একটা সময় ছিলো তখন আমরা অনেক ছোট আমার বাবার, দাদারা একটি জমির জন্য কতোই না ঘুরাঘুরি করতো দিনের পর দিন অযথা টাকা নষ্ট হতো কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হতো না। কিন্তু দিন যতই যাচ্ছে পরিবর্তন হচ্ছে প্রযুক্তি, আগে ছিলো ২জি এখন ৫জি তে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। দিনের পর দিন মানুষ প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে উঠছে এখন আর কাউকেই লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না। সব কিছু যখন ডিজিটাল তাহলে ভূমি মন্ত্রণালয় কেন অ্যানালগ থাকবে আর তাই ডিজিটাল বাংলাদেশের অনান্য ডিজিটাল সরকারি সেবার মধ্যে একটি অন্যতম সেকশন হচ্ছে ভূমি মন্ত্রণালয়। আপনি এখন ঘরে বসেই ইন্টারনেটের সাহায্য নিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবা ডিজিটাল ভাবে নিতে পারবেন। সেবাগুলো নেওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট Land Gov BD তে চলে যেতে হবে। সাইটে চলে যাবার পর হোমপেজে আপনি ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন ডিজিটাল সেবার নাম দেখতে পারবেন।
Land Gov BD সাইটের মাধ্যমে খতিয়ান যাচাই-
ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট (land gov bd) থেকে আপনি চাইলেই মাত্র কয়েক মিনিটেই মধ্যেই জমির খতিয়ান তথ্য বের করে নিতে পারবেন। তথ্য বের করে দেখা ছাড়াও সরাসরি সার্টিফাইড কপির জন্য আবেদনও করতে পারবেন। তাহলে চলুন জানি কিভাবে জমির খাতিয়ান কপিটি দেখবেন।
Land Gov BD সাইটে চলে যান এখানে ক্লিক করে। তারপর নিচের সেবার অপশনগুলোর থেকে “আর এস খতিয়ান” অপশনে ক্লিক করুন।
eporcha.gov.bd সাইটে আপনাকে রিডাইরেক্ট করে নিয়ে যাওয়া হবে। এখানকার সেবাগুলোর থেকে “খতিয়ান” সেবার উপর ক্লিক করুন।
অনলাইনে খতিয়ান দেখার জন্য বেশ কয়েকটি অপশন সহ একটি ফরম জাতীয় উইন্ডো আপনার সামনে আসবে। এখান থেকে আপনাকে প্রথমে বিভাগ নির্বাচন করতে হবে, জেলা নির্বাচন করতে হবে, খতিয়ান টাইপ নির্বাচন করতে হবে, উপজেলা, মৌজা সিলেক্ট করতে হবে।
সর্বশেষ অপশনে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে কোন তথ্যের উপর ভিক্তি করে খতিয়ান সার্চ করবেন। যেমন এখানে খতিয়ান নং, দাগ নং, মালিকানা নাম এবং পিতা/স্বামীর নাম এই অপশনগুলো দিয়ে আপনি চাইলে আপনার খতিয়ান সার্চ করতে পারবেন।
খতিয়ান নং দেওয়ার পর আপনাকে আপনার স্ক্রিণে দেখানো ক্যাপচা কোডটি সঠিক ভাবে এর পাশের ঘরে লিখতে হবে। আপনার বেলায় ক্যাপচা কোডটি র্যান্ডম থাকবে। ক্যাপচা দিয়ে “অনুসন্ধান করুন” বাটনে ক্লিক করুন।
খতিয়ান তথ্যটি আপনার সামনে চলে আসবে। এবার এখান থেকে “অনলাইন প্রিন্ট” বাটনে ক্লিক করুন। খতিয়ান কপিটি প্রিভিউ আকারে আপনার ব্রাউজারে চালু হবে নিচের মতো।
