সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট কি?
যারা সাপ্লাই চেইনে নতুন চাকুরী করছি বা চাকুরী করতে চাই তাদের কাছে সাপ্লাই চেইন বিষয়টা একটু জটিলও ধোয়াশার, অনেকেই মনে করি শুধু পারছেস করাই সাপ্লাই চেইন, কারো কাছে এলসি রিলেটেড কাজ করা মানেই সাপ্লাই চেইন আবার কারো কাছে ডিসট্রিবিউশন অথবা লজিস্টিক নিয়ে কাজ করা মানে সাপ্লাই চেইন। অনেকেই শিখতে চান আসলেই সাপ্লাই চেইন কি? পূর্ণাঙ্গ সাপ্লাই চেইন বলতে কি বুঝায়?
অনেকে জানতে চান কোন প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা নিলে পূর্ণাঙ্গ সাপ্লাই চেইন সর্ম্পকে জানা যাবে। একজন ব্যক্তি হিসেবে সবাই সব জায়গা/প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রী অর্জন করেনা, তাই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সর্ম্পকে মন্তব্য করা কঠিন।
তবে আমি ব্যক্তিগত ভাবে যতগুলো প্রতিষ্ঠানে শিখতে গিয়েছি, পূর্নাঙ্গ সাপ্লাই চেইন সর্ম্পকে কেউ-ই ধরনা দিতে পারেনি। কারন হল ঐ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় কোন নামকরা কোম্পানীর পারচেজ ম্যানেজার, কমার্শিয়াল ম্যানেজার, ইনভেন্টোরী ম্যানেজার অথবা ওয়্যারহাউজ ম্যানেজার দিয়ে। যেহেতু আমরা কর্মক্ষেত্রে সাপ্লাই চেইনের ক্ষুদ্র অংশ নিয়ে কাজ করতে হয় তাই সাপ্লাই চেইনের পুর্নাঙ্গ ধারনা সবার থাকেনা তাই যে ম্যানেজার যে অংশে কাজ করছেন তা-ই শিক্ষার্থীদের শেখাতে থাকেন। কেউ কেউ শুধু পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষকতা করেন।
তাছাড়া অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কোন প্রসেস অনুসরন করে সাপ্লাই চেইন শেখায় না তাতে করে সাপ্লাই চেইনের শুরু কোথায় আর শেষ কোথায় জানা মুশকিল হয়ে যায়। সাপ্লাই চেইন পড়ানোর সময় অনেক কপি স্লাইড থাকে যেখানে অনেক দুর্বোধ্য থিওরী থাকে যা নতুনদের জন্য বুঝা খুবই কঠিন আর শিক্ষকও ঠিকমত সেসব স্লাইডের মর্মার্থ বুঝাতে পারেন না। বিক্ষিপ্ত ভাবে সাপ্লাই চেইন জানার কারনে নতুনরা সাপ্লাই চেইনের অংশগুলোকে আলাদা আলাদা ভাবে সাপ্লাই চেইন মনে করে আর পূর্ণাঙ্গ সাপ্লাই চেইন কখনোই জানা হয়না।
অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও সাপ্লাই চেইনের অন্তর্ভুক্ত চাপ্টার গুলোকে আলাদা ভাবে সাপ্লাই চেইন মনে করে, যেমন অনেকে বিজ্ঞাপন দেয়ার সময় লিখে ”ট্রেনিং অন কমার্শিয়াল, ইনভেন্টরি/ওয়ার হাউজ, ডিষ্ট্রিবিউশন এন্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট” বাস্তবে কমার্শিয়াল, ইনভেন্টরি/ওয়ার হাউজ, ডিষ্ট্রিবিউশন সবই সাপ্লাই চেইনের এক-একটি চাপ্টার আর সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট বললে সবগুলো বিষয়ই কভার হয়ে যায়।
