বর্তমান সময়ে ওয়েব ডেভলপিং এবং গ্রাফিক্স ডিজাইন এর পাশাপাশি ডিজিটাল মার্কেটিং এর চাহিদা হুহু করে বেড়ে চলছে। যে অগ্রযাত্রা থামবার নয়। ডিজিটাল মার্কেটিং একটি বিশাল বড় এরিয়া দখল করে আছে সারা ইন্টারনেট জুড়ে। এখন ছোট-বড় যে কোন কোম্পানি তাদের অনলাইনের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়।
অনলাইনে নিজস্ব ওয়েবসাইট তৈরি করার পর সেটিকে টার্গেটেড অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছে দেয়া সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কাজগুলোর একটি। আর এই চ্যালেঞ্জিং কাজটির সমাধান দেয় ডিজিটাল মার্কেটিং৷
আজকের পোষ্টে আমরা আলোচনা করব ডিজিটাল মার্কেটিং কি, ডিজিটাল মার্কেটিং কত প্রকার, এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এর ভবিষ্যৎ, এই বিষয়গুলো নিয়ে৷
ডিজিটাল মার্কেটিং কি?
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে যেমন ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া, মোবাইল অ্যাপলিকেশন, ইমেই্ সার্চ ইঞ্জিন ইত্যাদি, টার্গেটেড অডিয়েন্সের কাছে প্রমোট করার লক্ষ্যে মার্কেটিং বা অ্যাডভার্টাইজমেন্ট করাকে বলা হয় ডিজিটাল মার্কেটিং।
ডিজিটাল মার্কেটিং অনেক বেশি জনপ্রিয় কারণ এখানে স্পেসিফিক অডিয়েন্সকে টার্গেট করার সুযোগ থাকে এবং পারফরম্যান্স ট্রাকিং করার অনেক বেশি সুবিধা থাকে। যার কারণে ব্যবসার উন্নতি এবং লোকসান সহজেই হিসেব-নিকেশ করা যায়।
ডিজিটাল প্লাটফর্মে মানুষের উপস্থিতি কয়েক হাজার গুণ বেড়েছে। বর্তমানে মানুষ অবসরের সিংহভাগই তারা ব্যয় করে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম-এ। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে টার্গেট অডিয়েন্স এর কাছে খুব সহজে যেকোনো বিজ্ঞাপন প্রচার করা যায়।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রকারভেদ-
ডিজিটাল মার্কেটিং সাধারণত দুই প্রকার, অনলাইন মার্কেটিং এবং অফলাইন মার্কেটিং।
অনলাইন মার্কেটিং বলে আলাদা করা হয় কারন সবগুলো মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজির রেজাল্ট পরিমাপ করা সম্ভব হয় ইনি-ডিটেইলস।
কনটেন্ট মার্কেটিং–
কনটেন্ট মাকেটিং এর কন্টেন্ট বলতে সাধারণত সব ধরনের কনটেন্টকে বোঝায়। যেমন রিটেন, অডিও, ভিজুয়াল, ব্লগপোস্ট, কেইস স্টাডি, পডকাস্ট ইত্যাদি। কনটেন্ট এর মাধ্যমে ট্রাস্ট বিল্ড এবং ব্র্যান্ড অ্যাওয়ারনেস সৃষ্টি করাকে কনটেন্ট মার্কেটিং বলে।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং-
পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ সোশ্যাল মিডিয়াতে অবস্থান করে। সংখ্যার হিসেবে সেটি প্রায় তিন বিলিয়ন এর কাছাকাছি। এই বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে ব্যবহার করে যে কোন ব্যবসা সহজে প্রমোশন করা যা। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে এই বিশাল অংকের অডিয়েন্সের নিকট প্রমোশন কর্মকেই মূলত সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বলে।
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি অংশমাত্র। সার্চ ইঞ্জিনগুলো (গুগল, বিং, ডাকডাক গো, এবং ইয়াহু) কে কনভিন্স করে আপনার ব্যবসায়িক ওয়েবসাইট রাঙ্ক করিয়ে প্রমোশন করাই মূলত সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন।
