এখন সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই তাদের কর্মীদের রিমোট ওয়ার্কের মাধ্যমে সুবিধা গ্রহণ করছে। অফিসের বাইরে বসে অফিসের কাজ করার ফলে কর্মীদের সাচ্ছন্দ্য এবং প্রোডাক্টিভিটি বাড়তে পারে। তাই বাসা থেকে কাজ করা বা রিমোট ওয়ার্ক-এর ব্যবস্থা থাকাটা এখন সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের জন্যেই প্রয়োজনীয় একটা বিষয়।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রিমোট ওয়ার্ক সিস্টেমে তাদের কাজ শুরু করেছে বলে কর্মীদের কাজের তত্ত্বাবধায়ন করার জন্যে প্রতিষ্ঠানের হিউম্যান রিসোর্স বা এইচআর বিভাগেরও এখন নতুন ধরনের বিভিন্ন প্রযুক্তির দরকার হচ্ছে। ভবিষ্যতে রিমোট ওয়ার্ক উপযোগী ব্যবসা চালানোর জন্য এ বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে।
যেভাবে রিমোট ওয়ার্ক সিস্টেম আসার পরে কাজের পরিবেশ বদলে গেছে-
কোভিড-১৯ মহামারী আসার পরে কর্মক্ষেত্রে রাতারাতি পরিবর্তন এসে গেছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সামাজিক দূরত্ব ও কর্মীদের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে রিমোট ওয়ার্ক পলিসি গ্রহণ করা শুরু করেছে। এতে কর্মীরাও কাজ করতে গিয়ে অনেক দিক দিয়ে সুবিধা পাচ্ছে। তবে এর সুফল অনেকটাই নির্ভর করে কীভাবে কর্মীদের জন্য এই পলিসি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, তার ওপর। যেমন অনেক ম্যানেজার ভেবে থাকেন, অফিসের বাইরে কাজ করার সময় কর্মীরা কাজে ফাঁকি দেয়। তাই কর্মীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্যে অনেক অফিস সার্বক্ষণিক ভিডিও কনফারেন্স চালু রাখার ব্যবস্থা করেছে।
তাই রিমোট ওয়ার্ক করার সময় যেন কর্মী ও ম্যানেজমেন্টের মধ্যে সমন্বয় থাকে, তার পেছনে প্রতিষ্ঠানের মানব সম্পদ বা এইচআর বিভাগের গুরুত্ব অনেক। এক্ষেত্রে এইচআর টিমের দায়িত্ব হলো রিমোট ওয়ার্ক-এর পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং কর্মীরা যাতে এর সুফল পূর্ণভাবে ভোগ করতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখা।
একই সাথে কর্মীরা যাতে সফলভাবে তাদের কাজ করতে পারে এবং কাজের সময় যেন তারা মানসিক চাপের মধ্যে না থাকে, সেটাও খেয়াল রাখতে হয় তাদের। তাই রিমোট ওয়ার্ক-এর ক্ষেত্রে কেবল কর্মীদের কাজের তদারকি করার মধ্যেই এইচআর এর ভূমিকা সীমাবদ্ধ নেই।
অনলাইনে কাজ করার সুবিধা থাকার ফলে এখন পৃথিবীর যেকোনো দেশের কর্মীদের সাথেই কাজ করা সম্ভব। তবে কর্মজীবনের সাথে ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য রাখতে কর্মীদের যেন হিমশিম খেতে না হয়, সেই দায়িত্ব থাকে প্রতিষ্ঠানের এইচআর ডিপার্টমেন্টের হাতে। প্রয়োজনীয় টুল এবং রিসোর্স ব্যবহার করে তাদেরকে কর্মীদের জন্য সহজ কর্মপরিবেশ তৈরি করার দায়িত্ব পালন করতে হয়।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোভিড-১৯ এর সময় প্রতি ৪ জন নারীর এক জনকে তাদের চাকরি ছেড়ে দিতে হয়েছে অথবা কাজের চাপ সামাল দেয়ার জন্য কর্মঘণ্টা কমাতে হয়েছে। কারণ এদের অনেকের ক্ষেত্রেই ঘরে বসে কাজ করার সময় নিজের ও পরিবারের দায়িত্ব পালন কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে কর্মীদের জীবনে ভারসাম্য আনার জন্য প্রতিষ্ঠানের এইচআর বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এইচআর যেভাবে কর্মীদের জন্য কর্মপরিবেশ উন্নত করতে পারে-
সম্পূর্ণ অফিসের কার্যক্রম এখন অনলাইনে চলে যাওয়ায় এইচআর বিভাগ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমন সব কাজ করতে পারছে, যা আগে সম্ভব ছিল না।
