আমরা অনেকেই কম্পিউটার কেনার সময় এর অন্যান্য কনফিগারেশন এর দিকে খেয়াল রাখলেও এর মনিটরের দিকে কিন্তু তেমন গুরুত্ব দেই না। কিন্তু এটি যে কম্পিউটারের গুরুত্বপূর্ণ পার্টগুলোর একটি সেটি আমরা ভুলে যাই।
ভালো একটি ডেস্কটপ কনফিগারেশন বানানোর সময় আমরা কম্পিউটারের অন্য সব কম্পোনেন্ট গুলোর দিকে নজর দিলেও মনিটরের দিকে তেমন একটা গুরুত্ব দেই না।
একজন প্রফেশনাল কম্পিউটার ব্যবহারকারীর জন্য একটি ভালো মনিটর খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তাদের জন্য এমন মনিটর দরকার যা তাদের ঘাড় ও দৃষ্টিশক্তির ওপর কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে না।
ভালো গেমিং এক্সপিরিয়েন্স এর পাশাপাশি গ্রাফিক্স ডিজাইন ও ভিডিও ভিউয়িং এক্সপিরিয়েন্স এর জন্য ভালো একটি মনিটরের কোনো বিকল্প নেই।
এজন্য নতুন ডেস্কটপ পিসি কেনার আগে কম্পিউটার মনিটর এর দিকে নজর দেয়া জরুরি।
তবে এর আগে মনিটর সম্পর্কে আমাদের কিছু তথ্য জেনে নেয়া দরকার।
মনিটর কি?
মনিটর হচ্ছে সেই ডিভাইস যার মাধ্যমে পিসি হতে প্রাপ্ত ফলাফল প্রদর্শন করা হয়।
মূলত এটি একটি আউটপুট ডিভাইস।
মনিটর কম্পিউটারের এমন একটি ভিজুয়াল ডিসপ্লে যাতে থাকে একটি স্ক্রিন ,একটি সার্কিট সিস্টেম ও একটি পাওয়ার সাপ্লাই। এসব জিনিস একটি কেসের ভেতর আবদ্ধ থাকে।
মনিটরের মাধ্যমেই একটি কম্পিউটারের যাবতীয় কার্যকলাপের একটি আউটপুট পাওয়া যায়। তাই এটি ক্রয়ে অবশ্যই সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে হবে।
ভুল মনিটর কিনলে পিসিতে যেকোনো কাজের ক্ষেত্রেই সমস্যায় পড়তে হয় , যা মোটেও কাম্য নয়।
নতুন মনিটর কেনার সময় যেসব বিষয় বিবেচনায় আনতে হবে সেগুলো ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হলো:
১.মনিটরের সাইজ (Monitor Size)
মনিটর কেনার আগে সর্বপ্রথম যে জিনিসটা খেয়াল রাখবেন সেটা হলো এর আকার।
কারণ সঠিক আকারের মনিটর না কিনলে আপনি আপনার কাজ করে আরাম পাবেন না।
এমনকি বিভিন্ন ধরনের সমস্যায়ও পড়তে পারেন।
অনেকে বড় সাইজের মনিটর পছন্দ করেন। তবে আমার মতে এটি নির্ভর করা উচিত কম্পিউটার দিয়ে আপনি কি কাজ করতে চান সেটার ওপর।
যেমন: অফিসের কাজ , গ্রাফিক্সের কাজ , গেমিং ইত্যাদির জন্য বড় মনিটর খুবই কার্যকর।
একজন সাধারণ কম্পিউটার ক্রেতা প্রথমেই যেসব বিষয় বিবেচনায় আনেন তা হলো তার বাজেট অনুযায়ী মনিটর ,কারণ বড় মনিটরগুলো সাধারণত বেশি দামে পাওয়া যায়।
তবে বাজেট ফ্রেন্ডলি মনিটর কিনতে হলে ছোট সাইজের কিনতে হবে। তবে এটাতে বড় মনিটর অপেক্ষা কম ফিচার থাকবে।
এজন্য বাজেট ও নিজের কাজের কথা ভেবে সঠিক সাইজের মনিটর কেনা উচিত।
