ব্রিকস অ্যান্ড ক্লিকস বিজনেস মডেল হলো ব্যবসার এমন এক পদ্ধতি, যেখানে অনলাইন ই-কমার্সের মাধ্যমে পণ্য বিক্রির পাশাপাশি দোকান বা শো-রুম থেকেও ক্রেতারা কোনো প্রতিষ্ঠানের পণ্য কিনতে পারে।
এখানে ‘ব্রিকস’ শব্দটা দিয়ে দোকান আর ‘ক্লিকস’ শব্দ দিয়ে অনলাইন ব্যবসাকে বোঝানো হয়। ব্যবসার এই মডেলকে ‘ক্লিক অ্যান্ড মর্টার’ বা ‘ক্লিকস অ্যান্ড ব্রিকস’ নামেও উল্লেখ করা হয়। ক্ষুদ্র বা মাঝারি ব্যবসায়ীরা নিজেদের ব্যবসা কীভাবে দুটি ভিন্ন প্ল্যাটফর্মে একই কৌশলে চালাবে, তা নিয়েই মূলত এই বিজনেস মডেল গড়ে উঠেছে। এই বিজনেস মডেলের সুবিধা হলো, এর মাধ্যমে পণ্য ক্রয়ের জন্যে ক্রেতাদের সামনে দুটি বিকল্প ব্যবস্থা খোলা থাকে। ফলে এই পদ্ধতিতে ব্যবসা করা প্রতিষ্ঠান অধিক সংখ্যক ক্রেতার কাছে নিজেদের প্রোডাক্ট পৌঁছে দিতে পারে। এতে তাদের বিক্রি যেমন বাড়তে থাকে, তেমন ব্র্যান্ডও আরো বেশি জনপ্রিয় হতে থাকে।
এই বিজনেস মডেলের মাধ্যমে সব ধরনের শিল্পের সব ধরনের পণ্য নিয়েই ব্যবসা করা সম্ভব। ধরা যাক, আপনার একটা দোকান রয়েছে। এখন আপনি চান অনলাইনে আপনার দোকানের পণ্য বেচতে। কিংবা এর উল্টাটাও হতে পারে। আপনার অনলাইনে ব্যবসা আছে আর এখন আপনি চাচ্ছেন দোকানের মাধ্যমে সরাসরি ক্রেতাদের কাছে পণ্য বিক্রি করবেন। উভয় ক্ষেত্রেই এই মডেল কার্যকরী। তবে এ পদ্ধতিতে ব্যবসায় নামার ক্ষেত্রে পণ্য অনুসারে পরিকল্পনা করাটা সবচেয়ে বেশি জরুরি।
প্রথমবারের মতো ব্রিকস অ্যান্ড ক্লিকস মডেল নিয়ে কাজ করাটা নিঃসন্দেহে যেকোনো ব্যবসায়ীর কাছেই চ্যালেঞ্জিং হবে। তবে এই কয়েকটা বিষয় মাথায় রাখলে এই মডেলে ব্যবসা পরিচালনা করাটা অনেক সহজ হয়ে আসবে।
১. সম্পূর্ণ বিক্রয় প্রক্রিয়ার গতি বাড়ানো-
কোথায় বা কীভাবে গ্রাহকদের কাছে পণ্য বিক্রি করছেন, সেটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আপনার সাফল্য নির্ভর করবে কত দ্রুত আপনি পণ্য বিক্রির কাজটা সারতে পারছেন, তার ওপর। এর মধ্যে পেমেন্ট প্রসেস, মালামালের স্টক বা সেলস টিম পরিচালনা করার মতো বেশ কিছু বিষয় যুক্ত। এসব কাজ আপনাকে অনলাইন এবং অফলাইন দুই জায়গাতেই করতে হবে।
২. আপনার ব্যবসার ব্র্যান্ডিংয়ের মান বাড়াতে হবে-
কীভাবে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছাবেন, সেটা আপনাকেই ঠিক করতে হবে। এজন্য একই সাথে অনলাইন এবং অফলাইনে ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে দুই জায়গাতেই ভিন্ন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করার চেষ্টা করতে হবে।
অফলাইনের ক্ষেত্রে দোকানের সাইনবোর্ড কোথায় থাকবে, কোন পণ্যগুলি ক্রেতাদের সামনে সাজানো থাকবে বা ক্রেতাদের চলাচলের জন্য কতখানি জায়গা থাকবে, এসব বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে হবে। আবার অনলাইনে নজর দিতে হবে যাতে প্রতিটা পণ্যের সুন্দর আর আকর্ষণীয় ছবি দেয়া হয়। একই সঙ্গে যাতে পণ্যের ব্যাপারে পরিষ্কার বর্ণনা দেয়া থাকে এবং ক্রেতারা যাতে সহজেই পণ্য অর্ডার করে কিনতে পারে, এমন বিষয়গুলি খেয়াল রাখতে হবে।
৩. দুই প্ল্যাটফর্মেই পণ্যের স্টকে সামঞ্জস্য রাখা-
