কম্পিউটার ‘ইরা’ যখন শুরু হয়েছিল, তখন আইবিএমকে ধরা হতো সবচেয়ে স্ট্যান্ডার্ড মডেলের কম্পিউটার। কারণ হিসেবে ছিল আইবিএমের আর্কিটেকচার। যেখানে প্রতিটা কম্পোনেন্ট এর জন্য আলাদা আলাদা স্লট থাকতো। যা পুরো কম্পিউটারকে রান করতে সাহায্য করত।
তেমন একটি কম্পোনেন্ট এর নাম হচ্ছে গ্রাফিক্স কার্ড। যেটি কম্পিউটারের স্ক্রিনে ছবি প্রেরণে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেন। তাই আজকে আমাদের আর্টিকেলের বিষয়বস্তু নির্ধারণ করেছি ‘গ্রাফিক্স কার্ড (Graphics Card)।’ গ্রাফিক্স কার্ড কি, কিভাবে কাজ করে, এই সব কিছু জানাবো এই লেখায়।
গ্রাফিক্স কার্ড সম্পর্কে আপনার যা জানা প্রয়োজন-
গ্রাফিক্স কার্ড কম্পিউটার মাদারবোর্ড-এর ‘স্মলার ভার্শন’। এটার একটি ‘প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড’ রয়েছে যেখানে প্রসেসর এবং অন্যান্য কম্পোনেন্ট গুলো বসানো যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বলা হয় গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট বা জিপিইউ। যদিও বাস্তবে ‘জিপিইউ’(অবুশ্যই প্রাইমারি কম্পোনেন্ট) হচ্ছে গ্রাফিক্স কার্ডের একটি উপাদান।
জিপিইউ’র দুইটি ভার্সন রয়েছে-
◾ Integrated GPU
◾ Discrete GPU
ইন্টিগ্রেটেড জিপিও গুলো মাদারবোর্ডের সাথে প্রাথমিক অবস্থায় সংযুক্ত করা থাকে। যা পরবর্তীতে রিপ্লেস করা সম্ভব নয়। এগুলো বিশেষত দামি ল্যাপটপ গুলো কিংবা বিশেষ কিছু ডেস্কটপের সিপিউতে দেয়া থাকে। যেমন Ryzen 5 3400G। এই ধরনের গ্রাফিক্স কার্ড গেমিং বা প্রফেশনাল গ্রাফিক্স ডিজাইনের জন্য খুব বেশি ভালো পারফর্মেন্স করেনা।
এ ধরনের গ্রাফিক্স কার্ডগুলো কম্পিউটারের মাদারবোর্ডের সাথে আলাদা করে সংযুক্ত করা যায়। ফলে যেকোন সময় যেকোন ভাবে এ ধরনের গ্রাফিক্স কার্ডগুলো রিপ্লেস করা বা নতুন করে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয়। কখনও যদি আরো ভালো পারফরম্যান্স-এর গ্রাফিক্স কার্ড-এর প্রয়োজন হয়, তখন নতুন করে সংযুক্ত করার অপশন থাকলে খুব একটা মন্দ হয় না।
বর্তমান বাজারে যেসব গ্রাফিক্স কার্ড পাওয়া যায়, সেগুলো প্রচন্ড শক্তিশালী। মূলত হাই-পারফর্মিংন-গেমিং এবং অ্যাডভান্স গ্রাফিক্সের জন্য ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের হাইএন্ড গ্রাফিক্স কার্ডগুলো যেন এক একটা কম্পিউটার।
জিপিইউ এবং সিপিইউ এর মধ্যে পার্থক্য কি?
