সময়ের সাথে সাথে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের হারে পরিবর্তন আসছে। ফলে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মপদ্ধতিতেও প্রতিনিয়ত পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। বর্তমানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য, জীবাণু থেকে সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বা ডেলিভারি সার্ভিস নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলির বিভিন্ন পদে আগ্রহী প্রার্থীদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া মহামারির শুরুর দিকে সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া অনেক প্রতিষ্ঠানেও এখন চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ শুরু হয়েছে।
তবে চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে এখন প্রার্থীদেরকে অনেক প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে। তাই এ মুহূর্তে চাকরিতে নিয়োগ পেতে নিজের সম্পর্কে নিয়োগদাতাদের মধ্যে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করাটাই হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। আর এজন্যে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিটা পদক্ষেপই সতর্কতার সঙ্গে নিতে হবে।
চাকরিপ্রার্থীরা নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সময় নতুন কী অবদান রাখতে পারে, সেই বিষয়টা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে প্রার্থীদের মধ্যে যারা এমন কোনো পদে নিয়োগের আবেদন করতে যাচ্ছেন, যেখানে কাজ করার পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই, তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টা অনেক বেশি জরুরি। তাই অতীতে যেসব কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে, সেসব অভিজ্ঞতা কীভাবে চাকরির জন্যে আবেদন করা নতুন প্রতিষ্ঠানে কাজে লাগতে পারে, সেই ব্যাপারটা সিভি’তে আলাদা করে ও স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে। আবার, কোন ধরনের প্রতিষ্ঠানে আবেদন করা হচ্ছে, সেই অনুসারে সিভি’র ফরম্যাট সাজানোটাও গুরুত্বপূর্ণ।
নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান বর্তমানে কোন ধরনের সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, ইন্টারভিউয়ের সময় প্রশ্নকর্তাকে সেই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা উচিৎ। আর অতীতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে চাকরিপ্রার্থী এসব সমস্যা সমাধানে কীভাবে অবদান রাখতে পারেন, সেটাও তুলে ধরা প্রয়োজন।
চাকরির ইন্টারভিউয়ের সময় বডি ল্যাঙ্গুয়েজ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রশ্নকর্তার সামনে সোজা হয়ে বসে চোখ না সরিয়ে রেখে কথা বলতে হবে। যদি দাঁড়িয়ে ইন্টারভিউ দিতে হয়, তাহলে সবসময়ই প্রশ্নকর্তার দিকে মুখ করে দাঁড়াতে হবে। এভাবে নিজের বডি ল্যাঙ্গুয়েজের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস ফুটিয়ে তুলতে পারলে প্রশ্নকর্তারা বুঝতে পারবে যে, এই প্রার্থী কাজ করতে আসলেই আগ্রহী এবং সুযোগ পেলে দায়িত্বের সঙ্গে কাজ করবে।
গুগল মিট, স্কাইপ বা জুম-এর মতো কোনো ভিডিও কনফারেন্সিং টুলের মাধ্যমে ইন্টারভিউতে অংশ নিলে সবসময়ই ক্যামেরার দিকে চোখ রাখতে হবে। খেয়াল করতে হবে যাতে কোনোভাবেই মনে না হয় যে প্রার্থী হিসেবে আপনি অন্য কোনো দিকে তাকিয়ে আছেন। নিয়োগপ্রার্থীদের ভিড়ে নিজেকে আলাদাভাবে তুলে ধরতে আরো যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, সেগুলি একে একে জেনে নেয়া যাক।
১. রেজুমে তৈরির ক্ষেত্রে নিজের বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলুন-
রেজুমে বা সিভি তৈরির আগে যেই পদের জন্যে আবেদন করতে যাচ্ছেন, সেই পদ সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজখবর নিন। সেই পদে চাকরির জন্যে যেসব যোগ্যতা বা দক্ষতা চাওয়া হচ্ছে, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিজের রেজুমে সাজিয়ে তুলুন। এক্ষেত্রে কাস্টমার সার্ভিস বা ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত চাকরির অতীত অভিজ্ঞতা যেকোনো পদে নিয়োগের ক্ষেত্রেই গুরুত্ব দেয়া হয়। কাঙ্ক্ষিত পদে চাকরি পেলে আপনি কীভাবে অন্যদের চাইতে আলাদাভাবে কাজ করতে পারবেন, সেটা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করুন।
