প্রযুক্তি এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে নির্মাণ শিল্পের অবস্থাও বদলে যাচ্ছে। তাই বর্তমানে বাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে চায়, নির্মাণ শিল্পের এমন যেকোনো প্রতিষ্ঠানেরই উচিৎ তাদের কাজের প্রক্রিয়াগুলি আধুনিক করে তোলা। কেননা, এর ফলে তারা বাস্তব এবং ব্যবহারিক দিক দিয়ে অনেক সুবিধা পেতে পারবে। আর এটা করার জন্যে যেকোনো প্রতিষ্ঠানের কাজের কৌশল এবং কর্মপ্রবাহে নতুন পদ্ধতির সমন্বয় তৈরি করা জরুরি।
ভবিষ্যতে নির্মাণ শিল্পের কাজের ধরন এবং প্রকল্প কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, সেই পদ্ধতি ব্যাপকভাবে বদলে দিচ্ছে বেশ কিছু প্রযুক্তি।
ডেটা কালেকশন অ্যাপ-
ট্যাবলেট এবং স্মার্টফোনের মতো ডিভাইস সহজেই যেকোনো জায়গায় বহন করে নিয়ে যাওয়া যায়। এতে করে যোগাযোগ এখন অনেক সহজ হয়ে এসেছে এবং যেকোনো জায়গা থেকেই কাজ করা সম্ভব হয়ে উঠেছে। ফলে সঙ্গত কারণেই অন্যান্য শিল্পের মতো নির্মাণ শিল্পেও বিভিন্ন অ্যাপের ব্যবহার বাড়ছে। আরও নির্দিষ্টভাবে বললে, ডেটা কালেকশন অ্যাপের সাহায্যে নির্মাণশিল্পের প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের কাজের সাইট থেকে আরও দ্রুত, যথাযথ এবং উচ্চ মানের ডেটা সংগ্রহ করতে পারছে।
ড্রোন-
বর্তমানে যেসব নির্মাণ প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, তার মধ্যে সবচেয়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত প্রযুক্তি হলো ড্রোন। মাটিতে থাকা কর্মীদের তুলনায় দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে সাইট সার্ভে করতে পারে ড্রোন। এছাড়াও প্রচলিত ‘এরিয়াল ইমেজিং’ পদ্ধতির তুলনায় অনেক কম খরচেই ড্রোন ব্যবহার করে কাজ করা যায়। ড্রোনে থাকা উচ্চ রেজুল্যুশনের ক্যামেরা এবং সংগৃহীত ডেটা দিয়ে সহজেই ইন্টারঅ্যাক্টিভ থ্রিডি বা টপোগ্রাফিক্যাল মানচিত্র এবং মডেল তৈরি করা যায়। আবার নির্মাণ সাইটের আয়তন পরিমাপের জন্যও ড্রোন ব্যবহার করা যায়।
ড্রোন ব্যবহারের আরেকটি সুবিধা হলো, ব্রিজ বা উঁচু ভবনের মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনার আশেপাশে সহজে এবং নিরাপদে পরিদর্শন করা যায়।
বিল্ডিং ইনফরমেশন মডেলিং (বিআইএম) সফটওয়্যার-
বিআইএম সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে কাজের মধ্যে সমন্বয় আনার সুযোগ আরো বাড়ে। এতে সাইটের বিভিন্ন অংশে কাজ করা কর্মীরা একই মডেল অনুসরণ করতে পারেন। এভাবে যেকোনো মডেল অনুসরণ করে দ্রুত কাজ করা যায়। এতে কাজের প্রক্রিয়া যেমন সহজ হয়ে আসে, তেমনি কর্মীরাও আরো দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারেন। প্রকল্পের বিভিন্ন ধরনের কাজের মধ্যে যাতে সংঘর্ষ না হয়, তা নিশ্চিত করা যায় বিআইএম সফটওয়্যারের সাহায্যে। এছাড়াও এর সাহায্যে কাজের পদ্ধতি স্বয়ংক্রিয় করা এবং প্রকল্পের আরো পূর্ণাঙ্গ চিত্রও তৈরি করা যায়। মোটকথা, বিআইএম সফটওয়্যার প্রকল্পের নকশা এবং পরিকল্পনা পর্যায়ের নানান সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে।
ভার্চুয়াল রিয়ালিটি-
জটিল বিভিন্ন প্রকল্প আরো ভালোভাবে বুঝতে বর্তমানে বিআইএম-এর সাথে ভার্চুয়াল রিয়ালিটি প্রযুক্তির সমন্বয় এনে ব্যবহার করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ভবিষ্যতের সম্ভাবনার কথা ভাবুন। অদূর ভবিষ্যতেই বিআইএম-এর সাহায্যে একটি স্থাপনার ডিজাইন তৈরি করার পরে ভার্চুয়াল রিয়ালিটি ব্যবহার করে এর চারপাশে হাঁটা সম্ভব হবে।
থ্রিডি প্রিন্টিং-
নির্মাণ প্রযুক্তি হিসেবে থ্রিডি প্রিন্টিং এর সম্ভাবনা অনেক। নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত উপাদানের সোর্সিং বদলে দিতে পারে এই প্রযুক্তি। এর সাহায্যে কোনো প্রকল্পের জন্যে নির্মাণ উপকরণগুলি প্রিন্ট করে সহজেই কাজের সাইটে পরিবহন করা যাবে এবং সাথে সাথেই সেগুলি ব্যবহার করা যাবে।
ফলে প্রয়োজনের সময় দ্রুত নির্মাণ উপকরণ হাতে পাওয়া সম্ভব হবে। একইসঙ্গে নির্মাণ উপকরণের উৎপাদন থেকে শুরু করে ব্যবহার পর্যন্ত মাঝখানের অতিরিক্ত পদক্ষেপগুলি বাদ দিয়ে পুরো প্রক্রিয়া আরো সহজ করা যাবে।