আপনার টাকাপয়সা কিংবা ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করার জন্য স্ক্যামার বা জালিয়াতরা ক্রমাগতভাবে উন্নত নানান কৌশল উদ্ভাবন করছে। তাই জালিয়াতির হাত থেকে বাঁচতে সতর্ক থাকার কোনো বিকল্প নেই। আর ইন্টারনেট দুনিয়ায় সতর্ক এবং সুরক্ষিত থাকতে এই পরামর্শগুলি মেনে চলতে পারেন।
যে কেউই জালিয়াতির শিকার হতে পারেন-
স্ক্যামাররা যেকোনো পেশা, বয়স ও আয়ের মানুষদের টার্গেট করতে পারে। স্ক্যামার বা জালিয়াতরা নির্দিষ্ট ভাবে টার্গেট করে, এমন বিশেষ কোনো শ্রেণী বা গোষ্ঠী নেই। যে কেউই যেকোনো সময় স্ক্যাম বা জোচ্চুরির শিকার হতে পারে।
যারা প্রতারণার শিকার হন, তারা বিষয়টা আসল মনে করে ফাঁদে পা দেয়ার কারণেই মূলত স্ক্যামগুলি সফল হয়। আবার স্ক্যামাররা এমন সময় জোচ্চুরি করে, যখন ইউজাররা খুব একটা সাবধান থাকে না। নানান কৌশল ব্যবহারের মাধ্যমে স্ক্যামাররা দিন দিন আরো স্মার্ট হয়ে উঠছে। তারা নতুন কোনো প্রযুক্তি, পণ্য, সেবা কিংবা বড় কোনো ইভেন্ট নিয়ে বিশ্বাসযোগ্য গল্প বানিয়ে এমন ভাবে ইউজারদের মন জয় করে নেয় যে, তারা সহজেই স্ক্যামারদেরকে টাকা বা ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে দেয়।
নিজেকে রক্ষা করবেন যেভাবে-
১. সব সময় সতর্ক থাকুন এই ভেবে যে, স্ক্যামাররা যেকোনো সময় আপনাকে প্রতারিত করতে পারে। যখনই কোনো ব্যক্তি মানুষ বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ফোনে বা ইমেইলে অযাচিতভাবে কোনো যোগাযোগের চেষ্টা করা হবে, তখনই সাবধান হয়ে যাবেন। সবসময়ই এই ধরনের যোগাযোগকে স্ক্যাম বলে সন্দেহ করুন। মনে রাখবেন, যদি খুব বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়, তাহলে তা স্ক্যাম হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
২. আপনি কার সঙ্গে ডিল করছেন বা চুক্তিতে যাচ্ছেন, তা ভালোভাবে জেনে নিন। সেই ব্যক্তি যদি শুধু অনলাইনেই আপনার পরিচিত হয় অথবা তার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে যদি আপনি নিশ্চিত না হন, তাহলে কিছুটা সময় নিয়ে গবেষণা করুন। ব্যক্তির ছবির ওপর গুগল ইমেজ সার্চ করুন অথবা যারা তার সঙ্গে এর আগে লেনদেন করে থাকতে পারে, ইন্টারনেটে তাদের বিষয়ে সার্চ করুন। যদি আপনার কোনো বন্ধুর কাছ থেকে অস্বাভাবিক কোনো মেসেজ বা ইমেইল আসে, তাহলে সত্যিই তিনি নিজে ওই ম্যাসেজ বা ইমেইল পাঠিয়েছেন কিনা, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য সেই বন্ধুর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করুন।
৩. ইমেইলে সন্দেহজনক টেক্সট বা পপআপ উইন্ডো খুলবেন না এবং লিঙ্ক বা অ্যাটাচমেন্টে ক্লিক করবেন না। ডিলিট করে দিবেন। সন্দেহ হলে যোগাযোগকারীর পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গায় সার্চ করুন। এক্ষেত্রে ফোনবুক বা অনলাইনে তাদের পরিচয় সম্পর্কে সার্চ করতে পারেন। আবার সার্চের সময় আপনাকে পাঠানো মেসেজে যোগাযোগের যে বিস্তারিত তথ্য দেয়া হবে, সেটা ব্যবহার করবেন না।
৪. ফোন করে কেউ যদি আপনার কম্পিউটারে অ্যাকসেস চায়, তাতে রাজি হবেন না। এমনকি যদি তারা নিজেদেরকে বিখ্যাত কোনো প্রতিষ্ঠানের লোক বলেও পরিচয় দেয়, তবুও না। স্ক্যামাররা কোনো সমস্যা সমাধান বা বিনামূল্যে কোনো আপগ্রেড ইন্সটল করার কথা বলে কম্পিউটার অন করতে বলবে। এরপরে তারা কম্পিউটারে ভাইরাস ইন্সটল করে পাসওয়ার্ড এবং ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে থাকে।
