ভয়েস সার্চ টেকনোলজি কি?
প্রযুক্তির বিশ্বে ক্রমশ মানুষও হয়ে উঠছে প্রযুক্তি নির্ভর। প্রযুক্তির আশীর্বাদ জীবনকে কত সহজ করে দিয়েছে তা আমাদের সবারই জানা। ধীরে ধীরে সহজ থেকে আরো সহজ হয়ে উঠেছে যেন সবকিছু। বর্তমানে স্মার্ট ফোন ব্যবহার করেনা এমন মানুষ পাওয়া যাবে না। আর আজকাল মানুষের অজানা কোন কিছু জানতে অথবা খুঁজে পেতে অন্য মানুষের দারস্থ হওয়ার কোন প্রয়োজন পড়ে না। তারা টুক করে তাদের স্মার্ট ফোনটা হাতে তুলে নেয়, আর খুব সহজেই অনলাইনে সার্চ করে। অনলাইনে সার্চ করে খুঁজে পাওয়ার জন্য অবশ্যই সেই বিষয়টি আমাদের টাইপ করার প্রয়োজন হয়। কিন্তু প্রযুক্তি সেটাকেও সহজ করে দিয়েছে। তেমনই বিস্ময়কর প্রযুক্তির এক সৃষ্টি হল ভয়েস সার্চ টেকনোলজি।
ভয়েস সার্চ টেকনোলজির ইতিহাস অনেক পুরাতন হলেও এর মূল স্রোতের সন্ধান মিলেছিল ২০১১ সালে আইফোন 4-এ অ্যাপলের সিরি চালু হওয়ার সাথে সাথে। তারপর ২০১৫ সালে, অ্যামাজন ইকো প্রথম মূলধারার স্মার্ট হোম ডিভাইসে পরিণত হয়েছিল। সেখান থেকে বেশ কয়েকটি প্রতিযোগী ভয়েস সার্চ বাজারে প্রবেশ করেছে।
বর্তমানে প্রযুক্তি নির্ভর মানুষের সময়ের মূল্য অনেক। তাই মানুষ আর হাতে লিখে সময় নষ্ট করতে চায় না। ভয়েস বা অডিও বাজারের এই বিকাশ ব্র্যান্ডের ব্যবহারকারীদের সাথে সংযোগ স্থাপন করেছে। বিশেষত ই-কমার্সের জন্য, যেমন ৪০% স্মার্ট স্পিকার ব্যবহারকারীরা তাদের ডিভাইসে মাসে অন্তত একবার কেনাকাটা করেন।
তবে ব্যবসায়ে কেন ভয়েস সার্চ টেকনোলজির বিষয়ে যত্ন নেওয়া উচিত তা নিয়ে কথা বলার আগে, এই প্রযুক্তিটি কীভাবে কাজ করে তাও আমাদের সকলের বোধগম্য হওয়া জরুরি। চলুন সংক্ষেপে তা জেনে নেওয়া যাক।
ভয়েস সার্চ টেকনোলজি কি এবং এর কাজ!
ভয়েস সার্চ হল স্মার্টফোন বা স্মার্ট স্পিকারের মত ডিভাইসগুলিতে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার এমন একটি প্রযুক্তি যেটায় মুখে কথা বলে আদেশ দেওয়ার সাথে সাথে সেই অনুযায়ী প্রশ্ন শুনে উত্তর দেয়। অর্থাৎ কোন কিছুই আর সময় নষ্ট করে লেখার প্রয়োজন নেই। ডিভাইসটি ভয়েস সার্চ এর মাধ্যমে অপ্টিমাইজড করে নিলেই আপনি দূরে বসে মুখে অর্ডার করলে আপনার কথা মত এটি কাজ করবে। কত মজার বিষয় তাই না। এই টেকনোলজির গভীরে না গিয়ে, ডিজিটাল এসিস্ট্যান্ট দ্বারা কিভাবে পরিচালিত হয় চলুন জেনে নেওয়া যাক।
- মানুষের কথা কে টেক্সট-এ প্রসেসিং করে।
- প্রশ্ন গুলো সনাক্ত করে সেই কমান্ড অনুযায়ী বিশ্লেষণ করে।
- প্রাসঙ্গিক তথ্য সন্ধান এর জন্য সার্চ ইঞ্জিনগুলি মতো বাহ্যিক ডাটা সোর্স গুলির সাথে সংযোগ স্থাপন করে।
- ব্যবহারকারীর উদ্দেশ্য পূরণের জন্য সেই তথ্যটি বোধগম্য ফর্ম্যাটে অনুবাদ করে।
ভয়েস সার্চ কিভাবে কাজ করে তা এভাবে বলার থেকেও জটিল প্রক্রিয়া। তবে অনেক গুলো মেশিন লার্নিং পদ্ধতির মাধ্যমে কাজ করে যাতে খুব সহজেই এটা মানুষ সাধারণ ভাষা বুঝতে পারে। এই প্রোগ্রামিংটি খুব ধীরে ধীরে অবিশ্বাস্য ভাবে পরিশীলিত হচ্ছে এবং উন্নতি সাধন করছে।
বর্তমানে ভয়েস সার্চ টেকনোলজির বাজারে প্রধান কারা?
