক্ষণ এবং ট্র্যাকিংয়ে ফোকাস করে। অন্যদিকে, রোবোটিকস ফোকাস করে কমিউনিটি উৎপাদন তৎপরতা, ইন্টার্যাকশন এবং স্বয়ংক্রিয় আচরণের ওপর। দুটি ক্ষেত্রকে একীভূত করতে পারলে আরো ভালো ভাবে রোবোটিক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিশ্লেষণ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্যে রোবটের কাছ থেকে পাওয়া অনেক ডেটা ব্যবহার করা সম্ভব। এভাবেই, ভবিষ্যতের রোবোটিকস মানুষ এবং মেশিনের মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার দরজা খুলে দিবে।