সিপিইউ বা সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট- কাজ করে থাকে কোর (Core) ভিত্তিক। যেখানে দুটি চারটি ছয়টি এভাবে করে কোর থাকে। যা সিরিয়ালি একটা সমস্যাকে সমাধান করতে পারে। অপরদিকে জিপিইউ হচ্ছে গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট- যেখানে 100 অধিক কোর থাকে এবং সবগুলো প্যারালাল নিয়মে কাজ করে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে জিপিইউ থাকার ফলে যেকোনো কাজ খুব তাৎক্ষণিকভাবে করে ফেলা সম্ভব। ধরুন আপনি সিঙ্গেল কোন একটা সমস্যা সমাধান করতে চাচ্ছেন সেখানে সিপিইউ কিন্তু পুরো কাজের ভার নিতে পারে না। কিছু কাজের জন্য জিপিইউ-এর ইনটেন্সিভ সাপোর্ট এর প্রয়োজন পড়ে। ডাটাগুলো যদি জিপিইউ-তে আপলোড থাকে তাহলে আপনার কাজটি খুব তাড়াতাড়ি সম্পন্ন হয়ে যায়। অর্থাৎ জিপিইউ আপনার কাজের এক্সট্রা বুস্ট করে থাকে।
বাজারে প্রধানত দুই ধরনের জিপিইউ পাওয়া যায়। এনভিডিয়া (NVIDIA) এবং এএমডি (AMD)।
কেন আমি জিপিইউ ব্যবহার করব?
জিপিইউ এর ব্যবহার দু’ধরনের হতে পারে ক্লাউড এবং নন-ক্লাউড।
In Case/নন-ক্লাউড-এর ক্ষেত্রে যা সুবিধা পাবেন-
◾ VDI- Virtual Desktop Insfrastructure
◾ AI- Artificial Intelligence
◾ HPC- High Performance Computing
VDI- Virtual Desktop Insfrastructure-
জিপিইউ তৈরির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে হাই ইনটেনসিভ গ্রাফিক্স এপ্লিকেশনগুলোকে সাপোর্ট দেওয়া। হাই ইনটেনসিভ যে কোন গ্রাফিক্স এর কাজের জন্য জিপিইউ ব্যবহৃত হয়। ধরুন আপনার এই মুহূর্তে কোন থ্রিডি ক্যাট ভিউ করা প্রয়োজন এডিট করা প্রয়োজন। তখন কিন্তু ইনটেনসিভ গ্রাফিক্স সাপোর্টের প্রয়োজন হয় যা গ্রাফিক্স কার্ড প্রবাহিত করে থাকে।
জিপিইউ কে অনেকে বলে থাকে ‘গেমিং প্রসেসিং ইউনিট’। কারণ দেখা যায় গেম প্রসেসর জন্য যে পরিমাণ ইনটেনসিভ সাপোর্ট প্রয়োজন হয় তা মূলত গ্রাফিক্স কার্ড সাপ্লাই দিতে পারে। জিপিইউ এর ব্যবহার বহুমাত্রায় রয়েছে। তবে গেমিং ডিসপ্লেতে নিখুঁতভাবে ইমেজ প্রসেসর এর জন্য জিপিইউ-এর বিকল্প নেই।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর কাজগুলো হয়ে থাকে মেশিন লার্নিং এবং ডিপ লার্নিং এর মাধ্যমে। ডিপ-লার্নিং এর জন্য হাই ইনটেনসিভ গ্রাফিক্স সাপোর্টের প্রয়োজন হয় যা গ্রাফিক্স কার্ড জিপিইউ সাপ্লাই দিতে সক্ষম। এ পর্যায়ে মেশিন কে মানুষের মত করে চিন্তা করতে শেখানো হয়। যেখানে প্রচুর পরিমানের ইনটেনসিভ গ্রাফিক্স সাপোর্টের প্রয়োজন পড়ে।
HPC- High Performance Computing-
