অনলাইনে সম্ভাব্য গ্রাহকদের সামনে নিজের প্রতিষ্ঠান তুলে ধরার অনেক পদ্ধতি রয়েছে। এসব পদ্ধতি কাজে লাগালে আরো বড় পরিসরে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বাড়ানো সম্ভব। এজন্যে পিপিসি, গুগল অ্যাডস, এসইও বা কনটেন্ট মার্কেটিংয়ের মতো পদ্ধতি কাজে লাগাতে পারেন। তবে এ ধরনের পদ্ধতি কাজে লাগাতে হলে অনেক টাকা খরচ করতে হতে পারে কিংবা ফল পেতে প্রচুর সময় লাগতে পারে।
আর ঠিক এই সমস্যা সমাধানের জন্যই রয়েছে অনলাইন বিজনেস লিস্টিং-এর ব্যবস্থা। বিজনেস ডাইরেক্টরিতে আপনার প্রতিষ্ঠানের নাম থাকলে এর মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন পৌঁছে দেয়া সম্ভব। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাইতে আপনি এগিয়ে যাবেন। বিনামূল্যে আপনার প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্ত করার জন্যে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে পারেন। এর মধ্যে অন্যতম ৫টি সাইট সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
১. গুগল মাই বিজনেস
গুগল হলো পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন। এই সাইটেই সবচেয়ে বেশি সার্চ করা হয়। আবার যারা সার্চ করেন, তাদের মধ্যে অনেকেই নির্দিষ্ট পণ্য বা সেবার জন্যে সঠিক সরবরাহকারীদের খুঁজে থাকেন। তাদের মধ্যে আপনার প্রতিষ্ঠানের সম্ভাব্য ক্রেতারাও রয়েছেন।
যারা সার্চ করবে, তারা যা খুঁজছে, তা যদি গুগল মাই বিজনেসের লিস্টে থাকা কোনো প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করে থাকে, তাহলে সার্চের ফলাফল হিসেবে সেই বিজনেস প্রোফাইল দেখানো হবে। গুগল মাই বিজনেসের উদ্দেশ্যই হলো এটা। এই প্লাটফর্মের মাধ্যমে আপনার ব্যবসার নাম, প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম, কতক্ষণ খোলা থাকে বা আপনার প্রতিষ্ঠানের ঠিকানার মতো খুঁটিনাটি তথ্য গুগল ম্যাপে সংযুক্ত করা যায়।
এছাড়াও, এর মাধ্যমে ভিজিটররা কাস্টমার রিভিউ দেখতে পারেন। এক জরিপে দেখা গেছে, ৮৪% ক্রেতা অনলাইনে দেখা রিভিউ বিশ্বাস করেন এবং কোনো কিছু কেনার সময় তারা কেমন রিভিউ পড়ছেন, তার ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেন।
২. ক্রাঞ্চবেইজ
‘ক্রাঞ্চবেইজ’ এর মূল লক্ষ্য হলো প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিজনেস বা স্টার্টআপের জন্যে ডেটাবেজ সংরক্ষণ করা। এই ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই নিজেদের ব্যবসার পরিসর বাড়াতে সঠিক বিনিয়োগকারীদের খোঁজ করে থাকে।
আজকের লেখায় যেসব সাইটের কথা আলোচনা করা হবে, সেগুলির তুলনায় ক্রাঞ্চবেইজে প্রতিষ্ঠানের নাম তালিকাভুক্ত করার পদ্ধতি বেশ আলাদা। তবে অন্যান্য সাইটের মতো ক্রাঞ্চবেইজেও আপনার প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা এবং কর্মী সংখ্যার মতো মৌলিক তথ্যগুলি উল্লেখ করতে হবে।
তবে ক্রাঞ্চবেইজ ব্যতিক্রম হওয়ার কারণ হলো এতে অনেক বাড়তি সুযোগ সুবিধা রয়েছে। যেমন, এর মাধ্যমে আপনি আপনার বোর্ড মেম্বারদের নাম যুক্ত করতে পারেন, আপনার কোম্পানি প্রোফাইলে গুরুত্বপূর্ণ কর্মীদের পরিচয় দিতে পারেন এবং যেকোনো সময় আপনার বিজনেস ইনফর্মেশন আপডেট করতে পারেন।
প্ল্যাটফর্মটি সম্পূর্ণ ফ্রি নয়। তবে ফ্রি অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেও অনেক কাজ করা যায়। যেমন-
◾ আপনার পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে ফলো করতে পারেন এবং কাস্টম অ্যালার্ট চালু করতে পারেন।