আপনি যদি খতিয়ানের আসল কপি পেতে চান তাহলে আপনাকে “আবেদন করুন” বাটনে ক্লিক করতে হবে। বিস্তারিত তথ্য চেয়ে একটি ফরম আসবে। যে খতিয়ানের জন্য আবেদন করছেন সেটার তথ্যগুলো উপরে দেওয়া থাকবে। খতিয়ান নকল টাইপ ঘরে “সার্টিফাইড কপি” অপশনটি সিলেক্ট করবেন।
তাহলে ডেলিভারীর প্রয়োজন ঘরটি চলে আসবে। এখানে আপনি খতিয়ান টি সাধারণ নাকি জরুরী ভাবে নিতে চান সেটা সিলেক্ট করে দিন। ডেলিভারি মাধ্যমে আপনি কিভাবে খতিয়ানটি পেতে চান সেটা সিলেক্ট করে দিন।
তারপর আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নং, আপনার নাম (ইংরেজিতে), ইমেইল, মোবাইল নাম্বার, ঠিকানা এই তথ্যগুলো পূরণ করুন। যোগফল প্রদান করুন ঘরটি একটি ক্যাপচার মতো। এখানে আপনার স্ক্রিণে যেটা দেওয়া থাকবে সেটা করে দিবেন।
পেমেন্ট বিবরণ অংশে কতদিনের মধ্যে খতিয়ানটি পাবেন, সম্ভাব্য প্রদানের তারিখ এবং মোট ফি কত সেটা দেখতে পাবেন। ফি প্রদানের জন্য আপাতত সরকারি একপে (Ekpay) অপশনটিই এখানে রাখা হয়েছে। সকল তথ্য দিয়ে “পরবর্তী ধাপ (পেমেন্ট)” বাটনে ক্লিক করবেন।
(Ekpay) উইন্ডো আসলে নিচের অপশনগুলোর থেকে “মোবাইল ব্যাংকিং” ট্যাবে ক্লিক করলে আপনি এই ফি কে বিকাশ, নগদ এবং রকেট দিয়ে প্রদান করতে পারবেন।
মৌজা ম্যাপ কিভাবে বের করতে হয়?
খতিয়ান এবং মৌজা ম্যাপ দুটি মিলেই একটি পূর্ণাঙ্গ রেকর্ড তৈরি হয়। কারণ জরিপের সময় খতিয়ান বা জমির মালিকানার বিবরণ ও জমির ম্যাপ / নকশা এক সাথেই তৈরি করা হয়। কেবল মাত্র জমির খতিয়ান দেখে জমি চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। খতিয়ানের মতোই মৌজা ম্যাপ আপনি ডিসি অফিসের রেকর্ডরুম থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। তবে ডিজিটাল সেবার মধ্যে থাকায় আপনি মৌপা ম্যাপকেও ঘরে বসে land gov bd সাইটের মাধ্যমে অনলাইনে দেখতে পারবেন।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট (land gov bd) য়ে চলে আসুন। হোম পেজের নিচের দিকে সেবার অপশনগুলোর থেকে “আর এস খতিয়ান” অপশনে ক্লিক করুন।
তারপর ”মৌজা ম্যাপ” সেবার উপর ক্লিক করুন।
এবার কোন স্থানের মৌজা ম্যাপ দেখতে চান সেটাকে বিভাগ > জেলা > উপজেল > মৌজা ইত্যাদি অনুসারে আপনাকে সিলেক্ট করে দিয়ে যেতে হবে এই ছবির মতো,
বিভাগ, জেলা, ম্যাপ টাইপ, উপজেলা, মৌজা দেওয়ার পর সবুজ রংয়ের “অনুসন্ধান করুন” বাটনে ক্লিক করুন।
মৌজা ম্যাপটি প্রিভিউ আকারে আপনার সামনে চলে আসবে। ছবিটির উপর রাইট ক্লিক করে Save Image as…অপশনের মাধ্যমে ছবিটি আপনার পিসিতে সেভ করতে পারেন। তবে প্রিভিউ হওয়ায় ম্যাপটির কোয়ালিটি খুবই নিম্নমানের দেওয়া হবে
মৌজা ম্যাপের উন্নত কপি বা হার্ডকপি / সার্টিফাইড কপি পাবার জন্য জেলা প্রশাসকের বরবর অনলাইনে আবেদন করতে হবে। এ জন্য “সার্টিফাইড কপি পেতে আবেদন করুন” লেখার উপর ক্লিক করতে হবে।