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনকে বলা হয়ে থাকে ফ্রী মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি। যদিও আদতে এটি কতখানি ফ্রী তা হলফ করে বলা সম্ভব নয়। যে প্লাটফর্ম থেকে ট্রাফিক জেনারেট করা হয় ঐ প্লাটফর্মকে পয়সা দিতে হয়না, এজন্য হয়তো অনেকে ফ্রী মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি বলে।
Pay-per-click অ্যাডভার্টাইজিং-
Pay-per-click বলতে যেমন শোনাচ্ছে তেমনি বাস্তবিক অর্থে কাজ করে। আপনাকে তখনই পে করতে হবে যখন কেউ আপনার অ্যাড-এ ক্লিক করবে। পে-পার-ক্লিক অনলাইন মার্কেটে বিশ্বস্ত একটি মার্কেটিং স্ট্রাটেজি। এই পদ্ধতিতে সর্বোচ্চ পরিমাণে কনভার্সন পাওয়া সম্ভব। মূলত যাদের বাজেট ভালো, মার্কেটে খুব শীগ্র রাজত্ব করতে চায় তাদের জন্য এই পদ্ধতি অনেক কার্যকরী।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং–
পন্যের প্রমোশন বা বিক্রির জন্য আলাদা করে কমিশন দেয়ার নাম করে যে মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি গড়ে ওঠেছে, তাকে মূলত অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলে। অনেকটা রেকমেন্ডেশন করে আলাদা কমিশন পাওয়ার মত একটা মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি।
যাদের বিপুল পরিমানে ফ্যানবেজ আছে তারা বিভিন্ন পন্যের প্রমোশন করে। ঐ প্রমোশন থেকে কেউ যদি পন্যটি ক্রয় করে থাকে, তাহলে যিনি প্রমোশন করেছেন, তিনি আলাদা করে কিছু কমিশন পেয়ে থাকেন।
রেফারেল মার্কেটিং-
ধরুন দুইজন ব্যক্তির দুটো জনপ্রিয় ব্লগ সাইট রয়েছে। কারও হয়তো ট্রাফিক রয়েছে অ্যান্ড্রয়েড ফোনে্র। আবার কারও রয়েছে আইওএস অপারেটিং সিস্টেম-এর। এই পদ্ধতিতে মূলত একজন অপরজনকে রেকমেন্ড করার মাধ্যমে ট্রাফিক শেয়ার করে।
এতে করে দুই ধরনের লাভ হয়। প্রথমত ট্রাফিক আদান-প্রদান হয়। আর দ্বিতীয়ত এসইওর ক্ষেত্রে ব্যাকলিংক হিসেবে কাজ করে যা রেংকিং পেতে অনেক সাহায্য করে। ফলে রেফারেল মার্কেটিং দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
ইমেইল মার্কেটিং-
ইমেইল মার্কেটিং সবচেয়ে বেশি কার্যকর একটি ডিজিটাল মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি। এই মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজির আরওআই(ROI) বলা হয় ৩৮০০%। অর্থাৎ কোন মার্কেটার যদি এক ডলার খরচ করে ইমেইল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে, তাহলে সে প্রায় ৩৮ ডলারের সম মূল্যের রিটার্ন পাবে।
বিশেষ করে যাদের টার্গেটেড অডিয়েন্স ইউএসএ, কানাডা, এবং ইংল্যান্ড, তাদের জন্য ইমেইল মার্কেটিং সবচেয়ে বেশি রিচেবল মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি। বলা হয়ে থাকে, এই সকল দেশের ইমেইলে ক্লিক করার হার ৭০% এর অধিক।
অফলাইন মার্কেটিং-
অফলাইন মার্কেটিং বলার একমাত্র কারণ হচ্ছে এই পদ্ধতিতে মার্কেটিং করার ফলে অনলাইন মার্কেটিং এর মত সঠিকভাবে পরিমাপ করা যায় না। এখানে অডিয়েন্সের পারফর্মেন্স ঠিক মত বোঝা যায় না। যেমন টেলিভিশনে যদি কেউ একটি অ্যাড রান করায়, তাহলে সঠিক ভাবে নির্ণয় করা যায়না কে কে তার অ্যাডটি দেখছে বা সঠিক অডিয়েন্সের কাছে অ্যাডটি পৌছাচ্ছে কিনা।
কিছু অফলাইন মার্কেটিং পদ্ধতির কথা নিচে উল্লেখ করা হল-
- রেডিও মার্কেটিং
- টেলিভিশন মার্কেটিং
- ফোন মার্কেটিং
- বিলবোর্ড অ্যাডস
- লাইভ ডেমোনেস্ট্রেশন
- গরিলা মার্কেটিং
- প্রিন্ট অ্যাডস
ডিজিটাল মার্কেটিং ফ্রিল্যান্স ক্যারিয়ার গড়তে কতটুকু সহায়তা করবে?