কর্মক্ষেত্রে সাধারণত ২২ থেকে ২৪ ইঞ্চি মনিটর ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
২.মনিটরের রেজ্যুলিউশন (Resolution of Monitor)
সাইজের পরে আসে মনিটরের রেজ্যুলিউশন এর ব্যাপারটি। অনেকে মনিটরের সাইজ ও রেজ্যুলিউশনকে একই জিনিস মনে করেন।
কিন্তু তা মোটেও এক জিনিস নয়।
মনিটরের রেজ্যুলিউশন হলো মনিটরের পিক্সেল সংখ্যা।
এর ওপরই মনিটরের ছবির মান নির্ভর করে। মনিটরের রেজ্যুলিউশন যতো বেশি হবে ছবির কোয়ালিটি ও অনেক ভালো হবে।
মনিটরের পর্দাকে আড়াআড়ি এবং লম্বালম্বি অনেকগুলাে রেখায় ভাগ করা হয়। আর ঐ ভাগকে রেজুল্যুশন বলে। যেমন- ৬৪০×৪৮০, ১০২৪×৭৬৪ ইত্যাদি।
মনিটরের জন্য সর্বাধিক প্রচলিত রেজ্যুলিউশনটি হলো ১৯৩০×১০৮০।
মনিটরের রেজ্যুলিউশন যতো বেশি হবে এর পিক্সেলের সাইজ ততো ছোট হবে।
একটি ভালো রেজ্যুলিউশন সম্পন্ন মনিটরের ছবি অনেক নিখুঁত ও ঝকঝকে দেখায়।
তাই ভালো রেজ্যুলিউশন সম্পন্ন মনিটর কেনার চেষ্টা করুন। এতে আপনি একটি ভালো কোয়ালিটির ছবি উপভোগ করতে পারবেন।
৩.এ্যাসপেক্ট রেশিও (Aspect Ratio)
একটি মনিটরের আকার কেমন হবে সেটা নির্ভর করে এর এ্যাসপেক্ট রেশিও এর ওপর।
মনিটরের স্ক্রিন প্যানেলের উচ্চতা ও প্রশস্ততা সমন্বিতভাবে এ্যাসপেক্ট রেশিও তৈরি করে।
আগের সময়ে ৪:৩ রেশিও এর মনিটর বেশি পাওয়া যেতো। কিন্তু এখন বাজারে ১৬:৯ এবং এর বেশি রেশিও এর মনিটর পাওয়া যায়।
এই রেশিও এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এতে গ্রাফিক্স, গেমিং ইত্যাদি কাজ খুব দারুনভাবে করা যায়।
এছাড়াও বাজারে ২১:৯ রেশিওর ওয়াইডস্ক্রিন ও পাওয়া যায়। তবে এগুলো কিনতে হলে অবশ্যই বাজেট বেশি রাখতে হবে।
তাই আপনি আপনার বাজেট ও কাজের ধরন অনুযায়ী সঠিক রেশিও এর মনিটর কিনতে পারেন।
৪.কানেকশন টাইপ (Connection Type)
মনিটর কেনার সময় এই বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামাতেই হবে।
কারণ আপনি যে মনিটরটি কিনতে যাচ্ছেন সেটি আপনার সিপিইউ ও গ্রাফিক্স কার্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না তা অবশ্যই চেক করে নিতে হবে।
যদি এতে কোনো সমস্যা হয় তবে মনিটরের সাথে সিপিইউ এর কানেকশন দেয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
এজন্য দেখতে হবে আপনার ডেস্কটপে কি ধরনের পোর্ট ব্যবহৃত হয়েছে। সচরাচর আমরা যে ভিজিএ পোর্ট দেখতে পাই ,তার বাইরেই ডিজিটাল ভিজুয়াল ইন্টারফেস (DVI) এবং হাই- ডেফিনেশন মাল্টিমিডিয়া ইন্টারফেস (HDMI) পোর্টের মনিটর বাজারে পাওয়া যায়।
এসব থেকে আপনি আপনার ডেস্কটপের জন্য উপযুক্ত মনিটরটি কিনতে পারেন।