আমার মতে একটি উৎপাদন শিল্পের সাপ্লাই চেইনের সাথে সম্পৃক্ত মুখ্য বিষয় হল তিনটি ১) প্রোডাক্ট (পণ্য) ২) ডেলিভারী (সরবরাহ) ও ৩) সেলস (বিক্রয়)। তার মানে হল প্রোডাক্ট, ডেলিভারী হবে, বিক্রয় করার জন্য। এখানে প্রোডাক্টটা হল কমন (ট্রানজেকশনাল) আর সরবরাহ এবং বিক্রয় দুটি কর্ম, যা দুটি মানব গ্রুপ বা দল দ্বারা পরিচালিত, যে গ্রুপদ্বয় পন্য বা প্রোডাক্টকে নিয়ে কাজ করে। একদল লোক পণ্যটি বিক্রয় করে এবং একদল লোক পণ্যটাকে সরবরাহ করে। পণ্য সরবরাহের সাথে জড়িত লোকগুলোই সাপ্লাই চেইনের অংশ।
তাহলে পন্য সরবরাহের বা ডেলিভারী সাথে কারা জড়িত? সাপ্লাই চেইন অপারেশন রেফারেন্স বা স্কোর মডেল (SCOR Model) অনুযায়ী পন্য সরবরাহ হয় Plan-Buy-Make-Deliver এই প্রসেসের মাধ্যেমে, যার মানে হল প্রথম গ্রুপের চাহিদা বা সেলসের ডিমান্ড অনুযায়ী প্লান বা পরিকল্পনা হবে, সে অনুযায়ীা ক্রয় হবে, সে অনুযায়ী উৎপাদন হবে এবং সে অনুযায়ী মার্কেটে ডেলিভারী বা সরবরাহ করা হবে তার সব কিছুই করবে দ্বিতীয় গ্রুপ। দ্বিতীয় গ্রুপে চারটি ডিপার্টমেন্ট ডাইরেক্ট জড়িত যেমন-
১। প্লান (Plan) বা পরিকল্পনা করার জন্য প্লানিং (Planning) ডিপার্টমেন্ট
প্লানিং মুলত কত কাচামাল লাগবে, কত উৎপাদন করতে হবে, কত ডেলিভারী করতে হবে, সেসব পরিকল্পনা বা নির্ধারণ করে দেয়। প্রকিউরমেন্ট, প্রডোক্শন ও ডিষ্ট্রিবিউশন তিনটি ডিপার্টমেন্টের তথ্যের ভিত্তিতেই হয় প্লানিং তাই প্লানিং এই তিনটি ডিপার্টমেন্টেকে ইনডাইরেক্টলি সুপারভাইজ করে এবং তাদের কন্ট্রোল করে অপারেশনাল পাওয়ার এক্সারসাজের মাধ্যেমে। প্লানিং (Planning) ডিপার্টমেন্টকে অনেকে পিপিআইসি (PPIC) ও বলে।
২। বাই (Buy) বা ক্রয় করার জন্য প্রকিউরমেন্ট (Procurement) ডিপার্টমেন্ট
প্রকিউরমেন্ট বললেই পন্য ক্রয়ের জন্য যত ধরনে ক্রিয়াকলাপ আছে সবই বুঝায়, প্লানিংকে অনুসরন করে প্রকিউরমেন্ট কাচামাল ক্রয় করে। কাজের সুবিধার জন্য এখনে কিছু সেকশান থাকে যেমন-
- সুরছিং (Sourcing)- সাপ্লাইয়ার খোজার কাজ। এখানেওক্যাটাগরী আছে।
- পার্চেজ (Purchase)- লোকাল কেনাকাটা, এখানেও অনেক ক্যাটাগরী আছে।
- কমার্শিয়াল এন্ড লজিস্টিক্স (Commercial & Logistics)- ফরেন কেনাকাটা/আমদানী করা/এলসি অপারেশন।
৩। মেক (Make) বা উৎপাদন করার জন্য প্রোডাক্শন (Production) ডিপার্টমেন্ট
প্লানিংকে অনুসরন করে প্রডোক্শন ডিপার্টমেন্ট ফিনিশড প্রোডাক্ট উৎপাদন করে। এখনেও কাজের সুবিধার জন্য প্রোডাক্ট বা উৎপাদন প্রক্রিয়া অনুযায়ী কিছু সেকশান থাকে যেমন- টেবলেট, ক্যাপসুল, সিরাপ, ইন্জেক্টবল, অফথালমিক ইত্যাদি। প্রোডাক্শন যে সাপ্লাই চেইনের অন্তর্ভুক্ত এটা অনেকেই জানেনা।
৪। ডেলিভার (Deliver) বা সরবরাহ করার জন্য ডিষ্ট্রিবিউশন ম্যানেজমেন্ট (Distribution Management) ডিপার্টমেন্ট
