ল্যাপটপ এখন অনেকের জীবন-যাপনের অপরিহার্য অংশ। তাই ল্যাপটপ কেনার আগে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার সম্পর্কে প্রাথমিক কিছু ধারণা থাকা ভালো। তাতে প্রয়োজন অনুসারে ডিভাইস বাছাইয়ে সুবিধা হয়।
১. সিপিইউ-
সিপিইউর (CPU) জন্যে আপনার সামনে দুটি ব্র্যান্ড অপশন। একটি ইন্টেল, অন্যটি এএমডি। দুটি ব্র্যান্ড সিপিইউ’র নামকরণে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ কর। সুতরাং কীভাবে বিভিন্ন মডেলের সিপিইউ-র পার্থক্য বোঝা যাবে, সেটা জেনে নেয়া যাক।
ইন্টেল দিয়ে শুরু করা যাক। বেশির ভাগ ইন্টেল ল্যাপটপেই ইন্টেল কোর সিপিইউ ব্যবহৃত হয়। ইন্টেল কোর সিপিইউ’র আবার i9, i7, i5 এবং i3 মডেল রয়েছে। সিপিইউ যত বেশি শক্তিশালী, “i” এর পরের সংখ্যাটির মানও তত বেশি হবে। অন্য কথায়, i9 এর পারফর্মেন্স সবচেয়ে ভালো। এরপরে i7, তারপর i5 এবং সবশেষে i3।
এখন আবার যদি ইন্টেল কোর আই 7-7500U সিপিইউ সহ একটি ল্যাপটপ দেখে থাকেন, তাহলে সেখানে ‘7500U’ লেখাটার অর্থ কী?
এখানে প্রথম অংশে থাকা সংখ্যাটি দেখে শুরু করা যাক। সংখ্যার মান যত বড় হবে, তত নতুন বা আপডেটেড জেনারেশনের প্রসেসর থাকবে। উদাহরণস্বরূপ, 7500U একটি ৭ম জেনারেশনের ইন্টেল কোর সিপিইউ। প্রতিটি নতুন জেনারেশনে সিপিইউর কার্যকারিতা বাড়ানো হয় এবং প্রতিটাই আগেরটার চাইতে অপেক্ষাকৃত কম বিদ্যুৎ খরচ করে।
আর সংখ্যার শেষে থাকা U-এর মানে কী? ল্যাপটপে কী ধরনের সিপিইউ ব্যবহৃত হচ্ছে, তা নির্দেশ করে এই অক্ষর। ইন্টেল সিপিইউর ধরন বোঝানোর জন্য এমন ৭টি চিহ্ন ব্যবহার করা হয়:
M: ভোল্টেজ এবং তাপ নির্গমনের পরিমাণ কম। কিন্তু কর্মক্ষমতাও কম।
X: সর্বোচ্চ কর্মক্ষমতা।
L: কম ভোল্টেজ এবং স্ট্যান্ডার্ড ভার্শনের তুলনায় ৫০% কম তাপ নির্গত হয়।
U: কম ভোল্টেজ এবং L-এর তুলনায় বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এবং তাপ নির্গমন কম হয়।
Q: কোয়াড-কোর প্রসেসর ল্যাপটপে (Laptop) ব্যবহৃত চিহ্ন।
H: মোবাইল প্ল্যাটফর্ম প্রসেসরের জন্য প্যাকেজিংয়ের একটি ফর্ম। সাধারণত গেমিং ল্যাপটপে এই চিহ্ন ব্যবহৃত হয়।
ইন্টেলের পর এবার এএমডি রাইজেন প্রসেসর সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নেয়া যাক। ইন্টেল যেভাবে তার সিপিইউ’র নাম নির্ধারণ করে, ঠিক সেভাবে এএমডি রাইজেন সিপিইউগুলিও R9, R7, R5 এবং R3 মডেলে বিভক্ত। ইন্টেলের মতো রাইজেন সিপিইউগুলিরও লো-ভোল্টেজ এবং স্ট্যান্ডার্ড সংস্করণ রয়েছে।
২. জিপিইউ-
ছবি এডিট করা বা গেমস খেলার মতো কাজের জন্যে জিপিইউ বা গ্রাফিক্স কার্ড গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। নোটবুক ল্যাপটপে সাধারণত দুই ধরনের জিপিইউ থাকে: ইন্টিগ্রেটেড জিপিইউ এবং ডিসক্রিট জিপিইউ।
ইন্টিগ্রেটেড জিপিইউ’র কর্মক্ষমতা সাধারণত দুর্বল হয়ে থাকে। ভারি গেমস খেলার জন্যে এ ধরনের জিপিইউ অনুপযুক্ত। তবে হালকা ধরনের অফিশিয়াল কাজের জন্যে যারা দীর্ঘ ব্যাটারি লাইফ চান, তাদের জন্যে এটি তুলনামূলক ভালো। বেশির ভাগ হালকা ধরনের নোটবুকের সাথে এই জিপিইউ থাকে।
তাহলে ল্যাপটপ কেনার ক্ষেত্রে গ্রাফিক্স কার্ড কীভাবে বাছাই করবেন?