- মার্কিন স্মার্ট স্পিকার মার্কেটের প্রধান হল- আমাজন (২৩.২%)
- গুগল (৩১%)
- অন্যান্য (৫.৮%)
তবে এটি লক্ষণীয় যে সিংহভাগ ভয়েস সার্চগুলি আসলে স্মার্ট স্পিকার নয়, মোবাইল ডিভাইসে ঘটে থাকে। স্মার্টফোন সহায়কদের জন্য, দুটি প্রধান প্রতিযোগী হলেন অ্যাপলের (সিরি) এবং গুগল।
এখন প্রশ্ন হল, ভয়েস এসিস্ট্যান্টরা কোথায় তাদের তথ্য পায়?
ভয়েস সার্চ এবং স্মার্ট স্পিকাররা সার্চ করা তথ্য গুলো একাধিক ডাটা সোর্স যেমন সার্স ইঞ্জিন, উইকিপিডিয়া এবং অন্যান্য বড় ওয়েবসাইট থেকে নিয়ে থাকে। ব্যবসায়ের জন্য ভয়েস সার্চ তাদের সমগ্র কন্টেন্ট গুলো অনূকূলে আনতে অপটিমাইজড করে। এটা বোঝা জরুরি যে বিভিন্ন ভয়েস এসিস্ট্যান্ট এর তথ্যের সোর্স কোথায়। এবার আমরা এই এসিস্ট্যান্ট গুলোর ব্যাপারে বিশদভাবে জানব।
আইএমডিবি, অ্যাকুওয়েদার, ইয়েল্প, উত্তর ডটকম, এবং উইকিপিডিয়া সহ বিভিন্ন তৃতীয় পক্ষের সোর্স থেকে আলেক্সা তার তথ্য সংগ্রহ করে। যদি কোনও ব্যবহারকারী কোনও নির্দিষ্ট আলেক্সা দক্ষতার জন্য আবেদন করেন, সেই দক্ষতার সাথে যুক্ত ডেটাবেস থেকে সেই ডেটাটি বের করা হয়।
আপনি আশা করতে পারেন গুগুল তাদের নিজস্ব ট্রিলিয়ন তথ্যের সোর্স থেকেই তথ্য গুলো দিয়ে থাকে। যদি গুগল অনুসন্ধানে আপনার বিষয়বস্তুটি আবিষ্কারযোগ্য হয় তবে ভালো।
আপনি যদি উদ্বিগ্ন হন যে আপনার সামগ্রী ক্রয় যোগ্য নয়, তবে গুগল অনুসন্ধান কনসোলের মতো সরঞ্জামগুলি সম্ভাব্য সমস্যা গুলো নির্ণয়ে সহায়তা করতে পারে। আমাদের পরীক্ষাগুলো দিয়েছে যে বেশিরভাগ সময়, গুগল সহকারী দ্বারা প্রত্যাবর্তিত উত্তরগুলি কোন ব্যবহারকারী তাদের প্রশ্ন টাইপ করে কিনা তা দেখতে পাওয়া বৈশিষ্ট্যযুক্ত স্নিপেট সাথে মেলে। তবে এটি সবসময় হয় না।
সিরিও গুগল সার্চ থেকে এর ডেটা নেয়। এটি এক সময় বিং থেকে তার সোর্স গুলো তৈরি করত, তবে ২০১৩ সালের শেষের দিকে গুগলে স্যুইচ করে।
কিভাবে আপনি আপনার ওয়েবসাইট ভয়েস সার্চ এর জন্য অপটিমাইজ করবেন?