একটি ফরম চলে আসবে। এখানে যাবতীয় তথ্য সঠিকভাবে ইনপুট করুন। উল্লেখ্য যে “ডেলিভারীর প্রয়োজন” ঘরে সাধারণ কিংবা জরুরী যেকোনো একটিকে সিলেক্ট করতে পারবেন। জরুরী প্রয়োজনের দ্রুত ম্যাপটির দরকার হলে “জরুরী” অপশনটি টিক দিবেন, তবে জরুরী দিলে ফি এর পরিমাণ বেড়ে যাবে।
পেমেন্ট টাইপে শুধুমাত্র একপে দেওয়া রয়েছে তবে এটা দেখে ঘাবড়ে যাবেন না। একপে এর মধ্যে আপনি কার্ড / মোবাইল ব্যাংকিং/ ইন্টারনেট ব্যাংকিং / ওয়ালেট ইত্যাদির অপশনের সুযোগ পাবেন। পেমেন্ট করার জন্য সবুজ রংয়ের “>>পরবর্তী ধাপ (পেমেন্ট)” বাটনে ক্লিক করুন।
একপে এর পেমেন্ট অপশন থেকে আপনার সুবিধামতো পদ্ধতিতে ফি পে করে দিন। বিকাশ / নগদ / রকেট এর জন্য Mobile Banking ট্যাবে ক্লিক করতে হবে।
ই-নামজারি / অনলাইনে খারিজ আবেদন-
আজকের পোষ্টটি শেষ করবো ই-নামজারি সেবাটির মাধ্যমে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট Land Gov BD থেকে আপনি ই-নামজারি সিস্টেমের মাধ্যমে অনলাইনে নামজারির / খারিজের আবেদন করতে পারবেন। চলে যান ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে।
তারপর নিচের দিকের সেবাগুলোর মধ্যথেকে “ই-নামজারি” সেবার উপর ক্লিক করুন।
Mutation.land.gov.bd সাইটে আপনাকে নিয়ে যাওয়া হবে। নামজারি আবেদনের জন্য ক্লিক করার আগে নিচের দিকে স্ক্রল করে যাবতীয় নির্দেশনাবলী এবং কি কি লাগবে সেটা ভালো করে দেখে নিন।
বিষয়গুলো দেখার পর উপরের “নামজারির আবেদনের জন্য ক্লিক করুন” বাটনে ক্লিক করুন। নিচের মতো একটি বিস্তারিত বিশাল ফরম আসবে
একদম শুরু থেকে সকল ঘরগুলো ধীরে সুস্থে বুঝে শুনে পূরণ করুন। সকল তথ্য সঠিকভাবে দেওয়া হলে সবার শেষের “দাখিল” বাটনে ক্লিক করুন।
সঠিকভাবে তথ্যগুলো দিতে পারলে আবেদনটির একটি খসড়া প্রিভিউ আপনার মনিটরে পপআপ হয়ে আসবে। আবেদনটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আরেকবার ভালো করে দেখে নিন। তারপর “আমি/আমরা এই মর্মে ঘোষণা করছি যে,” এই বক্সে টিক দিন; এবং সর্বশেষে “দাখিল” বাটনে ক্লিক করে আবেদনটি সেন্ড করে দিন।
আবেদন সঠিক ভাবে সম্পন্ন হয়েছে এই মর্মে একটি কনফার্মেশন বার্তা দেখতে পারবেন। এখানে আবেদন নং দেওয়া থাকবে (যা চিত্রে হলুদ রং দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে)। এই আবেদন নং দিয়ে পরবর্তীতে আপনার খারিজ প্রক্রিয়াটি কোন পর্যায়ে আছে সেটা এই ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখতে পারবেন। আবেদনটি প্রিন্ট করার জন্য আলাদা বাটন দেখতে পাবেন।
এভাবেই ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে আপনি ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই নিতে পারবেন।