হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ বা হার্ড ড্রাইভ হলো তথ্য বা ডেটা সংরক্ষণ করার জন্যে ব্যবহৃত একধরনের ডেটা স্টোরেজ ডিভাইস। বর্তমানে সার্ভার এবং পার্সোনাল কম্পিউটার সহ বিভিন্ন ধরনের ডিভাইসে তথ্য সংরক্ষণের জন্যে হার্ড ড্রাইভ ব্যবহৃত হচ্ছে।
যেভাবে হার্ড ড্রাইভে তথ্য সংরক্ষণ করা থাকে-
1 আর 0 হলো দুটি বাইনারি কোড। বাইনারি কোড ব্যবহার করেই মূলত যেকোনো হার্ড ড্রাইভে ডেটা সংরক্ষণ করা হয়। হার্ড ড্রাইভে থাকা তথ্য ডিস্কের ম্যাগনেটিক লেয়ারে ছড়িয়ে থাকে। এবং ‘রিড হেড’ নামের একটি যন্ত্রাংশের মাধ্যমে ড্রাইভ বা ডিস্ক থেকে আগের তথ্য সংগ্রহ বা নতুন তথ্য মুদ্রিত হয়। মুহূর্তের মধ্যেই ড্রাইভ ব্যবহারের জন্যে এর পৃষ্ঠতলের ওপর ‘রিড হেড’ যন্ত্রাংশটি ভেসে ওঠে। ডিস্কের অতি দ্রুত গতিতে ঘূর্ণনের ফলে যে বাতাস তৈরি হয়, তার ফলেই ‘রিড হেড’ ভেসে থাকতে পারে।
হার্ড ড্রাইভ যখন নতুন তথ্য মুদ্রণের জন্যে রাইটিং মোডে থাকে, তখন রিড হেডের মধ্য দিয়ে বৈদ্যুতিক প্রবাহ চলাচল করে। এর মাধ্যমে ডিস্কের ইলেকট্রিক ফিল্ডে 0 বা 1 মুদ্রিত করে ডিস্কের তথ্যে পরিবর্তন আনা হয়।
আবার ডিস্কে থাকা তথ্য সংগ্রহ করার জন্যে রিড মোডে প্রক্রিয়াটি একেবারেই উল্টে যায়। তখন ডিস্কের ম্যাগনেটিক ফিল্ড থেকে এক ধরনের বৈদ্যুতিক প্রবাহের মাধ্যমে ‘রিড হেড’ যন্ত্রাংশে সিগনাল পাঠানো হয়। এরপর সেই সিগনাল যাতে কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারে, সেজন্য সেটাকে ডিজিটাল সিগনালে রূপান্তরিত করা হয়।
দুই ধরনের হার্ড ড্রাইভ : এইচডিডি (HDD) এবং এসএসডি (SSD)-
হার্ড ডিস্ক বা হার্ড ড্রাইভ বলতে বেশির ভাগ মানুষই ‘এইচডিডি’ বা হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ বুঝে থাকেন। প্রায় সব ডেস্কটপ কম্পিউটারেই প্রাথমিকভাবে এ ধরনের হার্ড ড্রাইভ যুক্ত করা থাকে। প্রযুক্তির পরিভাষায় এ ধরনের হার্ড ড্রাইভ হলো একধরনের ‘ম্যাগনেটিক ম্যাস স্টোরেজ’ ডিভাইস। কম্পিউটারের পাশাপাশি এ ধরনের ডিভাইস পোর্টেবল মিউজিক প্লেয়ার, ভিডিও ক্যামেরা, ডিভিডি প্লেয়ার এবং ভিডিও গেম কনসোলেও ব্যবহৃত হয়।
অন্যদিকে সলিড স্টেট ড্রাইভ (এসএসডি) প্রযুক্তি বা ডিভাইসও হার্ড ড্রাইভ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এতে সার্কিট বোর্ডের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত কয়েকটা চিপের মধ্যে ডেটা বা তথ্য সংরক্ষিত থাকে। মিউজিক প্লেয়ার, মোবাইল ফোন বা ট্যাবের মতো আধুনিক বেশ কিছু স্মার্ট ডিভাইসে এই ডিভাইসটি ব্যবহৃত হয়।
বর্তমান স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে হার্ড ড্রাইভ যেমন হয়-
প্রযুক্তি- ম্যাগনেটিক হার্ড ড্রাইভ প্রযুক্তি এখন সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। পেশাদারদের অনেকেই এখনো ম্যাগনেটিক টেপ এবং সিডি বা ডিভিডির মতো অপটিক্যাল স্টোরেজ ডিভাইসের মাধ্যমে ডেটা স্টোরেজ এবং ব্যাকআপ করে থাকেন।
আকার- তথ্য সংরক্ষণ করার ক্ষমতার পাশাপাশি হার্ড ড্রাইভের আকারেও গত ৫০ বছরে অনেক পরিবর্তন এসেছে। বিশ্বের প্রথম কম্পিউটার স্টোরেজ সিস্টেম RAMAC-এর আকার ছিল দুটি রেফ্রিজারেটরের সমান। অথচ বর্তমানে প্রচলিত বেশিরভাগ হার্ড ড্রাইভের আকার হয় মাত্র ৩.৫ ইঞ্চি বা ৯ সেন্টিমিটারের মতো। আবার, ল্যাপটপে ব্যবহৃত ড্রাইভের স্ট্যান্ডার্ড সাইজ হয় আরও ছোট, মাত্র ২.৫ ইঞ্চি। এমপি থ্রি প্লেয়ারের মতো বিভিন্ন পোর্টেবল ডিভাইসের বুম যন্ত্রের ফলেও সেসব ডিভাইসে অনেক ছোট আকারের ড্রাইভ ব্যবহৃত হয়। এসব ডিভাইসে থাকা মাইক্রোড্রাইভের আকার হয় মাত্র ১ ইঞ্চি।