আমাদের অভ্যন্তরীণ গবেষণায় দেখা গেছে যে ভয়েস সার্চের জন্য কন্টেন্টটি সাফল্যের সাথে অপ্টিমাইজ করতে সাধারণত তিনটি জিনিস দরকার-
১. আপনার বিষয়বস্তু সূচিত এবং সমস্ত প্রাসঙ্গিক প্রধান তথ্য সোর্সে উপস্থিত রয়েছে কিনা তা প্রথমে নিশ্চিত করুন। (গুগল সার্চ, গুগল ম্যাপ, অ্যাপল ম্যাপ, উইকিপিডিয়া ইত্যাদি)
২. আপনার ওয়েবপৃষ্ঠাগুলি অথবা সার্চ ইঞ্জিন গুলোতে উচ্চতর তালিকা নির্ধারণের জন্য Traditional SEO সেরা অনুশীলনগুলি ব্যবহার করুন। আপনার বিষয়বস্তু ভয়েস অনুসন্ধানের জন্য নিখুঁতভাবে কাঠামোযুক্ত করা যেতে পারে, তবে এটি যদি একটি পৃষ্ঠায় না থাকে তবে উত্তর হিসাবে এটি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
৩. আপনার বিষয়বস্তু সংক্ষিপ্তভাবে রাখতে সব সময় চেষ্টা করুন এবং সহজভাবে প্রশ্নের উত্তর দিন। এই ডেটাতে ৬-৭ -গ্রেডের পাঠের ব্যাপারে ৩০ থেকে ৪০ শব্দ উত্তরের জন্য ভালো এটিই লক্ষ্য করা গেছে।
উপরোক্ত ছাড়া, দুটি ধরণের কাঠামোগত ডেটা রয়েছে যা 2019 সালে চালু হয়েছিল যা গুগল ডিভাইসে স্বয়ংক্রিয় ভাবে ভয়েস-অনুসন্ধান বান্ধব। How To এবং FAQ schema স্বয়ংক্রিয়ভাবে গুগল এসিস্ট্যান্ট দের জন্য একটি ক্রিয়া তৈরি করে। এই ক্রিয়াগুলি আলেক্সা দক্ষতার সমতুল্য।
মানুষ কিভাবে ভয়েস সার্চ এর সুবিধা ভোগ করতে পারছে!
চিন্তা করুন একজন অন্ধ মানুষ বিপদে পড়েছে কিন্তু আশে পাশে তাকে সাহায্য করার মত কেউ নেই। তখন সে চাইলেই ভয়েস সার্চ এর মাধ্যমে একটি প্রয়োজনীয় কল করে বিপদ থেকে মুক্তি পেতে পারবে।
আপনি খুব অসুস্থ আপনার চলার শক্তি নেই এবং আপনার ফোনটি বেশ দূরে রাখা। তখন আপনি চাইলেই মুখে কথা বলে মানুষকে জানাতে পারবেন।
একজন ছোট শিশু যে এখনো লিখতে শেখানি। তার বাবা মা দুজনেই বাহিরে গিয়েছে তখন সে কথা বলে কল করতে পারবে। অথবা কখনো বাসায় একা কোন বিপদে পড়েছে তখনও সে এই সেবার মাধ্যমে কথা বলেই সহজেই হেল্প নিতে পারবে।
তারপর বর্তমানে বহির্বিশ্বের অনেক দেশে স্মার্ট হোম চালু হয়েছে। স্মার্ট হোমে ভয়েস সার্চ কমান্ড মেনে, লাইট, ফ্যান, এসি, টিভি এছাড়া আরো অনেক কিছুই অন অফ করা সম্ভব। এমনি আপনি বাড়ির বাহিরে অবস্থান করেও ফোনের মাধ্যমে ঘরের যেকোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস অন অফ করতে পারবেন। তাহলে ভাবুন একবার ভয়েস সার্চ টেকনোলজি জীবনকে কতটা সহজ করে দিয়েছে।
ভয়েস সার্চ এবং বাংলাদেশ!
২০১৫ সাল থেকে বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন যে, পরের বছরটি হবে ভয়েস সার্চের বছর। কিন্তু আমরা অপেক্ষা করতে করতে ২০২১ সালে এসেও ভয়েস সন্ধানের আসল বছর বলার পক্ষে যথেষ্ট প্রস্তুত নই। তবে কোনও সন্দেহ নেই যে প্রযুক্তিটি তার প্রসারকে দিন দিন বাড়িয়ে তুলছে। যেমন, করোনা মহামারিতে গতবছর থেকে এই প্রযুক্তির ব্যবহার আরো দ্বিগুণ হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, প্রায় এক তৃতীয়াংশ জনগণ ভয়েস সার্চ ব্যবহার করছেন।
বহির্বিশ্বের মত বাংলাদেশে এই সেবার ব্যবহার এখন খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। তবে আশা করা যায় ডিজিটাল বাংলাদেশ খুব শীঘ্রই ভয়েস সার্চ টেকনোলজি প্ল্যাটফর্মে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।