অনেক কোম্পানীর ক্ষেত্রে ডিষ্ট্রিবিউশন ডিপার্টমেন্ট মানেই হল বিশাল বড় ওয়ার হাউজ ও অনেকগুলো ডেলিভারী ভ্যানের জংশন। ডিষ্ট্রিবিউশন মুলত সেলসের চাহিদ পত্র অনুযায়ী বা ডিপোর চাহিদা অনুযায়ী পন্য ডেলিভারী দিয়ে থাকে যা নিজস্ব পরিকল্পনা বা কোম্পানীর পলিসির ভিত্তিতে অথবা সেন্ট্রাল প্লানিংয়ের পরামর্শে, অনেক ক্ষেত্রে হেড অব সেলস পার্সোনেল এর পরামর্শে হয়ে থাকে।
ডিষ্ট্রিবিউশন ডিপার্টমেন্ট প্রোডাক্ট সরবরাহ বা ডেলিভারী করে ভ্যানের মাধ্যেমে প্রধান ওয়ার হাউজ থেকে তাদের অধিনে দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ছোট ছোট অনেক ওয়ার হাউজে বা ডিষ্ট্রিবিউটরের কাছে, সেখান থেকে কাস্টমারের কাছে পৌছায়। তাই ইনভেন্টরি /ওয়ার হাউজ ম্যানেজমেন্ট (Inventory Management/ Warehouse Management) ও লজিস্টিক্স ম্যানেজমেন্ট (Logistics Management) ডিষ্ট্রিবিউশনের অধিনে হয়ে থাকে।
অনেক কোম্পানী ইনবাউন্ড আউটবাউন্ড লজিস্টিক্স ম্যানেজমেন্ট ডিষ্ট্রিবিউশন ডিপার্টমেন্টের মাধ্যেমে করে থাকে আবার থার্ড পার্টির মাধ্যেমে ও করে থাকে।
পূর্নাঙ্গ সাপ্লাই চেইনকে জানতে হলে আমাদের শুধু ৪টি বিষয় জানতে হবে তাহলেই সাপ্লাই চেইনের শুরু থেকে শেষ সব বিষয়গুলো জানা হয়ে যাবে। এই ৪টি বিষয়ের মধ্যেই সব নিহিত আছে।
১। প্লানিং (Planning) কি, প্লানিং কিভাবে করে?
২। প্রকিউরমেন্ট (Procurement) কি, প্রকিউরমেন্ট কিভাবে করে?
৩। প্রোডাক্শন (Production) কি, প্রোডাক্শন কিভাবে করে?
৪। ডিষ্ট্রিবিউশন (Distribution) কি, ডিষ্ট্রিবিউশন কিভাবে করে?
তাই-
- ১। প্লানিং (Planning)/
- ২। ফোরকাস্টিং (Forecasting)
- ৩। মেটেরিয়েল রিকুইরেমেন্ট প্লানিং (Material Requirement Planning)
- ৪। ডিমান্ড ও সাপ্লাই প্লানিং (Demand & Supply Planning)
- ৫। সোর্সিং (Sourcing)
- ৬। প্রকিউরমেন্ট ও পার্চেজ (Procurement & Purchase)
- ৭। কমার্শিয়াল এন্ড লজিস্টিক্স (Commercial & Logistics)
- ৮। এল সি অপারেশন (L/C Operation)
- ৯। ইম্পোর্ট ও এক্সপোর্ট (Import & Export)
- ৯। ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট (Inventory Management)
- ১০। ওয়ার হাউজ ম্যানেজমেন্ট (Inventory Management)
- ১১। অপারেশান ম্যানেজমেন্ট (Operation Management)
- ১২। প্রোডাক্শন ম্যানেজমেন্ট (Production Management)
- ১৩। ডিষ্ট্রিবিউশন এন্ড ফ্লীট ম্যানেজমেন্ট (Distribution & fleet Management)
- ১৪। লজিস্টিক্স এন্ড ট্রান্সপোর্টেশনস ম্যানেজমেন্ট (Logistics & Transportations Management)
যাই বলেন সব গুলো মিলেই সাপ্লাই চেইন। এগুলো হল সাপ্লাই চেইনের এক-একটি সেক্টর বা এরিয়া যা উপরেউল্লেখিত চারটি বিষয় জানলেই বাকি সব বুঝা হয়ে যাবে। যিনি এই ৪টি বিষয় বা উইংস সম্পর্কে জ্ঞান রাখবেন তিনি “হেড অব সাপ্লাই চেইন” হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।