ফ্রিল্যান্সিং বাংলাদেশের বর্তমানে একটি বহুল আলোচিত বিষয়। বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ তরুণ-তরুণী চাকরির খোঁজে হতাশ হয়ে এই সেক্টরে প্রবেশ করার সুযোগ খুঁজছে। তবে বেশিরভাগ টিনএজাররা বুঝতে পারে না আসলে তাদের কিভাবে শুরু করা উচিত।
যদি অনলাইন ক্যারিয়ারকে মোটাদাগে ভাগ করা যায় তাহলে তিন ভাগে ভাগ করা সম্ভব। ডিজিটাল মার্কেটিং, ওয়েব ডেভলপিং এবং গ্রাফিক্স ডিজাইন। সেক্ষেত্রে ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজের ক্ষেত্র অনেক বিশাল।
কেউ যদি ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার হিসেবে ডিজিটাল মার্কেটিংকে নিতে চায় তাহলে তার উচিত হবে, ছোট ছোট পরিসর থেকে শুরু করা। উপরে আমরা ডিজিটাল মার্কেটিং এর যে বিষয় গুলো নিয়ে বলা শুরু করেছিলাম, সেই একটি বিষয় নিয়ে কেউ যদি শুরু করে তাহলে প্রচুর পরিমানে আর্নিং করা সম্ভব।
তবে একটি বিষয় পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে, কত টাকা আয় করবেন তা হিসেব না করে আপনি যদি এইটুকু চিন্তা করতে পারেন যে, ‘আমাকে যত টাকা দিয়ে হায়ার করবে তার রিটার্ন বায়ার ঠিক মত পাবে তো?’ এই সামান্য চিন্তা টুকু আপনার লাইফকে চেইঞ্জ করে দিতে পারে।
ধরুন আপনাকে আওয়ারলি ৮০ ডলারে কেউ হায়ার করলো। আপনাকে দেখতে হবে এই ৮০ ডলারের বিপরীতে আপনার বায়ার কত পরিমানে রিটান পাচ্ছে। যদি আপনার স্কিল হাই ডিমান্ডেড হয় তাহলে আপনি এই প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারবেন।
আপনি যদি আপওয়ার্কে কখনও প্রবেশ করে থাকেন তাহলে দেখবেন, প্রায় সব সময় ১ লাখ ৮০ হাজারের উপরে জব পোস্ট করা থাকে। এখানে যদি সঠিক ভাবে ফিল্টার করে থাকেন, তাহলেও দেখা যাবে কমপক্ষে ১ লাখের বেশি সিরিয়াস জব পোস্ট করা আছে। এবং এই মানুষ গুলো সিরিয়াসলি তাদের বিজনেসের জন্য কাওকে হায়ার করতে চাচ্ছে। নাহয় কেউ সময় নষ্ট করে এই ধরণের প্লাটফর্মে জব পোস্ট করে না।
ডিজিটাল মার্কেটিং যদি আপনি সঠিক ভাবে শিখতে পারেন, তাহলে আপনাকে হায়ার করতে চাইবে না কে? আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং পারার অর্থ হচ্ছে আপনি যে কোন বিজনেসকে টার্গেটেড অডিয়েন্সের কাছে রিচ করিয়ে দিতে পারবেন। এই কথাটা যদি একজন বিজনেস ওনারকে বলেন সে তো এক কথায় রাজি হয়ে যাবে।
সবাই তার বিজনেসের বুমিং চায়। সাকসেসফুল স্ট্র্যাটেজি যদি অ্যাপ্লাই করতে পারেন, তাহলে আপনি অবুশ্যই ডিজিটাল মার্কেটিং-এ ক্যারিয়ার গড়ে নিতে পারবেন। আগামী দিন গুলোতে ডিজিটাল স্কিল গুলো আরও বেশি পরিমানে মানুষের প্রয়োজন হবে। সেই কথা মাথায় রেখে যদি স্কিল ডেভেলপ করতে পারেন তাহলে অবুশ্যই সফল হবেন।
আপনার ওয়েবসাইটে এ এসে আমি অনেক কিস জানতে পারলাম ধন্যবাদ