২. আগ্রহ জাগানোর মতো কভার লেটার তৈরি করুন-
রেজুমে’তে যা কিছু থাকবে, কভার লেটারে হুবহু সেসব বিষয় উল্লেখ করবেন না। দক্ষতার সঙ্গে কভার লেটার লিখতে পারলে তাতে নিজের ব্যক্তিত্ব তুলে ধরা সম্ভব। তাই, নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান বা পদে চাকরির ক্ষেত্রে কোন বিষয়টা আপনাকে আকৃষ্ট করেছে, সেটা কভার লেটারে তুলে ধরুন। এছাড়াও নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আপনার মতামত এবং তাদের কার্যপদ্ধতি আপনি কতটা বোঝেন, সেটাও কভার লেটারে উল্লেখ করতে পারেন।
৩. পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিন-
নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ভিডিও ইন্টারভিউ বা ফোন ইন্টারভিউ নিতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন ইন্টারভিউর আয়োজন করাটা স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে ফোনের নেটওয়ার্ক বা ইন্টারনেট কানেকশন যাতে স্থিতিশীল থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
এভাবে ইন্টারভিউ-এ অংশ নেয়ার আগে মোবাইল বা কম্পিউটার ডিভাইসের স্পিকার ঠিকঠাক আছে কিনা তা চেক করে নিন। কোলাহলমুক্ত নিরব কোনো জায়গা থেকে ইন্টারভিউতে অংশ নিন। এছাড়াও ভিডিও ইন্টারভিউর ক্ষেত্রে আশেপাশে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখুন, যাতে প্রশ্নকর্তা স্পষ্টভাবে আপনার চেহারা দেখতে পান।
৪. ইন্টারভিউর আগে প্রয়োজনীয় নোটস নিয়ে নিন-
ইন্টারভিউ শুরুর আগে রেজুমে’তে উল্লেখ করা আপনার সব দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং সাফল্যগুলি পরিষ্কার একটা কাগজে আলাদাভাবে টুকে নিন। এভাবে ইন্টারভিউ চলাকালীন সময়ে কথা বলার জন্যে পয়েন্ট খুঁজে পাবেন। এছাড়াও ইন্টারভিউর সময় যদি নিজেকে নার্ভাস মনে হয়, তাহলে নোটস থেকে সাহায্য নিতে পারবেন।
আপনার নোটসের মধ্যে প্রশ্নকর্তাকে জিজ্ঞেস করার জন্যে ৩ থেকে ৫টি প্রশ্ন ঠিক করে রাখুন। তবে প্রশ্ন তৈরির আগে খেয়াল রাখবেন, প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে যেসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আছে সেসব প্রশ্ন যেন আপনি না করেন। আপনার জিজ্ঞাসা থেকে প্রশ্নকর্তারা বুঝতে পারবেন যে আপনি আসলেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আগ্রহী।
৫. সৌজন্য বজায় রাখুন-
আপনি চাইলে শালীনতার মাধ্যমেই অন্যদের চাইতে একধাপ এগিয়ে থাকতে পারেন। যারা ইন্টারভিউ নিবেন, তারা আপনার প্রশ্নের উত্তর দিলে তাদেরকে ধন্যবাদ জানানো এবং সম্পূর্ণ ইন্টারভিউতে প্রশ্নকর্তাদের সাথে হাসিমুখে আলাপ করাটা এক্ষেত্রে জরুরি। এছাড়াও যেই পদের জন্যে আবেদন করেছেন, সেই পদে কাজ করার জন্য উৎসাহ প্রকাশ করলেও আপনাকে আলাদাভাবে লক্ষ্য করা হবে।
৬. পেশাদার থাকার চেষ্টা করুন-
ভিডিও ইন্টারভিউ হলেও সেখানে পরিষ্কার এবং অফিশিয়াল পোশাক পরার চেষ্টা করুন। এছাড়াও আপনার চুলদাড়ি যাতে পরিপাটি থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। ইন্টারভিউর জন্য নিজেকে তৈরি করতে আপনি কতটুকু চেষ্টা করেছেন, সেটার মাধ্যমেই আপনার পেশাদারিত্ব প্রকাশ পাবে।
৭. বার বার অনুশীলন করুন-
আপনি লাজুক হয়ে থাকলেও ইন্টারভিউর সময় নিজেকে প্রকাশ করার কোনো বিকল্প নেই। তাই ইন্টারভিউর সময় সব ধরনের জড়তা কাটিয়ে ওঠার জন্যে বার বার ইন্টারভিউর দেওয়ার অনুশীলন করতে থাকুন। বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সদস্যদেরকে বলুন, তারা যাতে আপনার মক ইন্টারভিউ নেয়। এভাবে চর্চা করতে থাকলে সত্যিকার ইন্টারভিউ দেয়ার সময় সহজে নার্ভাস হয়ে পড়বেন না।
এছাড়াও নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান যদি রেফারেন্স চায়, তাহলে সিভি বা রেজুমে’তে উপযুক্ত রেফারেন্স উল্লেখ করুন। এবং রেজুমে বা কভার লেটারে কোনো ভুল আছে কিনা, সেটা বার বার চেক করে দেখুন।
এই পরামর্শগুলি অনুসরণ করতে পারলে চাকরিতে আবেদনের সময় অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্য থেকে সহজেই নিজেকে আলাদাভাবে তুলে ধরতে পারবেন।