প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জনের সবচেয়ে অসাধারণ দিকটি হলো, একবার এ বিষয়ে শেখা শুরু করলে তা অবিরাম চলতে থাকে। আবার যেকোনো ক্ষেত্রেই পুরো প্রক্রিয়ার একটি অংশ কীভাবে কাজ করে, তা একবার বুঝে গেলে পরের অংশগুলি বুঝে নিতে খুব বেশি কষ্ট হয় না।
টেক ইন্ডাস্ট্রি’র সাথে সরাসরি যুক্ত না থাকলেও প্রযুক্তির কিছু ক্ষেত্রে সবারই দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োজন। কারণ এই স্কিল বা দক্ষতাগুলি বিভিন্ন ভাবে আমাদের জীবনকে সহজ করে তুলতে পারে।
১. এই দক্ষতাগুলি আমাদের সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বাড়ায়-
এক অর্থে কোডিং-এর মানেই হলো প্রবলেম সলভিং বা সমস্যার সমাধান। কোডিং করতে বসলে আপনাকে কোনো সমস্যার একটি সমাধান বের করা লাগবে। তারপরে সেই সমাধানটি নিখুঁত হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা লাগবে, যেন বাড়তি কোনো সমস্যা না থাকে। এছাড়াও সমাধানটি আরো নিখুঁত করে তোলার কোনো সম্ভাব্য উপায় রয়েছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে। যদি থাকে, তাহলে আরো ভালো কোনো সমাধান তৈরি করতে হবে। অর্থাৎ, এই প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপই হলো সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা।
প্রবলেম সলভিং স্কিল বা সমস্যা সমাধানের দক্ষতা হলো একটি সর্বজনীন দক্ষতা। আমাদের কাজের ক্ষেত্র যাই হোক না কেন, এই দক্ষতাকে আমরা আমাদের জীবন ও কর্মক্ষেত্রের প্রতিটি পর্যায়েই কাজে লাগাতে পারি। একটি সমস্যা খুঁজে বের করে তা বিশ্লেষণ করা থেকে শুরু করে এর সমাধান খুঁজে বের করা, তারপরে সেই সমাধানকে পরীক্ষানিরীক্ষা করে আরো নিখুঁত করে তোলার মাধ্যমে যে দক্ষতা অর্জন করা যায়, তা আমাদের সবারই জানা থাকা প্রয়োজন।
২. প্রযুক্তি ব্যবহার সহজ হয়ে যায়, যখন আমরা এটিকে বুঝতে পারি-
আমাদের স্মার্টফোনে প্রায়ই এমন অনাকাঙ্ক্ষিত সব সমস্যা দেখা দেয়, যা আগে কখনো হয় নি এবং আমরা জানিও না কীভাবে এর সমাধান করতে হবে। অথবা কম্পিউটারে কোন একটি সহজ কাজ করতে গিয়েও আমরা অনেক সময় হিমশিম খেয়ে যাই।
অথচ আমরা যদি বুঝতে পারি প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে, তাহলে প্রযুক্তি সংক্রান্ত অনেক সমস্যাই আমাদের কাছে আর খুব বেশি জটিল বলে মনে হবে না। কোডিং জানলেই যে আপনি আপনার স্মার্টফোনের খুঁটিনাটি সব জেনে যাবেন, এমন নয়। কিন্তু প্রযুক্তি নিয়ে কিছু প্রাথমিক ধারণা থাকলে সমস্যাগুলিকে আমরা আরো ভালভাবে বুঝতে পারবো। নির্দিষ্ট কোনো বিষয় বুঝতে শিখলে দেখা যাবে পরেরগুলি সহজেই বুঝে নেয়া যাচ্ছে।
৩. নিজেই সমস্যার সমাধান করে টাকা সাশ্রয় করা যায়-
আমাদের কম্পিউটার কাজ না করলে আমরা সাধারণত নিজে সেটা ঠিক না করে সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে যাই। আর অনেক সময় সমস্যা জটিল হয়ে যায়। তখন অনেকেই হতাশার মধ্যে পড়ে যান।
তবে যদি আপনার প্রযুক্তি বিষয়ে কিছু জ্ঞান ও দক্ষতা থাকে, তাহলে আপনি নিজেই অনেক সমস্যা খুঁজে বের করে নিজেই তার সমাধান করতে পারবেন। আপনার যদি প্রাথমিক জ্ঞানটুকু থাকে, আর আপনি যদি প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত থাকেন, তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান আপনি নিজেই করে নিতে পারবেন। এছাড়া কম্পিউটারে সমস্যা দেখা দিলে গুগল সার্চ করেই অনেক সমাধান বের করা সম্ভব।
৪. এগুলি আপনার নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে-