এবার আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আপনি সাপ্লাই চেইনের কোন সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে চান। আপনার কোর্স বা ডিপ্লোমা/ডিগ্রী নির্ভর করবে এর উপর। কারন আপনি যদি ‘প্রকিউরমেন্ট ও পার্চেজ’ সাইডে কাজ করতে চান সেক্ষেত্রে Chartered Institute of Procurement and Supply (CIPSTM) Certificate বেশ ভাল কাজে আসবে। আপনি যদি ডিষ্ট্রিবিউশন নিয়ে কাজ করতে চান, তাহলে Chartered Institute of Logistics & Transportations (CILTTM) Certificate কাজে আসবে। ওভার অল সাপ্লাই চেইন সম্পর্কে ধারনা নিতে চাইলে Post Graduate Diploma in Supply Chain Management (PGDSCM) কাজে আসতে পারে।
আপনার ক্যারিয়ারে অবস্থানগত অবস্থার সাথেও সম্পর্কিত। আপনি যদি ফ্রেশার হন তাহলে আপনার জন্য এক কোর্স আর যদি অভিজ্ঞ হন তাহলে অন্য কোর্স। আপনি যখন এক্সিকিউটিভ/এমটিও/সিনিয়র এক্সিকিউটিভ পোষ্টে জব করবেন তখন আপনার দরকার জানার/চেষ্টা করার/অভিজ্ঞতা অর্জন করা। আপনি এমন কোন প্রতিষ্ঠান খুজবেন যেখানে ভর্তি হলে আপনি বিস্তারিত জানতে পারবেন এবং সার্টিফিকেট পাওয়া যায়, যেমন- PGDSCM। অন্যদিকে, আর যিনি আপনার সিনিয়র হিসাবে কাজ করছেন উনার অভিজ্ঞতা আছে কিন্তু তেমন কোন সার্টিফিকেশন নেই, তাহলে উনার দরকার কাজের স্বীকৃতিস্বপরুপ একটা সার্টিফিকেট, যেমন- CSCM। তাহলে এমন কোন প্রতিষ্ঠান খুজবেন যেখানে কিছু জানা না গেলেও প্রেস্টিজিয়াস সার্টিফিকেট পাওয়া যায়।
দক্ষ অ্যানালিটিক্স এবং রিপোর্টিং ফিচারের মাধ্যমে সাপ্লাই চেইন ভিজিবিলিটি কাজ করে। মূলত, এর মাধ্যমে যেকোনো প্রতিষ্ঠানের সাপ্লাই চেইনের বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যায়। পণ্য উৎপাদন, পণ্যের অর্ডার প্লেস করা বা চালান ট্র্যাক করার মতো কাজগুলি এসবের মধ্যে অন্যতম।
এছাড়াও, প্রতিদিনের লিড টাইম, নির্দিষ্ট কোনো গুদামের ইনভেন্টরি লেভেল বা কোনো চালান আসার সঠিক সময়, অর্থাৎ প্রত্যেকটি প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সরবরাহ করাই সাপ্লাই চেইন ভিজিবিলিটির কাজ।
সাপ্লাই চেইন ভিজিবিলিটির মূল উদ্দেশ্যই হলো সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা পেতে সাহায্য করা। একইসঙ্গে কোন কোন ক্ষেত্রে আরও উন্নতি করা যেতে পারে, তা নিয়ে দায়িত্বশীলদের ধারণা দেয়াও এর অন্যতম কাজ।
পরিপূর্ণ সাপ্লাই চেইন ভিজিবিলিটি ছাড়া আপনার সম্পূর্ণ সাপ্লাই চেইনের সমস্যাগুলি হয়তো আপনি বুঝতে পারবেন। কিন্তু সেগুলি ঘটার কারণ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাবেন না। এ বিষয়টি বড় বড় সব কোম্পানির জন্যে বিশেষভাবে সত্য, যাদের গ্লোবাল সাপ্লাই চেইন নিয়ে কাজ করতে হয়।
সাপ্লাই চেইনের কোন ত্রুটিগুলি ঠিক করা দরকার, সঠিক টুলের অভাবে এসব বিষয়ে অনুমানের ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নিতে হয় অনেক সময়। কিন্তু, সঠিক সিস্টেমের মাধ্যমে আপনি অনায়াসেই সমস্যাগুলি শনাক্ত করতে পারবেন এবং সমাধান বের করাও হবে সহজ। সাপ্লাই চেইন ভিজিবিলিটি বাড়ানোর মাধ্যমে আরো যেভাবে লাভবান হতে পারেন
