কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা মোবাইলে কাজ করার সময় মাঝেমধ্যে সফটওয়্যার আপডেট করার জন্যে নির্দেশনা দেয়া হয়। অনেক সময় সেই নির্দেশনা পপ-আপ উইন্ডো আকারে স্ক্রিনে আসে। তবে এসব ক্ষেত্রে প্রায় সময়ই আমরা “Remind me later”-এ ক্লিক করে আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে থাকি, যেটা করা উচিত না। ব্যবহার করতে থাকা সফটওয়্যার অনেকদিন ধরে আপডেট না দিলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে।
সফটওয়্যার আপডেট আপনার ডিজিটাল সুরক্ষা এবং সাইবার নিরাপত্তার জন্যে জরুরি। যত দ্রুত সফটওয়্যার আপডেট করবেন, তত দ্রুত আপনার ডিভাইসটি বিভিন্ন রকমের ঝুঁকি থেকে সুরক্ষিত থাকবে।
১. সফটওয়্যার আপডেটের কিছু সুবিধা-
সফটওয়্যার আপডেট নেয়ার সুবিধা অনেক। এটা অনেকটা পড়া শেষে পুরোটা রিভাইস দেয়ার মতো। মানে আপনার সফটওয়্যারে কী সমস্যা আছে এবং ভবিষ্যতে কী সমস্যায় পড়তে পারে, সেটা যাচাই হয়ে যায় এর মাধ্যমে। আপডেটের সময় সফটওয়্যারের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো ত্রুটি বা এর মধ্যে কোনো বাগ আছে কি না, তা ধরা পড়ে। তাছাড়া আপডেটের সময় সফটওয়্যারের নতুন ফিচার যোগ হয় এবং পুরনো অপ্রয়োজনীয় ফিচারগুলি বাদ পড়ে যায়। বিশেষ করে অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারের সময় লেটেস্ট ভার্সন ব্যবহার করা খুবই জরুরি একটা বিষয়।
২. আপডেটের মাধ্যমে আপনার সফটওয়্যারের নিরাপত্তা সংক্রান্ত ত্রুটি শনাক্ত এবং সংশোধন করা হয়-
হ্যাকাররা বিভিন্ন সফটওয়্যারের সিকিউরিটি বা নিরাপত্তা সংক্রান্ত ত্রুটি বের করার জন্যে সবসময়ই সুযোগ খুঁজতে থাকে। এসব ত্রুটিকে টার্গেট করে তারা কোডিং-এর মাধ্যমে সফটওয়্যার ও অপারেটিং সিস্টেমকে ম্যালওয়্যার সফটওয়্যার বা ক্ষতিকর সফটওয়্যার বানিয়ে ফেলে। ব্যবহারকারী হিসেবে আপনি আগে থেকে এর কিছুই ধরতে পারবেন না। হয়তো কোনো অচেনা ওয়েবসাইট বা সোর্স থেকে আসা মেসেজ বা মিডিয়াতে ক্লিক করলে তার মাধ্যমে আপনার কম্পিউটারে ভাইরাস ঢুকে যায়।
এরপর সেই ম্যালওয়্যার আপনার কম্পিউটার বা ডিভাইস থেকে ডেটা নেয়া শুরু করে। আস্তে আস্তে হ্যাকারের হাতে আপনার ডিভাইসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চলে যায়। তবে সফটওয়্যার নিয়মিত আপডেট দিয়ে রাখলে এই ঝুঁকি থেকে আপনার ডিভাইস ও সফটওয়্যার রক্ষা করা সম্ভব। অনেক আপডেটে সফটওয়্যার প্যাচ থাকে, যা আপনার সফটওয়্যারের নিরাপত্তা জোরদার করে।
৩. সফটওয়্যার আপডেট আপনার ডেটার সুরক্ষা দেয়-
আমাদের কম্পিউটারে অনেক ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট ও ব্যক্তিগত তথ্য থাকে। ই-মেইল অ্যাকাউন্ট, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা ব্যক্তিগত ভেরিফিকেশনের তথ্যের মতো বিভিন্ন তথ্য সাইবার অপরাধীর কাছে বেশ মূল্যবান।
এসব তথ্য ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের নাম ভাঙিয়ে হ্যাকাররা অনেক ধরনের অপরাধী কাজে লিপ্ত হয়। অনেক সময় তারা ‘র্যানসমওয়্যার আক্রমণ’ চালায়। এই ধরনের সাইবার অ্যাটাকের মাধ্যমে আপনার সফটওয়্যারের ডেটা এনক্রিপ্ট করে ফেলা হতে পারে। তখন আপনি আর সেগুলি ব্যবহার করতে পারবেন না। হ্যাকাররা তখন এই ডেটার বিনিময়ে আপনার কাছে টাকা দাবি করতে পারে। টাকা পেলে তখন তারা আপনাকে ‘এনক্রিপশন কী’ দেবে। অনেক সময় টাকা দেয়ার পরেও আপনার ডেটা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানাতে পারে তারা।
তবে নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেটেড রাখলে হ্যাকারদের আপনি দূরে রাখতে পারবেন।
৪. সুরক্ষিত থাকবে আপনার পরিচিতজন-
আপনি ভাবতে পারেন সাইবার নিরাপত্তা কেবল আপনার ডিভাইসগুলির জন্যই দরকার বা কেবল আপনার জন্যই দরকার। কিন্ত হ্যাকাররা শুধু আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে ভেবে থাকলে আপনি ভুল করবেন। আপনার ডিভাইসে যদি ভাইরাস ঢোকে সেখান থেকে তা আপনার অফিস, বন্ধুবান্ধব কিংবা পরিবারের অন্য কারো ডিভাইসে চলে যেতে পারে। তাই সফটওয়্যার আপডেটেড থাকা আপনি সহ আশেপাশের সবার জন্যেই জরুরি।
আপনার ডিভাইস নিরাপদ রাখার জন্যে বাজারে অনেক ধরনের সিকিউরিটি সফটওয়্যার পাওয়া যায়। তবে মনে রাখা দরকার, কেবল অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করলেই আপনার ডিভাইসের সিকিউরিটি সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত হয় না।
৫. সবচেয়ে উন্নত এবং আপডেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করা আপনার অধিকার-
নিয়মিত আপডেট না করলে অনেক নতুন ফিচার থেকে আপনি বঞ্চিত হবেন। তবে কেন আপনি বাকিদের চেয়ে পেছনে পড়ে থাকবেন? ব্যবহারকারীদের কথা চিন্তা করেই সফটওয়্যার আপডেট তৈরি করা হয়। আপডেটেড সফটওয়্যারে আপনি আরও দ্রুতগতিতে কাজ করতে পারবেন, অযথা সফটওয়্যার ক্র্যাশ করবে না এবং সফটওয়্যারের ওপর আপনার নিয়ন্ত্রণ বাড়বে। আর এসব সুবিধাগুলি যদি আপনার কাছে বেশি জরুরি মনে না হয়, তবে সাইবার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে হলেও সফটওয়্যার আপডেট রাখাটা দরকার।
তাই কাজের মাঝখানে সফটওয়্যার আপডেটের জন্যে পপ-আপ উইন্ডোতে “আপডেট নাউ” অপশনটি যদি বার বার না দেখতে চান, তাহলে সেটিংস থেকে ‘অটোমেটিক আপডেট’ অন করে রাখতে পারেন। তাহলে নিশ্চিন্তেই আপনার ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবেন।