পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক মানুষের হাতেই এখন স্মার্টফোন আছে। আর উন্নত অর্থনীতির দেশগুলিতে বসবাসকারী প্রতিটা মানুষের নাগালের মধ্যেই রয়েছে অনলাইনে থাকা বিশাল এক তথ্যভাণ্ডার। ফলে আগামী দিনে মার্কেটিংয়ে সফল হতে হলে গ্রাহকদের অনলাইন অভিজ্ঞতার ওপরেই সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে।
সফলভাবে মাল্টিচ্যানেল মার্কেটিংয়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে, এমন সব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা যায় যে, অনলাইনে গ্রাহকদের অভ্যাসগুলি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করার ওপরই নির্ভর করে মার্কেটিংয়ের এই মডেল।
বিশেষ করে, নিজেদের মোবাইল ডিভাইসের ওপর তাদের নির্ভরতা, অনলাইন বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে যুক্ত থাকার পরিমাণ এবং পার্সোনালাইজড গ্রাহক সেবার মতো বিষয়গুলি অবশ্যই বুঝতে হবে। অনলাইন মার্কেটিংয়ে সফলতা অর্জন এবং অল্প সময়ের মধ্যেই অনলাইনে বিক্রয় বাড়াতে এখানে রইলো ৯টি পরামর্শ।
ডিজিটাল অপারেশন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করুন-
সবচেয়ে কার্যকরভাবে মাল্টিচ্যানেল মার্কেটিং করার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো একটি ডিজিটাল অপারেশন ম্যানেজমেন্ট প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা। ডিজিটাল অপারেশন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ব্যবসার কার্যক্রম থেকে হাতে পাওয়া তথ্য কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডের জন্যে একটি মার্কেটিং প্ল্যান তৈরি করা সম্ভব। আর সেই অনুসারে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারলে ব্যবসায় সফল হওয়া শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল অপারেশন প্ল্যাটফর্মের ধরনও আলাদা হতে পারে। তবে গ্রাহকরাও সেই অনুসারে একাধিক প্ল্যাটফর্মে প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে প্রভাবিত হতে পারেন।
টার্গেট অডিয়েন্স চিহ্নিত করুন-
আধুনিক গ্রাহকদের অনলাইন কেনাকাটায় মাল্টিচ্যানেল শপিং অভিজ্ঞতা একটি অপরিহার্য অংশ। কিন্তু আধুনিক গ্রাহক কারা?
“আধুনিক গ্রাহকের” কাছে কার্যকরভাবে মার্কেটিং করার জন্যে প্রথমে আপনাকে আপনার টার্গেট অডিয়েন্স বা অনলাইন ইউজারদের চিহ্নিত করতে হবে। ইন্টারনেটে থাকা সবার কাছেই আপনি মার্কেটিং করবেন না। এবং শুধু কিছু চ্যানেলেই আপনার ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপন বেশি কার্যকর হবে।
টার্গেট অডিয়েন্স চিহ্নিত করার পর গ্রাহকদের রুচি, বয়স এবং অবসর সময়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আপনার ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপন তৈরি করা সম্ভব হবে। মনে রাখবেন, যেসব ব্র্যান্ড গ্রাহক সেবাকে বেশি গুরুত্ব দেয়, তাদের লাভও বেশি হয়।
টার্গেট চ্যানেলগুলি চিহ্নিত করুন-
সম্ভাব্য গ্রাহকরা যেসব চ্যানেল বা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে, সেসব চ্যানেলে মার্কেটিং করতে না পারলে টার্গেট অডিয়েন্স শনাক্ত করে কোনো লাভ নেই। টার্গেট অডিয়েন্স চিহ্নিত করার পাশাপাশি তারা যেসব চ্যানেল ব্যবহার করে এবং যেসব চ্যানেলকে বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে করে, সেসব চ্যানেলও খুঁজে বের করতে হবে।
অনলাইনে কেনাকাটার জন্যে ক্রেতারা এখন আরো বেশি পরিমাণে অগমেন্টেড রিয়েলিটি বা এআর প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করছে। অনলাইনে শপিংয়ে সুবিধা লাভ করার পাশাপাশি এআর প্রযুক্তির মাধ্যমে শারীরিকভাবে দোকানে গিয়ে কেনাকাটার মতো অভিজ্ঞতা পাওয়া সম্ভব। শারীরিকভাবে দোকানে গিয়ে কেনাকাটা করার সময় আপনি যেভাবে পণ্য যাচাই-বাছাই করতে পারতেন, এআর প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইনেও আপনি ঠিক সেভাবেই পণ্য যাচাই-বাছাই করতে পারবেন।
সব চ্যানেলে সামঞ্জস্য বজায় রাখুন-
অনলাইন গ্রাহকরা খুব সহজেই কোনো প্রতিষ্ঠানকে প্রতারক মনে করে আস্থা হারাতে পারেন। আর অনলাইনে মাত্র একটা ক্লিক করেই এক কোম্পানির ওয়েবসাইট থেকে আরেক কোম্পানির ওয়েবসাইটে চলে যাওয়া যায়। ফলে গ্রাহকরা এমন কোনো কোম্পানিতে সময় এবং অর্থ খরচ করার ঝুঁকি নিতে আগ্রহী হবেন না, যাদের সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেলগুলির মধ্যে সামঞ্জস্য নেই।
সুতরাং সব চ্যানেলে আপনার লোগো, টোন, চ্যাট সার্ভিস এবং কন্টেন্ট একই রকম রাখতে হবে। এর জন্যে আপনি মোবাইল বটের মতো সার্ভিস ব্যবহার করতে পারেন, যা এক্ষেত্রে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে। মূলত অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমেই মোবাইল বট সংগৃহীত ডেটা কম্পাইল এবং সিংক করে। ফলে এতে মানবীয় ভুল-ভ্রান্তি ঘটার ঝুঁকি কম থাকে।
ডায়নামিক রিমার্কেটিং করুন-
কোনো গ্রাহক একটি মার্কেটিং চ্যানেল ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তার ডিভাইসে আপনার ব্র্যান্ডের পুনরায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হলো ডায়নামিক রিমার্কেটিং। এটা হতে পারে আপনার ওয়েবসাইট ছেড়ে যাওয়ার পরে তাদের ফেসবুকে টার্গেট বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের মতো সহজ কোনো রিমার্কেটিং। অথবা প্রোমোটারের ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে তারা যে আইটেমগুলি দেখেছিল সেগুলির জন্যে তাদের ইনবক্সে পার্সোনালাইজড ডিসকাউন্ট কোড সেন্ড করার মতো জটিল রিমার্কেটিং।
এ ধরনের উদ্যোগের সাথে ডিসকাউন্ট বা প্রমোশনও অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এবং এমন সময়ে গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে, যাতে গ্রাহক তাৎক্ষণিকভাবে কেনাকাটা করতে উদ্বুদ্ধ হয়।
ইনফ্লুয়েন্সারদের সাথে পার্টনারশিপ গড়ে তুলুন-
টার্গেট অডিয়েন্স শনাক্তকরণ এবং ডায়নামিক রিমার্কেটিং-এর পাশাপাশি এই কৌশলটি বেশ ভাল কাজ করে। গ্রাহকদেরকে ভালোভাবে জানা এবং তাদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমে আপনি এমন ইনফ্লুয়েন্সারদেরকে বাছাই করতে সক্ষম হবেন, যারা উল্লেখযোগ্যভাবে আপনার পণ্যের প্রচার ও প্রসার বাড়াতে পারবে।
যেসব গ্রাহক আপনার পণ্যের সন্ধান করছে না, তারা আপনার বিজ্ঞাপন এড়ানোর জন্যে যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। তবুও তারা ফলো করেন, এমন কোনো ইনফ্লুয়েন্সারের চ্যানেলে যদি আপনার প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়, তাহলে তাদের তা দেখার সম্ভাবনা আছে।
ইউজার-জেনারেটেড কন্টেন্ট এক্সপ্লোর করুন-
আপনার বিদ্যমান গ্রাহকরা আপনাকে যেসব কন্টেন্ট দেয়, সেগুলিই ইউজার-জেনারেটেড কন্টেন্ট, যাকে ইউজিসি বলা হয়। আপনার ব্র্যান্ডের যদি অ্যাপ থাকে, তাহলে অ্যাপের রেটিংই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউজিসি। তিন চতুর্থাংশের বেশি মানুষ একটি অ্যাপ ডাউনলোড করার আগে রিভিউ পড়ে নেয়। অ্যাপ স্টোরে অ্যাপের ভিজিবিলিটি এবং প্লেসমেন্টের ক্ষেত্রেও রিভিউগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আপনার ক্যাম্পেইনগুলি ট্র্যাক করুন-
এটা হয়তো খুব আকর্ষণীয় কোনো মার্কেটিং কৌশল বলে মনে নাও হতে পারে, তবে পরবর্তী পরিকল্পনা তৈরির সময় আপনি প্রতিটি বিজ্ঞাপন থেকে যে ডেটা সংগ্রহ করেন, তা মূল্যবান হতে পারে।
প্রতিটি ক্যাম্পেইনের ফলাফল তুলনা করুন। কোনো চ্যানেলে যদি অন্য চ্যানেলের চেয়ে কম ট্রাফিক রেকর্ড হয়, তাহলে সেই চ্যানেলের বিজ্ঞাপনগুলি বন্ধ করে দিন এবং জনপ্রিয় চ্যানেলগুলির জন্যে বাজেট বাড়ান। এ ধরনের পদক্ষেপ আপনার ব্যবসার জন্যে লাভজনক হবে।
ডিমান্ড-ক্যাপচার ক্যাম্পেইনকে ডিমান্ড-জেনারেশন ক্যাম্পেইন থেকে আলাদা করুন-
আপনার মার্কেটিংকে অবশ্যই গ্রাহকের উপযোগী করে তৈরি করতে হবে। যে গ্রাহক ইতিমধ্যেই আপনার ব্র্যান্ডের প্রতি আগ্রহী এবং যে গ্রাহক আপনার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আগে কখনো শোনেনি, তাদের মধ্যে অনেক তফাৎ রয়েছে।
যারা আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে আগে কখনো শোনেনি, তাদের কাছে এমনভাবে মার্কেটিং করুন, যাতে তারা আপনার গ্রাহকে পরিণত হয়। আর পুরনো গ্রাহকদের কাছে এমনভাবে মার্কেটিং করুন, যাতে আপনার ব্র্যান্ডের প্রতি তাদের আগ্রহ আরো বাড়ে।
মাল্টিচ্যানেল মার্কেটিংয়রে ফলে প্রডাক্ট বিক্রয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। ফলে সফল ই-কমার্স ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলি এর সুবিধা নিচ্ছে।