ইন্টারফেস- সব ধরনের হার্ড ড্রাইভেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ইন্টারফেস। কারণ এই অংশটিই মাদারবোর্ডকে হার্ড ড্রাইভের সঙ্গে যুক্ত করে। অন্যান্য আরো অনেক বিষয়ের মতো ড্রাইভের ইন্টারফেসের ধরন অনুসারে এর ডেটা ট্রান্সফারের গতির মাত্রা বোঝা যায়।
হার্ড ড্রাইভের আকার এবং ডেটার ধারণ ক্ষমতার মতো এর ইন্টারফেসও প্রতিনিয়ত বিবর্তিত হচ্ছে। বিষয়টি সহজে বোঝার জন্যে প্রচলিত কিছু ইন্টারফেস নিয়ে আলোচনা করা হলো:
১. এটিএ/আইডিই (ATA/IDE): পার্সোনাল কম্পিউটারে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বহুল ব্যবহৃত ইন্টারফেস ছিল এটিএ। তবে এখন এর জায়গা দখল করে নিয়েছে এসএটিএ বা সাটা (SATA) ইন্টারফেস।
২. এসএটিএ (Serial ATA): ২০০৫ সালের পর থেকে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ইন্টারফেস হলো এটি। ATA-র তুলনায় এর ডেটা ট্রান্সফারের গতি অনেক বেশি।
৩. এসসিএসআই (SCSI) বা স্মল কম্পিউটার সিস্টেম ইন্টারফেস: এ ধরনের ইন্টারফেস একটি অ্যাডাপ্টর বা SCSI কন্ট্রোলারের মাধ্যমে মাদারবোর্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকে।
ম্যাগনেটিক হার্ড ড্রাইভে যা কিছু থাকে-
প্রচলিত ম্যাগনেটিক হার্ড ড্রাইভে প্রধানত দুই ধরনের অংশ থাকে।
১. মেকানিক্যাল অংশ- হার্ড ড্রাইভের দুই পাশেই থাকে গোলাকার ট্রে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব ট্রে আলুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি করা হয়, যা ম্যাগনেটিক লেয়ার দিয়ে ঢাকা থাকে। এই লেয়ারেই মূলত ডেটা সংরক্ষিত থাকে। একটি ঘূর্ণমান অক্ষের মধ্যে হার্ড ড্রাইভ স্থাপন করা থাকে, যা একটি মোটরের সাহায্যে ঘোরে। ঘূর্ণনের গতি হার্ড ড্রাইভের ব্র্যান্ড এবং মডেল অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। তবে বেশিরভাগ হার্ড ড্রাইভেই প্রতি মিনিটে ৫৪০০ থেকে ১৫ হাজার বার ঘূর্ণন সম্পন্ন করে।
‘রিড হেড’ বা ‘রাইট হেড’ হলো হার্ড ড্রাইভের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি অ্যাকচুয়েটর নামের আরেকটি যন্ত্রাংশের মাধ্যমে চলে, যেটি পৃথক আরেকটি মোটরের সাথে যুক্ত থাকে। এই যন্ত্রাংশটি ডিস্কের যেকোনো অংশ থেকেই তথ্য ট্রান্সফার করতে পারে। রিড হেড-এর সঙ্গে একধরনের আর্ম বা বাহু সংযুক্ত থাকে, যেটি এই যন্ত্রাংশটির অবস্থান ঠিক রাখতে সাহায্য করে। তবে রিড হেড কখনোই হার্ড ড্রাইভের ম্যাগনেটিক পৃষ্ঠের সংস্পর্শে আসে না। ম্যাগনেটিক পৃষ্ঠে সামান্য সংঘর্ষ বা একটি ধূলিকণাই একটি ড্রাইভকে নষ্ট করতে যথেষ্ট।
২. ইলেকট্রনিক অংশ- যেকোনো হার্ড ড্রাইভে মেকানিক্যাল অংশ সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান থাকলেও এতে থাকা ইলেকট্রনিক অংশের গুরুত্বও অনেক বেশি। কারণ এর মাধ্যমে ডেটা ট্রান্সমিশনের পাশাপাশি এই অংশটি মাদারবোর্ড ও হার্ড ড্রাইভের মধ্যে চলমান বিভিন্ন প্রসেস এবং কমান্ড নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতিটি হার্ড ড্রাইভের প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ডে একটি মাইক্রোপ্রসেসর এবং অ্যাসোসিয়েটিভ মেমরি থাকে। এছাড়াও ড্রাইভে থাকা একটি সিগনাল প্রসেসর ইলেকট্রিক সিগনালকে ডিজিটাল সিগনালে রূপান্তরিত করে থাকে।