প্রসেসর কি?
প্রসেসর বা সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট- হচ্ছে এক প্রকার ইন্টিগ্রেটেড ইলেকট্রনিক্স সার্কিট যা কম্পিউটারে হিসেব-নিকেষ, ইনপুট-আউটপুট, সিস্টেম অপারেশন সহ যাবতীয় সব কাজ করে থাকে।
ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস এর অন্যান্য ফাংশনগুলো প্রসেসর এর কমান্ড এর উপর নির্ভর করে । তাই প্রসেসরকে ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস গুলোর ব্রেইন বলা হয়ে থাকে। প্রসেসর-এর দেখা প্রায় সব ধরনের মরডান ডিভাইসগুলোতে পাওয়া যায়। ইলেকট্রনিক ডিভাইস যেমন কম্পিউটার, স্মার্টফো্ ল্যাপটপ, স্মার্ট ওয়াচ এমনকি এয়ারপডেও।
প্রসেসর কিভাবে কাজ করে?
প্রসেসর এর কাজ হচ্ছে যেভাবে ইনপুট করা হয়েছে সে অনুযায়ী কাজ সম্পাদন করে আউটপুট সৃষ্টি করা। শুরুতেই একটু বলে রাখি ইনপুট ডিভাইস গুলো হচ্ছে কিবোর্ড, মাউস ইত্যাদি। আউটপুট ডিভাইস গুলো হচ্ছে প্রিন্টার, স্ক্রিন(আপনার দেয়া যে কোন কমান্ড এর ফলাফল দেখানোর জন্য)। ধরুন আপনি কম্পিউটারে বা মোবাইলে একটি শব্দ লিখলেন সেটি ইনস্ট্যান্ট র্যাম এবং রম-এর মাধ্যমে প্রসেস হয়ে সিপিইউ কে জানাবে। সিপিইউ ইনপুট-কে বোঝার চেষ্টা করবে।
মাদারবোর্ড ইনপুট এবং আউটপুট ডিভাইস গুলোকে সংযুক্ত করে রাখে। কি-বোর্ডের কোন কোন সুইচগুলো প্রেস করা হয়েছে প্রসেসর এক্ষেত্রে প্রত্যেকটি কমান্ড পর্যালোচনা করে সে আউটপুট তৈরি করবে এবং স্ক্রিনে প্রেরণ করবে। সিপিইউ তার কাজটি সম্পাদনের ক্ষেত্রে ফেচ (Fetch) ডিকোড (Decode) এবং এক্সিকিউট (Execute) এই ইনস্ট্রাকশনস গুলো ফলো করে।
ফেচ- ফেচ এর মাধ্যমে সিপিইউ প্রথমে র্যাম থেকে প্রয়োজনীয় কমান্ড গুলো গ্রহণ করে থাকে।
ডিকোড- ডি কোড সব ধরনের ইন্সট্রাকশন গুলোকে কম্পিউটারের বোধগম্য সিগনালে কনভার্ট করা থাকে
এক্সিকিউট- এরপর প্রত্যেকটি কমান্ডকে সিগন্যাল-এ রূপান্তর করে। পরবর্তীতে সঠিক কম্পোনেন্টটি নির্বাচন করে উক্ত কম্পোনেন্ট যে ধরণের কাজ সম্পাদন করতে পারবে, তাকে ঐ ধরনের কাজগুলো প্রেরণ করা হয়। যাতে সিপিউ’র সব ধরনের ফাংশন সঠিকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হয়।
এছাড়াও আরও কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা হলো- যা সিপিইউ কে আরো ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে। যেমন-
কোর- কোর প্রসেসর স্পিড টা কে ত্বরান্বিত করে। যত বেশি কোর থাকবে ততো দ্রুত প্রসেসর কাজগুলো সম্পাদন করতে পারবে। এটি অনেকটা গণিতের চৌবাচ্চার নলের মধ্যে দিয়ে পানি নির্গত হওয়ার সমস্যা গুলোর মতো। অর্থাৎ যত বেশি নল থাকবে, তত দ্রুত চৌবাচ্চা থেকে পানি নিষ্কাশন হয়ে যাবে। ঠিক একই ভাবে প্রসেসর পুরো কাজ সম্পাদন করে থাকে। যদি কোর বেশি হয়, তাহলে কাজের গতি থাকবে।