৫. আপনার ব্যক্তিগত তথ্যাবলী সুরক্ষিত রাখুন। বিল বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাগজ ফেলে দেয়ার আগে ছিঁড়ে ফেলুন। তাছাড়া পাসওয়ার্ড এবং পিন নাম্বার নিরাপদ স্থানে রাখুন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনার ব্যক্তিগত তথ্যাবলী কতটা শেয়ার করছেন, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। স্ক্যামাররা আপনার তথ্য এবং ছবি ব্যবহার করে ভুয়া আইডি খুলতে পারে। অথবা আপনাকে টার্গেট করে স্ক্যাম করতে পারে।
৬. আপনার মোবাইল ডিভাইস এবং কম্পিউটার সুরক্ষিত রাখুন। সব সময় পাসওয়ার্ড প্রোটেকশন ব্যবহার করুন। অন্যদেরকে আপনার কম্পিউটারে প্রবেশাধিকার দিবেন না। সিকিউরিটি সফটওয়্যার আপডেট করে রাখুন এবং কনটেন্টের ব্যাকআপ রাখুন। আপনার ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক পাসওয়ার্ড দিয়ে সুরক্ষিত রাখুন। পাবলিক কম্পিউটার বা ওয়াই-ফাই হটস্পট ব্যবহার করে অনলাইন ব্যাংকিং করবেন না। এবং কারো সঙ্গেই ব্যক্তিগত তথ্য সরবরাহ করবেন না।
৭. পাসওয়ার্ড নির্ধারণ করার সময় সতর্ক থাকুন। এমন পাসওয়ার্ড নির্ধারণ করুন, যা অন্য কারো পক্ষে অনুমান করা কঠিন হবে। এবং কিছুদিন পর পর পাসওয়ার্ড বদলে ফেলুন। ছোট এবং বড় হাতের অক্ষর, নাম্বার এবং চিহ্ন থাকলে পাসওয়ার্ড বেশি শক্তিশালী হয়। সব অ্যাকাউন্ট বা প্রোফাইলে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন না। আর কারো সঙ্গেই আপনার কোনো পাসওয়ার্ড শেয়ার করবেন না।
৮. সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার প্রাইভেসি এবং সিকিউরিটি সেটিংস রিভিউ করুন। আপনি যদি ফেসবুকের মতো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে আপনি কাদের সাথে যুক্ত হচ্ছেন, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। অনলাইনে সুরক্ষিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে কীভাবে আপনার প্রাইভেসি এবং সিকিউরিটি সেটিংস ব্যবহার করতে হবে, তা শিখুন। যদি সন্দেহজনক আচরণ দেখতে পান, স্প্যামে ক্লিক করে থাকেন বা অনলাইনে স্ক্যামের শিকার হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার অ্যাকাউন্টটি সুরক্ষিত করার জন্য পদক্ষেপ নিন এবং রিপোর্ট করুন।
৯. আপনার বিস্তারিত তথ্যাবলী বা অর্থের জন্য কোনো অনুরোধ এলে সাবধান থাকুন। আপনি চেনেন না বা বিশ্বাস করেন না, এমন কাউকে কখনোই অর্থ প্রেরণ বা ক্রেডিট কার্ড এবং অনলাইন অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য বা ব্যক্তিগত নথির কপি দেবেন না। অন্য কারো জন্য অর্থ বা পণ্য স্থানান্তর করতে রাজি হবেন না। কারণ অর্থ পাচার আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
১০. অস্বাভাবিক অর্থ প্রদানের অনুরোধ থেকে সাবধান থাকুন। স্ক্যামাররা আপনাকে নানা অস্বাভাবিক উপায়ে অর্থ প্রদানে অনুরোধ করবে। যেমন, প্রিলোডেড ডেবিট কার্ড, গিফট কার্ড, আইটিউনস কার্ড বা বিট কয়েন-এর মতো ভার্চুয়াল কারেন্সির কথা বলে তারা ফাঁদে ফেলতে পারে।
১১. অনলাইনে কেনাকাটা করার সময় সাবধান থাকুন। খুব বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় এমন অফারগুলি থেকে সাবধান থাকুন এবং আপনি চেনেন এবং বিশ্বাস করেন, সবসময় এমন অনলাইন শপিং সার্ভিস ব্যবহার করুন। বিটকয়েনের মতো ভার্চুয়াল মুদ্রাগুলি ব্যবহার করার আগে সতর্ক থাকুন। কারণ, অন্যান্য লেনদেন পদ্ধতির মতো তাদের কোনো গ্যারান্টি নেই। একবার আপনি টাকা দিয়ে দিলে পরে আর ফেরত পাবেন না।