হাই-পারফর্মেন্স-এর জন্য অবশ্যই গ্রাফিক্স কার্ড এর প্রয়োজন হয়। কারণ সিপিইউ একই সাথে সবকিছু লোড নিতে পারে না। যদি জিপিইউ কিছু অংশ প্রসেস করে তাহলে খুব দ্রুত গতিতে কাজগুলো করা সম্ভব হয়। সিপিইউ মূলত সিরিয়াল সিরিয়াল কাজগুলো করে থাকে, কিন্তু জিপিইউ যেকোনো কাজ একসঙ্গে করে ফেলতে পারে। ফলে কাজগুলো দ্রুত করে ফেলা সম্ভব হয়।
ক্লাউড-এর ক্ষেত্রে যা সুবিধা পাবেন-
◾ High Performance
◾ BM vs VIRT
◾ Pay-use
High Performance-
যেহেতু জিপিইউ এর কাজ সিপিইউ কে সহযোগিতা করা সে ক্ষেত্রে জিপিইউ ব্যবহারে যেকোনো কাজ দ্রুতগতিতে করা সম্ভব হয়। বর্তমান সময়ে প্রায় সব ধরনের সার্ভিসের অনলাইনের মাধ্যমে করা হয়। এখন আপনার যদি ক্লাউড জিপিইউ থেকে থাকে তাহলে অনলাইনে কাজগুলো আপনি আরও দ্রুতগতিতে করে ফেলতে পারবেন।
ক্লাউডের ক্ষেত্রে আরও একটি বড় সুবিধা হচ্ছে যেকোনো ধরনের নতুন নতুন প্রযুক্তির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। অর্থাৎ যদি আরও তীব্র কোন পাওয়ার কনজিউমিং কাজের উদ্ভব হয় তাহলে সেটি কিন্তু আপনার পুরোনো জিপিউ দ্বারা করা সম্ভব হয় না। কিন্তু আপনি যদি ক্লাউড ব্যবহার করেন, তাহলে যারা ক্লাউড সার্ভিস দিয়ে থাকে তারাই আপনাকে সবচেয়ে আপডেটেড জিপিইউ ব্যবহার করতে দিবে এবং সমসাময়িক যেকোন ইনটেনসিভ গ্রাফিক্স সাপোর্টের সমাধানে সাহায্য করবে।
BM vs VIRT-
বিএম বা Bare Model ইনফ্রাস্ট্রাকচার-হচ্ছে আপনি যেখান থেকে ক্লাউড সার্ভিস নিয়ে থাকবেন, সেখানে তাদের হাতে কাস্টমাইজেশন অপশন থাকবে। সার্ভিস প্রোভাইডাররা যেকোন সময় আপনার সার্ভারে এক্সেস করতে পারবে।
Virtual Server তাদের জন্য ভালো যাদের অনেক বেশি কাজের চাপ রয়েছে এবং পূর্ণাঙ্গ কন্ট্রোল এর প্রয়োজন। এখানে আরেকটি বড় ধরনের সুবিধে হচ্ছে, প্রয়োজন মত যেকোন সাইজের ক্লাউড জিপিউ কেনা সম্ভব।
Pay-use-
ক্লাউডের ক্ষেত্রে এটি খুবই সুন্দর একটা নিয়ম যেখানে আপনাকে ব্যবহার অনুযায়ী পেমেন্ট করতে হয়। যদি আপনি ইন-কেইস গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে আপনাকে পুরো গ্রফিকস প্রসেসিং ইউনিট এর পেমেন্ট আগে করে ওই যন্ত্রাংশটি কিনে নিয়ে আসতে হয়। কিন্তু ক্লাউড বা ভার্চুয়াল জিপিউ-এর ক্ষেত্রে এই জিনিসটি হয়না। আপনি যতোটুকু জিপিইউ ব্যবহার করবেন ততটুকুই আপনাকে পে করতে হবে। যদি না করেন তাহলে পে করার কোন প্রয়োজন নেই।
হাই ইনটেনসিভ গ্রাফিক্স কার্ড গুলোর মাধ্যমে অ্যাডভান্স লেভেলের গ্রাফিক্স গেইমের মধ্যে Real-time রেন্ডার করা সম্ভব হয়। এছাড়াও সিপিইউ এর পারফর্মেন্স কয়েকগুণ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এই গ্রাফিক্স কার্ড। বর্তমান সময়ে ফটো ইডিটিং, ভিডিও ইডিটিং বা গ্রাফিক্স প্রোডাকশন অ্যাপ্লিকেশনগুলো সম্পূর্ণরূপে গ্রাফিক্স কার্ডের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে শুধু সিপিইউ দিয়ে এই ধরনের অ্যাপ্লিকেশনগুলো রান করা সম্ভব হয় না