৫.কালার ডিসপ্লে (Colour Display)
মনিটরের কালার ডিসপ্লে এর দিকেও নজর দেয়া জরুরি।
বর্তমানে বাজারে যেসব মনিটর কিনতে পাওয়া যায় ,তার প্রায় সবই ১৬.৭ মিলিয়ন (২৪ বিট) কালার দেখাতে সক্ষম ।
উপরোক্ত বিষয়গুলো ছাড়াও যেসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ:
৬. মনিটরের প্যানেল
মনিটর কেনার সময় এর প্যানেলের দিকেও খেয়াল রাখা জরুরি।
মনিটরের প্যানেল সাধারণত তিন ধরনের হয়। যথা: আইপিএস, ভিএ এবং টিএন প্যানেল।
বর্তমানে আইপিএস প্যানেলগুলোর মনিটর হাই রিফ্রেশ রেটের গেমিং মনিটর হিসেবে বাজারে আসছে।
তাই বাজেট ভালো থাকলে এই প্যানেলের মনিটর কেনা উচিত বলে আমি মনে করি।
কাজের ধরন অনুযায়ী মনিটর নির্বাচন
মনিটর কেনার আগে ভাবতে হবে আপনি মূলত কি কাজে মনিটর কিনবেন।
যদি আপনি গেমিং এর জন্য নিতে চান তবে একটি হাই রিফ্রেশ রেটের মনিটর কিনতে পারেন। এছাড়াও বড় সাইজের এবং বেশি রেজুলেশন সমৃদ্ধ মনিটর গেমিং এর জন্য উপযুক্ত।
আবার যদি ফ্রিল্যান্সিং বা ভিডিও এডিটিং এর জন্য নিতে চান তবে আইপিএস প্যানেলের মনিটর নেয়া ভালো।এই প্যানেলের মনিটরে মুভি , নাটক ইত্যাদি খুব ভালোভাবে দেখা যাবে।
বাজেট
বর্তমানে কম বাজেটে ভালো কম্পিউটার মনিটর কেনা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
কম্পিউটারের অন্যান্য ডিভাইসের মতো মনিটর কেনার সময়ও এর বিভিন্ন ফিচার সম্পর্কে জানা জরুরী।
উপরের আলোচনায় এসব বিষয়ে আপনারা জানতে পেরেছেন।
মনিটরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফিচার হলো ডিসপ্লে রেজুলেশন ও আকার। এ দুটির মান যতো বেশি হবে এর দামও ততো বেশি হবে।
এছাড়াও কর্ভড ও ফ্ল্যাট এ দুই ধরনের মনিটরের মধ্যে আপনি কোন ধরনের মনিটর কিনতে চান সেটা ও বিবেচনা করতে হবে।
আমাদের দেশে যারা মনিটর ক্রয় করে থাকেন তাদের বাজেট থাকে ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যে।
এই বাজেটে মূলত ২২ ইঞ্চির ১০৮০ পিক্সেল রেজুলেশন এর মনিটর পাওয়া যাবে।এই ধরনের মনিটরগুলো বেশিরভাগই আইপিএস প্যানেলের হয়ে থাকে এবং এর রিফ্রেশ রেট থাকে ৭৫ হার্জ।
বর্তমানে জনপ্রিয় মনিটর বিক্রয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো স্যামসাং , ডেল, এলজি , ভিউসনিক, ফিলিপস ইত্যাদি।
বাজেট যতো বাড়বে মনিটর গুলোর ফিচারও ততো বেশি হবে।
বাজেট ১৫ হাজারের বেশি হলে ২৪ ইঞ্চির মনিটর পাওয়া যাবে। এর পাশাপাশি উন্নত কিছু ফিচারও পাওয়া যাবে।
পরিশেষে বলা যায়, উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করে আপনার কম্পিউটারের জন্য ভালো একটি মনিটর কিনতে পারবেন।