ট্র্যাকিং, মনিটরিং এবং কর্মীদের কাজের সফলতা যাচাই করার মতো কাজগুলি একসাথে করার এমন সুবিধা আগে পাওয়া যেত না। হিউম্যান রিসোর্স বিভাগের কর্মকর্তারা স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি এবং ‘সেলফ সার্ভ’ সিস্টেম ব্যবহার করে তাদের কর্মীদেরকে সাপোর্ট দিতে পারছেন।
এছাড়া সমন্বিত ক্লাউড প্রযুক্তি ব্যবহার করে কর্মীরা আরও সহজে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো প্রযুক্তি এখন সহজে ব্যবহার করা যাচ্ছে বলে কর্মীদের সাপোর্ট দেয়ার জন্য বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এসব প্রযুক্তি কাজে লাগাচ্ছে।
কর্মক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই (Ai) এর ব্যবহার-
এখন কর্মক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে স্মার্ট অ্যালগরিদম পরিচালনা করা হচ্ছে। এর কাজ হলো প্রতিষ্ঠানের বড় আকারের সিদ্ধান্তগুলি নেয়া। এসব প্রযুক্তির মাধ্যমে এইচআর বিভাগের কাজের ধরন বদলে যাচ্ছে। এআই-রিক্রুটমেন্ট সিস্টেমের মতো বিভিন্ন প্রযুক্তির ফলে তাদের সব ধরনের কাজে পরিবর্তন আসছে। অর্থাৎ নতুন কর্মী নিয়োগ দেয়া থেকে শুরু করে কর্মীদের পারফর্মেন্স মনিটরিং পর্যন্ত নানান কাজেই এআই-এর ব্যবহার হচ্ছে।
এআই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানের এইচআর বিভাগ এখন সিভি বা আবেদনপত্র খুব কম সময়ে বাছাই করতে পারছে। কাঙ্ক্ষিত প্রার্থীর সিভিতে তারা কোন কীওয়ার্ড বা ভাষার ধরন চাচ্ছে, অজস্র সিভির মধ্য থেকে এআই সেটা মিলিয়ে দেখতে পারছে। ফলে এখন খুব অল্প সময়েই অনেক সিভির মধ্য থেকে যোগ্য প্রার্থীর সিভি বাছাই করা সম্ভব হচ্ছে।
আবার কর্মীদের বেতন ঠিক করার সময় কে কত কাজ করেছে বা কাকে কত বোনাস বা অন্যান্য সুবিধা দেয়া হবে, সেগুলি এআই-এর মাধ্যমে নির্ণয় করা হচ্ছে। এসব সিস্টেমে কর্মীরা নিজেরাই নিজেদের স্যালারি চেক বা অডিট করার সুযোগ পান।
ক্লাউডের ব্যবহার-
ক্লাউড ডেটা সিস্টেম ছাড়া এআই-এর পরিপূর্ণ সুবিধা পাওয়া সম্ভব না। ক্লাউড সিস্টেমে প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ মূল্যবান ডেটার ব্যাকআপ রাখা যায় এবং নিরাপদে এনক্রিপ্ট করে রাখা যায়। এর ফলে অনেক প্রতিষ্ঠান এখন এই প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকছে।
ঘরে বসে কাজ করার সময় কর্মীরা এর সুফল পায়। ক্লাউডের মাধ্যমে তারা একদিকে যেমন প্রয়োজনীয় ডেটা সহজে হাতের কাছে পাচ্ছে, অন্যদিকে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করাও অনেক সহজ হয়ে গেছে।
যেমন ক্লাউডের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা কোনো প্রতিষ্ঠানের টিম মেম্বাররা ভার্চুয়াল স্পেসে তাদের কাজের আইডিয়া শেয়ার করে একটা প্ল্যান সফলভাবে দাঁড় করাতে পারে।
ভার্চুয়াল স্পেস-
ভার্চুয়াল স্পেস হচ্ছে রিমোট ওয়ার্ক-এর ভবিষ্যৎ। টিমের সাথে সবসময় যুক্ত থাকা এবং প্রয়োজনে যোগাযোগ করাটা মূলত যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর নির্ভর করে। আর প্রতিষ্ঠানের এইচআর বিভাগ যেহেতু কর্মীদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রক্ষা করতে চায়, সেক্ষেত্রে ভার্চুয়াল স্পেস তাদের কাজে আসতে পারে।
মোটকথা, এআই, ক্লাউড সিস্টেম আর ভার্চুয়াল স্পেসের ক্রমবিকাশের ফলে কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের সঠিক মনিটরিং এবং সাপোর্ট দেয়ার জন্যে এইচআর এখন নতুন নতুন উপায় উদ্ভাবন করছে।