◾ যেমন ট্রাফিক ইনফরমেশন ও মোবাইল অ্যাপ অ্যানালিটিক্সের মতো প্রিমিয়াম ডেটা অ্যাকসেস করতে পারবেন।
◾ অসংখ্য কন্ট্রিবিউটরদের সাথে যুক্ত হতে পারবেন এবং আপনার ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক পেইজ এডিট করতে পারবেন।
৩. ইয়েল্প
ইয়েল্প প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৪ সালে। স্থানীয় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য অনেক বড় পরিসরের একটি অনলাইন বিজনেস ডাইরেক্টরি হলো ইয়েল্প। প্রতিমাসে এই সাইটে ১৭ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ ভিজিট করে। তাই আপনার ভিজিবিলিটি বাড়ানোর জন্যে এই সাইটে নিজের প্রতিষ্ঠানের নাম যুক্ত করতে পারেন।
এটি মূলত একটি কাস্টমার রিভিউ সাইট। তাই আপনার কাস্টমার সার্ভিস যত ভালো হবে, ইয়েল্প তত ভালো কাজ করবে। সাধারণত গ্রাহকরা এই সাইটে তাদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ব্যবসায়িক লেনদেনের রিভিউ লিখে থাকে।
৪. ফেসবুক
প্রতিদিন প্রায় ১৭০ কোটিরও বেশি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে। এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি খুব দ্রুতই বিরাট এক লোকাল বিজনেস ডিরেক্টরিতে পরিণত হয়েছে।
অন্যান্য সাইটের তুলনায় ফেসবুকে সেটআপ প্রক্রিয়া খুবই সহজ। আপনার বিজনেস পেইজ খুলতে আধা ঘণ্টার বেশি লাগবে না। পেইজ খোলার পরে নিয়মিত একটি নির্দিষ্ট সময়ে পোস্ট করতে হবে। ফলে ট্র্যাকশন বাড়বে। এছাড়াও আগে প্রোডাক্ট বিক্রি করেছেন, এমন ক্রেতাদের কাছ থেকে আপনার পেইজের রিভিউ সংগ্রহ করা শুরু করতে পারেন।
ফেসবুকে আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে পরিচিত করে তোলার প্রক্রিয়াটি বেশ দীর্ঘমেয়াদী। আপনাকে নিয়মিত ভালো মানের কনটেন্ট পোস্ট করতে হবে, যা আপনার অডিয়েন্সকে আকৃষ্ট করবে। এছাড়াও আপনি বুস্ট, পোস্টিং ফিচার বা ফেসবুক অ্যাডস ব্যবহার করে আপনার অডিয়েন্সের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারেন।
৫. গ্লাসডোর
গ্লাসডোর হলো কোনো প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তথ্য জানার জন্যে চাকরি প্রত্যাশীদের একটি প্লাটফর্ম। আর এজন্যই এই প্ল্যাটফর্মে আপনার প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত করা উচিৎ। ধরা যাক আপনার একটি প্রতিষ্ঠান বা ফার্ম আছে, বাজারে যেটা ভালো প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। আবার আপনার প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাও অনেক ইতিবাচক রিভিউ দেয়। ইতিবাচক রিভিউ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। কারণ এর মাধ্যমে আপনার সম্ভাব্য ক্রেতারা প্রভাবিত হতে পারে। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানের তুলনায় আপনি এগিয়ে যাবেন এবং লেনদেনও বৃদ্ধি পাবে।
বর্তমানে বিভিন্ন পদ্ধতিতে অনেক প্রতিষ্ঠান মার্কেটিং-এর পেছনে প্রচুর অর্থ খরচ করে। কিন্তু এজন্য আপনাকেও মার্কেটিংয়ের পিছনে অনেক টাকা খরচ করতে হবে, এমন কোনো কথা নেই।
এখানে যে ৫টি সাইটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তার মধ্যে যেকোনো একটি আপনি ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এগুলি খুবই কার্যকর এবং বিনা খরচে আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রচারণা বাড়াতে সাহায্য করবে।