ব্রিকস অ্যান্ড ক্লিকস মডেলের একটা বড় সুবিধা হলো এতে ক্রেতারা চাইলে অনলাইনে পছন্দ করা পণ্য দোকানে গিয়ে স্বচক্ষে দেখে আসতে পারেন। এজন্যে খেয়াল রাখতে হবে, যাতে ক্রেতারা দুই জায়গাতেই একই ধরনের প্রোডাক্ট দেখতে পায়। পাশাপাশি দুই প্ল্যাটফর্মেই স্টকের ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য রাখাটাও জরুরি।
৪. রিটার্ন পলিসি এবং ডেলিভারি পলিসি সহজ করা-
আমরা সবাই চাই পণ্য অর্ডার দেয়ার পর কম ঝামেলায় যাতে পণ্যটি হাতে আসে। আবার কোনো সমস্যা হলে যাতে সহজেই রিটার্ন পাওয়া যায়। তাই এখানেও এমন পলিসি নিশ্চিত করতে হবে। বিক্রিত পণ্যে কোনো সমস্যা থাকলে ক্রেতারা যাতে নিজ থেকে এসে বা কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠিয়ে রিটার্ন করতে পারে, সেই ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৫. আপনার অ্যাপ মোবাইলে ব্যবহারের উপযোগী করতে ভুলবেন না-
ই-কমার্সের জন্যে যে ওয়েবসাইট বা শপিং কার্ট সিস্টেম তৈরি করা হবে, সেগুলি যাতে মোবাইলে ব্যবহার করার উপযোগী হয়, সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখা দরকার। ক্রেতারা যেন সহজেই অনলাইন স্টোর ঘুরে ঘুরে পছন্দের পণ্য কিনতে পারে এবং ট্যাবলেট বা স্মার্টফোনের মতো মোবাইল ডিভাইসে যাতে সব প্রসেস সহজে সম্পন্ন করা যায়, সে বিষয়ে নজর রাখতে হবে।
৬. অ্যানালিটিক্স কাজে লাগানো-
অনলাইন স্টোরে ক্রেতাদের চাহিদা এবং পছন্দ বিবেচনায় এনে সেখান থেকে পাওয়া তথ্য এবং অ্যানালিটিক্স কাজে লাগিয়ে সেই অনুসারে কৌশল গ্রহণ করতে হবে। অ্যানালিটিক্স থেকে মোট বিক্রি এবং কাস্টমারদের চাহিদা সম্বন্ধে তথ্য জানা যাবে। আর এই তথ্য কাজে লাগিয়ে কার্যকর উপায়ে ব্যবসার প্ল্যানিং করা সম্ভব হবে।
৭. ক্রেতাদেরকে আরো বেশি করে সংযুক্ত করার চেষ্টা করা-
ব্রিকস অ্যান্ড ক্লিকস মডেলে ব্যবসা করার জন্য ক্রেতাদের ফিডব্যাক বা মতামত নিতে হবে। এবং এর মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠান এবং পণ্যের সাথে তাদেরকে আরো সংযুক্ত করার উপায় বের করতে হবে।
কারণ গ্রাহকরা যখন তাদের অভিমত জানাবে, তখন তাদের কাছ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যাবে। একইসাথে গ্রাহকদেরও নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে ভালো লাগবে যে, এই প্রতিষ্ঠান তাদের কথা শুনছে আর মূল্যায়ন করছে। এতে দীর্ঘমেয়াদে ব্র্যান্ডের প্রতি তাদের আস্থা বাড়বে।
যেমন আপনি ই-মেইলে একটা ছোট জরিপ পরিচালনা করলেন। চাইলে এই জরিপ অনলাইন এবং অফলাইন, দুই জায়গাতেই করা যায়। এই জরিপে যারা অংশ নিবে, তাদেরকে ডিসকাউন্ট বা প্রমোশন দিলেন। এমন বিভিন্ন পদ্ধতিতে আপনি ক্রেতাদের কাছ থেকে আপনার প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে তাদের মনোভাব জানতে পারবেন।
৮. আপনার ব্র্যান্ডকে তুলে ধরুন-
অনেকেই ভাবতে পারেন যে, অনলাইন আর অফলাইনে একই সঙ্গে ব্যবসা চালানো অনেক ঝামেলার কাজ। যেমন দোকানে আসা ক্রেতাদেরকে আপনি কীভাবে আপনার অনলাইন ব্যবসার কথা বলবেন। আবার কীভাবে আপনি দুই প্ল্যাটফর্মে একই পণ্যের বিজ্ঞাপন দেবেন বা কীভাবে অনলাইন-অফলাইন দুই জায়গাতে একই ধরনের ব্যান্ড ভ্যালু তৈরি করবেন।
ব্রিকস অ্যান্ড ক্লিকস মডেলে ব্যবসা করার জন্য আপনাকে এসব প্রশ্নের সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।