এক্ষেত্রে দুটি ব্র্যান্ড রয়েছে: এনভিডিয়া এবং এএমডি। সিপিইউ’র মতো এর মডেলের নামের অক্ষর এবং সংখ্যাগুলিরও ভিন্ন ভিন্ন অর্থ রয়েছে। যেমন, Nvidia-র GTX 970M 4GB-র কথা ধরা যাক। প্রথমত, পারফরমেন্স-এর লেভেল সবচেয়ে ভালো হলো জিটিএক্স-এ। এরপরে ধারাবাহিক ভাবে জিটি, এবং সর্বশেষ জি মডেলের গ্রাফিক্স কার্ডের পারফর্মেন্স তুলনামূলক ভালো হয়ে থাকে। এরপরে থাকা সংখ্যাটি দিয়ে বর্তমান জেনারেশন বোঝানো হয়। এরপরের সংখ্যাটি দিয়ে এসকেইউ বোঝানো হয়। এই সংখ্যাটি যত বেশি, জিপিইউ তত বেশি শক্তিশালী। অর্থাৎ 8 এর চেয়ে 7 এবং 6 এর চেয়ে 5 কম শক্তিশালী। শেষের সংখ্যাটি সাধারণত “0” বা “5” হয়। আর “0” এর তুলনায় “5” সামান্য উন্নত হয়ে থাকে।
৩. র্যাম এবং স্টোরেজ-
ল্যাপটপ কেনার সময় আপনি কখনো কখনো স্পেক শিটে 16GB DDR3 1600 এর মতো টার্ম দেখতে পাবেন। DDR কী? DDR এর পূর্ণরূপ হলো ডাবল ডেটা-রেট। বাজারে সাধারণ DDR3 এবং DDR4 পাওয়া যায়। এখানে সংখ্যাটি দিয়ে র্যামের জেনারেশন বোঝায়। সংখ্যাটির মান যত বেশি হবে, সেটি তত বেশি নতুন জেনারেশনের হবে। আর সবশেষে “1600” সংখ্যাটি মেগাহার্টজ (MHz)-এ র্যামের ক্লক স্পিড বোঝায়।
ল্যাপটপে মেকানিকাল হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ (এইচডিডি) এবং সলিড-স্টেট ড্রাইভ (এসএসডি), সাধারণত এ দুই ধরনের হার্ডডিস্ক সংযুক্ত থাকে। এসএসডির তুলনায় এইচডিডির রিড এবং রাইটের গতি ধীর এবং এটি বেশি ভারিও। তবে, এইচডিডি তুলনামূলকভাবে সস্তা এবং বেশি ফাইল ধারণ করতে পারে। অন্যদিকে, এসএসডির গতি দ্রুততর। এবং এ ধরনের হার্ডডিস্ক অনেক কমপ্যাক্ট হয়।
৪. ডিসপ্লে-
ডিসপ্লের ক্ষেত্রে প্রথমেই দুটি মূল বিষয় বিবেচনা করতে হবে। সেগুলি হলো, আকার এবং রঙের গ্যামুট। আকারের ক্ষেত্রে স্ক্রিনটি একটু বড় হলেই দেখতে ভালো লাগবে। তবে মনে রাখবেন, বড় স্ক্রিনযুক্ত ল্যাপটপ চালাতে বেশি বিদ্যুৎ খরচ হয়। আর রঙের গ্যামুট হল রঙের পরিসর, যা কোনো ডিভাইসে শো করা হয়।
ডিসপ্লে প্যানেলও সাধারণত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে থাকে। টিএন (টুইস্টেড নিম্যাটিক) এবং আইপিএস (ইন-প্লেন স্যুইচিং) প্যানেল। দুটির মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্যটি হলো দেখার অ্যাঙ্গেলে। আইপিএস-এর প্রশস্ত দেখার অ্যাঙ্গেল রয়েছে। কিন্তু টিএন প্যানেলগুলিতে দেখার অ্যাঙ্গেল খুবই সংকীর্ণ।
৫. ফিচার-
ভালো একটি ল্যাপটপে Intel বা AMD মাল্টিকোর সিপিইউ থাকলে ভালো। ৩-৪ টি ইউএসবি পোর্ট এবং ল্যাপটপটি দ্রুতগতির কিনা তা দেখে নেওয়া উচিৎ। সাধারণত উচ্চ রেজ্যুলেশনের এবং গেম খেলা, ভিডিও সম্পাদনা এবং গ্রাফিকসের কাজের জন্য উচ্চ গতির ল্যাপটপ কেনা ভালো। এ জন্য প্রসেসরের ক্লক স্পিড ৩.০ গিগাহার্টজ বা এর বেশি হলে ভালো হয়। প্রসেসর কোন সিরিজের তা জেনে নেওয়াও জরুরি। কেনার আগে অবশ্যই গ্রাফিকস সক্ষমতা কেমন দেখে নেবেন। ভিডিও সম্পাদনা এবং গ্রাফিকসের কাজের জন্য কমপক্ষে ৪ গিগাবাইটের ডিডিআরথ্রি র্যাম হলে ভালো হবে।
৬. ব্র্যান্ড-
পরিচিত ব্র্যান্ডের ওপর আস্থা রাখতে পারেন। ডিলার ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে ল্যাপটপ কেনার আগে তাদের বিক্রয় পরবর্তী সেবা ও অতীতে তাদের ল্যাপটপ বিক্রির রেকর্ড সম্পর্কে জানা থাকলে ভালো হবে। কেনার সময় অবশ্যই ওয়ারেন্টি কার্ড, চার্জার, ব্যাগ ইত্যাদি জিনিসপত্র যা আপনার ল্যাপটপের সঙ্গেই পাচ্ছেন তা বুঝে নেবেন। এ ছাড়া সব সময়, আমদানিকারক, বিশ্বস্ত মাধ্যম বা দোকান থেকে ল্যাপটপ কিনুন।