ক্লক- ক্লক মূলত প্রসেসরের ফ্রিকোয়েন্সি নির্ধারণ করে। এই ফ্রিকোয়েন্সি মাপা হয় Hz মাধ্যমে। অর্থাৎ এটি ক্লকের মত মতই ঘূর্ণায়মান থাকে যা নির্দিষ্ট সময়ে কত দ্রুত কাজটি সম্পাদন করতে পারে তা পরিমাপ করা যায়। ধরুন আপনার প্রসেসর .২-গিগাহার্জ। এর মানে হচ্ছে ক্লক টি সেকেন্ডে প্রায় 2 বিলিয়ন বার ঘুরে প্রসেসর এর কাজ সম্পাদন করতে পারে। গিগাহার্জ যত বেশি হবে, তত কম সময়ে প্রসেসর কাজটি সম্পাদন করতে পারবে।
ক্যাশ- ক্যাশ হচ্ছে প্রসেসরকে সাহায্যকারী এক প্রকার ইনস্ট্যান্ট মেমোরি। ক্যাশে যদি ডাটা স্টোর করা থাকে, তাহলে প্রসেসর এর জন্য ওই স্পেসিফিক কাজটি করা আরো তাড়াতাড়ি সম্ভব হয়ে ওঠে। ক্যাশ যত বেশি ডাটা ধরে রাখতে পারবে, প্রসেসর ততো দ্রুত কাজটি সম্পাদন করতে পারবে। প্রসেসরর গতি বৃদ্ধির জন্য ক্যাশের ভূমিকা রয়েছে।
বাজারে যে সকল প্রসেসর এর কথা শুনতে পাওয়া যায়-
কম্পিউটার প্রসেসর
কম্পিউটারের জন্য বাজারে দুই ধরনের প্রসেসর পাওয়া যায়। ইন্টেল এবং এএমডি। দুটো’র ভালো জনপ্রিয়তা রয়েছে মার্কেটে। আমাদের দেশে বিশেষ করে ইন্টেলের প্রতি মানুষের অনেক আগে থেকে পরিচয় থাকার কারণে অনেকে প্রসেসর বলতে শুধু ইনটেলকে বোঝে থাকেন। তবে ইদানিং কালে এএমডি প্রসেসর গুলো অনেক বিক্রি হচ্ছে বলে বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এএমডি এর প্রসেসর গুলো দামে ইন্টেলের প্রসেসর থেকে কম হওয়ার কারণে হয়তো এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।
AMD- এএমডি প্রসেসর গুলো ব্যবহার করতে হলে এএমডি প্রসেসর সাপোর্টেড মাদারবোর্ড গুলো কিনতে হয়। এক্ষেত্রে ইন্টেল মাদারবোর্ড দিয়ে কম্পিউটার রান করা সম্ভব হয় না। তাই কম্পিউটার কেনার শুরুতে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলা উচিত । এই প্রসেসরগুলো মূলত হাই-এন্ড গেমিং এর জন্য তৈরি। অর্থাৎ যারা গেম বেশি পছন্দ করে তারা রাইজেনের সাধ্যের মধ্যে সবচেয়ে দামি প্রসেসরগুলো ব্যবহার করে ভালো ফল পেতে পারেন।
Intel- দেশে ইন্টারনেট ভালো পরিচিতি থাকার ফলে এবং দীর্ঘদিন কম্পিউটার কে সাপোর্ট দেয়ার কারণে ইন্টেলের প্রতি একটা একপ্রকার বিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে যা এখনো ইন্টেলকে বাজারে বিদ্যমান অন্য প্রসেসর কোম্পানি থেকে এগিয়ে রাখতে সাহায্য করে। তবে যদি ভ্যালু-ফর-মানি চিন্তা করা হয়, তাহলে ইন্টেল কিছু ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকবে। আবার কিছু ক্ষেত্রে অনেক ভালো পারফর্মেন্স দিতে পারবে। এটা মূলত ডিপেন্ড করে কে কোন ধরনের কাজের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