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই এখন কোনো না কোনোভাবে প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। অনেক প্রতিষ্ঠানেরই তাই নিজস্ব একটি ডিপার্টমেন্ট থাকে, যা ওয়েব ডেভেলপমেন্ট সহ অন্যান্য প্রযুক্তিগত সমস্যাগুলি নিয়ে কাজ করে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান অন্য কোনো এজেন্সিকে দায়িত্ব দেয় এই সমস্যাগুলি সামাল দেয়ার জন্যে।
নিজস্ব ডিপার্টমেন্ট বা বহিরাগত এজেন্সি, যাই হোক না কেন, একজন ম্যানেজার বা সিইও-কে এদের সাথে দক্ষতার সাথে কাজ করতে হবে। আর আপনার যদি বিন্দুমাত্র ধারণা না থাকে এই ডিপার্টমেন্ট বা এজেন্সিগুলি কী নিয়ে কাজ করছে, তাহলে কার্যকর উপায়ে এদের সাথে কাজ করাটা খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
তাই যদি প্রযুক্তি বিষয়ে আপনার প্রাথমিক ধারণা থাকে, তাহলে আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে আরো দক্ষতার সাথে সম্পৃক্ত হতে পারবেন। প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তি ডিজাইন ও ডেভেলপ করায় নিয়োজিতদের কাজে সমন্বয় এনে তাদেরকে সাহায্য করতে পারবেন।
৫. এই দক্ষতা আপনাকে আরো ভালো সহকর্মী হতে সাহায্য করে-
অনেক ডিজাইনার ও ডেভেলপার রয়েছেন, যারা একাই কাজ করতে পছন্দ করেন। তবে যত দিন যাচ্ছে, ইন্টারনেটের দুনিয়া ততই জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠছে। তাই এককভাবে কাজ না করে অনেকেই এখন দলবদ্ধভাবে ডিজাইন বা ডেভেলপ করার কাজে যোগ দিচ্ছেন।
ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পে একে অপরকে সহযোগিতা করা প্রযুক্তির দুনিয়ায় খুবই সাধারণ একটি ব্যাপার। আর এইসব প্রকল্পে আপনি অন্যদের সাহায্য করতে গিয়ে যেসব দক্ষতা অর্জন করবেন, তা আপনার জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও কাজে আসবে। যখন আপনি কোনো ডেভেলপারের সাথে মিলে কোনো কোড ট্রাবলশুট করবেন বা অনেক ডিজাইনার ও ডেভেলপারদের সাথে কোনো প্রকল্পে কাজ করবেন, তখন জীবনের অন্য যেকোনো ক্ষেত্রেই দলগতভাবে কাজ করাটা অনেক সহজ হয়ে আসবে।
৬. আপনার ভবিষ্যৎ আরো নিরাপদ থাকবে-
প্রতিটি কাজ ও কর্মক্ষেত্রই সময়ের সাথে সাথে আরো বেশি প্রযুক্তিকেন্দ্রিক ও প্রযুক্তি-নির্ভর হয়ে উঠছে। কৃষি থেকে শুরু করে শিক্ষা, সব ক্ষেত্রেই এখন দৈনন্দিন কাজে প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। এটি নিশ্চিত যে, যাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা রয়েছে এবং যারা প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত, তাদের জন্য বর্তমানে পরিবর্তনশীল এই সময়ের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়া অনেক সহজ।
কোডিং করতে জানলেই যে আপনি কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট সব ধরনের প্রযুক্তির ওপর বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠবেন, এমন নয়। কিন্তু কোডিং শিখতে পারলে নিঃসন্দেহে প্রযুক্তি ব্যবহারে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন। সেই সাথে আপনার কাজে লাগবে, এমন প্রযুক্তির ব্যবহার শিখতেও আপনাকে সাহায্য করবে।
৭. আপনাকে পরিপূর্ণ করে তুলবে-
নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে পরিপূর্ণ দক্ষতা ও জ্ঞান আপনার পেশাগত ও ব্যক্তিগত, উভয় জীবনেই কাজে আসবে। যে কাজের জন্যই আবেদন করুন না কেন, আপনার সিভিতে প্রযুক্তি সংক্রান্ত বেশ কিছু দক্ষতার ব্যাপারে উল্লেখ থাকলে যেকোনো নিয়োগকর্তার কাছেই আপনাকে বেশি আকর্ষণীয় মনে হবে।
মোটকথা, যত দিন যাচ্ছে, মানুষ তত বেশি করে প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। তাই প্রযুক্তি সম্বন্ধে ন্যূনতম ধারণাটুকু আমাদের সবারই থাকা প্রয়োজন। এই প্রাথমিক ধারণাই ভবিষ্যতে ব্যক্তিগত এবং পেশাগত পর্যায়ে অনেক কাজে লাগবে।