ভার্চুয়াল জগতে পরিচয় শনাক্ত করার ক্ষেত্রে বর্তমানে ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি অনেক বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। মূলত মুখের ছবি বা ভিডিও’র মতো অন্যান্য অডিওভিজ্যুয়াল এলিমেন্ট দিয়ে কারো পরিচয় শনাক্ত বা যাচাই করাকে বলা হয় ফেসিয়াল ভেরিফিকেশন। সাধারণত কোনো অ্যাপ, সিস্টেম বা ডিভাইসে ঢোকার জন্য এই ভেরিফিকেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। মানুষের মুখ ও মাথার অবয়বকে বলা হয় ফেসিয়াল বায়োমেট্রিক প্যাটার্ন। বায়োমেট্রিক প্যাটার্নের এই তথ্য দিয়েই মূলত নির্দিষ্ট ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করা হয়।
এই প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রথমে কারো মুখ বা মাথার কিছু ইউনিক বৈশিষ্ট্য সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে সেগুলি কাজে লাগিয়ে পরিচয় যাচাই করা হয়।
ফেস রিকগনিশন সিস্টেম-
এই প্রযুক্তি কাজ করার জন্যে এমন ধরনের ডিভাইস দরকার হয়, যাতে ছবি তোলার ডিজিটাল প্রযুক্তি রয়েছে। এ ধরনের ডিভাইস দিয়ে বায়োমেট্রিক ফেসিয়াল প্যাটার্ন তৈরি করার মতো ছবি আর অন্যান্য তথ্য প্রসেস করা হয়।
অন্যান্য আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম, যেমন পাসওয়ার্ড, ইমেইল ভেরিফিকেশন বা ফিংগারপ্রিন্টের চাইতে ফেসিয়াল বায়োমেট্রিক সিস্টেম একটু আলাদা। এই সিস্টেমে কারো পরিচয় যাচাই করতে গাণিতিক ও ডাইনামিক প্যাটার্ন ব্যবহার করা হয়। ফলে প্রচলিত অন্যান্য সিস্টেমের তুলনায় এটি অনেক নিরাপদ ও বিশ্বাসযোগ্য।
যখন ফেস রিকগনিশন সিস্টেমে নতুন কারো ছবি আসে, সিস্টেম তখন এর মধ্যে থেকে ডেটা নিয়ে তার ডেটাবেজের সাথে মিলিয়ে দেখতে থাকে। এক্ষেত্রে বড় একটি চ্যালেঞ্জ হলো অনেক সময় এটি রিয়েল টাইম বা তাৎক্ষণিকভাবে চেক করতে হয়। তবে সব প্রতিষ্ঠানের বায়োমেট্রিক ফেসিয়াল রিকগনিশন সফটওয়্যারে তাৎক্ষণিকভাবে চেক করার ফিচার থাকে না।
সম্পূর্ণ ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রসেস দুই ভাবে কাজ করতে পারে। সম্পূর্ণ সিস্টেম কীভাবে কাজ করবে, সেটা নির্ভর করে কোন পরিস্থিতিতে এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হচ্ছে, তার ওপর। প্রথমত, ফেসিয়াল রিকগনিশন সিস্টেম যেকোনো চেহারা শনাক্ত করে নিবন্ধন করার জন্য। তারপর সেটিকে একটি পরিচয় বা আইডেন্টিটির সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এভাবে একটি চেহারা সিস্টেমে লিপিবদ্ধ বা রেকর্ড হয়। ফেসিয়াল রিকগনিশন সিস্টেমে এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ডিজিটাল অনবোর্ডিং।
অন্য আরেকটি প্রক্রিয়ায় ক্যামেরা থেকে যেই ডেটা সফটওয়্যারে আসে, সেটিকে রেকর্ড করা ডেটাবেজের সাথে মিলিয়ে দেখা হয়। যদি মুখের প্যাটার্ন পূর্বের আইডেন্টিটির সাথে মিলে যায়, তখন সিস্টেম অ্যাকসেস দেয়া হয়।
ফেস রিকগনিশন কীভাবে কাজ করে?
ফেস রিকগনিশন সিস্টেম টুডি ইমেজ গ্রহণ করবে না থ্রিডি ইমেজ গ্রহণ করবে, সেটা মূলত ডিভাইসের ওপর নির্ভর করে। তবে সিস্টেম সফলভাবে কাজ করার জন্যে ডিভাইসে ইন্টারনেট কানেকশন থাকাটা জরুরি। কারণ যে ডিভাইসের মাধ্যমে ছবি তোলা হয়, সাধারণত সেখানে ডেটাবেজ থাকে না। ডেটাবেজ থাকে সার্ভারে। আর সার্ভারের সাথে যোগাযোগের জন্য ইন্টারনেট কানেকশন দরকার হয়। পরবর্তীতে সফটওয়্যারের মাধ্যমে কোনো ধরনের ভুল ছাড়াই গাণিতিক ভাবে পরিমাপ করে মুখের আইডেন্টিটি মিলিয়ে দেখা হয়।
আবার ফেস রিকগনিশন সিস্টেমে এআই এবং মেশিন লার্নিং প্রযুক্তিও প্রয়োগ করা হয়। যার কারণে ফেস রিকগনিশন সিস্টেম অনেক নির্ভুল আর নিরাপদ ভেরিফিকেশন সিস্টেম হিসেবে সব জায়গায় ব্যবহৃত হচ্ছে। তাছাড়া উপরে আলোচনা করা সব ধরনের পদ্ধতি একসাথে করার মত অ্যালগরিদম থাকার ফলেই কাজগুলি রিয়েল টাইমে করা সম্ভব হয়।
যেসব ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় বায়োমেট্রিক ফেসিয়াল রিকগনিশন-
- সেকেন্ড অথেন্টিকেশনের জন্য, যখন এক্সট্রা সিকিউরিটির ব্যাপার থাকে, তখন আরেক স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়
- মোবাইলের অ্যাপে পাসওয়ার্ড ছাড়া ঢোকার জন্য
- কোনো অনলাইন সার্ভিসে পুনরায় লগ ইন করার জন্য
- অনলাইনে বা সরাসরি পেমেন্ট করার জন্য
- ডিভাইস লক বা আনলক করতে
- এয়ারপোর্ট বা হোটেলে চেক-ইন করতে