মোবাইল প্রসেসর-
বর্তমানে জায়েন্ট মোবাইল কোম্পানিগুলো নিজেদের তৈরী প্রসেসরগুলো ব্যবহার করা শুরু করে দিয়েছে। তবে জনপ্রিয় দুটি মোবাইল প্রসেসর কোম্পানি হচ্ছে কোয়ালকম এবং মিডিয়াটেক। কোয়ালকম এর দেখা মেলে হাই-এন্ড পারফরম্যান্সিং ফোন গুলোর মধ্যে। আর মিডিয়াটেক প্রসেসর ব্যবহার করা হয় কমদামি বা লো-পারফরম্যান্সিং ফোন গুলোর মধ্যে।
অ্যাপল, স্যামসাং, এবং হুয়াওয়ে প্রত্যেকের নিজস্ব প্রসেসর রয়েছে। অ্যাপলের রয়েছে বায়োনিক চিপ, স্যামসাংয়ের রয়েছে ইক্সিনোস এবং হুয়াওয়ে’র রয়েছে কিরণ।
স্মার্ট ওয়াচ প্রসেসর-
বর্তমানে এয়ার ফোন গুলোতে প্রচুর পরিমানের সুবিধা সংযুক্ত করা হয়েছে। ‘Hey Siri, বা Hey Google’ এর মত নানা ধরনের ফিচার যুক্ত করা হয়েছে। অ্যাক্টিভ নইসে ক্যান্সলেশন থেকে শুরু করে স্মার্ট কন্ট্রোল, অ্যাম্বিয়েন্ট অ্যাওয়ারনেস, অ্যাডাপ্টিভ ডুয়াল মাইক্রোফোন সহ আরও নানান রকম কাজ করা সম্ভব। এ ধরনের কাজগুলো করতে গেলে নির্দিষ্ট প্রসেসর এর প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে অ্যাপল এবং স্যামসাং প্রত্যেকে তাদের ডিভাইসগুলোতে নিজস্ব প্রসেসর ব্যবহার করে থাকে।
প্রসেসর গুলোকে বলা হয় ডিভাইজের ব্রেইন। কারণ এই প্রসেসর এর মধ্য থেকেই পুরো ডিভাইস টি কিভাবে সম্পাদিত হবে তার প্রত্যেকটি বিষয় নির্ধারণ করা হয়। প্রসেসরটি মাদারবোর্ড এর মাধ্যমে প্রত্যেকটি কম্পোনেন্ট এর সাথে সংযুক্ত থাকে। ইনপুট ডিভাইসের মাধ্যমে কমান্ড নিয়ে আউটপুটসৃষ্টি করতে প্রসেসর এর জুড়ি নেই।
প্রসেসরগুলো তাৎক্ষণিকভাবে ভাবো যে কোন কমান্ডকে প্রসেস করে আউটপুট সৃষ্টি করতে পারে। যেমন বর্তমান সময়ে স্মার্টফোনগুলোতে বয়েস কন্ট্রোলের মাধ্যমে টাইপ করা সম্ভব হয় যা একমাত্র প্রসেসর এর কারণে সম্ভব হচ্ছে। প্রথমে ডিভাইসটি মাউথ স্পিকারের মাধ্যমে ইউজার কি কি ইনফরমেশন দিচ্ছে সবগুলো ইনপুট করে নেয় এবং প্রসেসর কমান্ডগুলোকে প্রিসাইজলি প্রসেস করে তারপর ডিসপ্লেতেও শো-করে। এই লম্বা কাজগুলো সহজ করে দেয় একমাত্র প্রসেসরগুলো।
যেকোনো ধরনের ডিভাইস সিলেকশন এর ক্ষেত্রে প্রসেসর এর গুরুত্ব সর্বাধিক হওয়া উচিত। কারণ প্রত্যেকটি ডিভাইস ব্যবহৃত প্রসেসরটি কাজের গতি বৃদ্ধি এবং হ্রাস করতে ভূমিকা রাখে। হোক সেটি মোবাইল, কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপ। যে ধরনের ডিভাইস ইলেকশন থাকুক না কেন প্রসেসর সঠিকভাবে নিরূপণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।