গ্রাহকদের কাছে আপনার নির্ভযোগ্যতা বাড়ানো-
সাপ্লাই চেইন ভিজিবিলিটি আপনার সাপ্লাই চেইনের পারফর্মেন্সকেই শুধু অপটিমাইজ করে না, বরং আপনার কাস্টমার সার্ভিস উন্নয়নেও অবদান রাখে। ধরুন, দেরিতে পণ্য হাতে পাওয়ায় একজন গ্রাহক আপনার কাছে এর কারণ জানতে চাইলেন। ভালো হয়, আপনি যদি “ঠিক বলতে পারছি না” বলার চেয়ে নিজের ভুল স্বীকার করে সঠিক কারণটিই তার সামনে তুলে ধরেন।
আজকাল ভোক্তারা একটি প্রতিষ্ঠানের ট্রান্সপারেন্সি বা কাজের পদ্ধতিতে স্বচ্ছতাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। কোনো পণ্য ঠিক কী উপায়ে আপনার শেলফ পর্যন্ত এসেছে, কীভাবেই বা আপনি পূর্ণাঙ্গ সেবা নিশ্চিত করছেন–এসব বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা পেতে চান তারা। একজন ব্যবসায়ীর জন্য প্রতিযোগিতামূলক এই বাজার ব্যবস্থায় এগিয়ে থাকা সহজ হয় তখনই, যখন তিনি তার কাস্টমার সার্ভিস নিয়ে গ্রাহকদেরকে পরিষ্কার ধারণা দিতে পারছেন। আর এ কথাটি একটি সফটওয়্যার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান থেকে স্থানীয় মুদি দোকান পর্যন্ত যেকোনো ব্যবসার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
বাধা-বিপত্তির প্রভাব যথাসম্ভব কমিয়ে আনা-
মেশিং লার্নিং-এর সুবিধা নিয়ে প্রচলিত ট্রেন্ড এবং প্যাটার্নগুলিকে চিহ্নিত করার মাধ্যমে ভবিষ্যতের ট্রেন্ডগুলির ব্যাপারে ধারণা পেতে পারবেন। পাশাপাশি যেকোনো অসঙ্গতিও আপনার চোখে সহজেই ধরা পড়বে।
কাঁচামালের ঘাটতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রমের কারণে অনেক সময়ই কাজের গতি কমে আসতে পারে। এরকম প্রতিটি দুর্ঘটনা বা সমস্যাকে আপনি মোকাবেলা করতে পারবেন রিয়েল-টাইম ডেটা ব্যবহার করেই। কাজেই, পূর্বাভাস দিতে সক্ষম, এমন টুলগুলি আপনার সামগ্রিক পরিকল্পনা ও ইনভেন্টরি ঠিকঠাক রাখতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি লজিস্টিকস সার্ভিসের মাধ্যমেও আপনার সমস্যা সমাধান হতে থাকবে।
পণ্য ট্র্যাকিং এবং ট্রেসিং-এর সুবিধা-
কাগজ নির্ভর গতানুগতিক ও বিচ্ছিন্ন ডেটা সিস্টেমগুলি সব শিল্পের জন্যই ট্রেসেবিলিটি এবং ট্রান্সপারেন্সি ধরে রাখার ক্ষেত্রে এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। কিন্তু ডিজিটাল গ্রাহক-নির্ভর সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থা আপনাকে প্রতিটি পণ্যের অবস্থান জানতে এবং এর হিস্ট্রি ট্র্যাক করতে সহায়তা করতে পারে। রেডিও-ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (RFID), জিপিএস এবং ইলেকট্রনিক পয়েন্ট অফ সেল (EPOS) এর মতো প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে গ্রাহকের হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত প্রতিটি পয়েন্ট ট্র্যাক এবং ট্রেস করার সুবিধা দেয়।