কম্পিউটার মানুষের ভাষা বুঝতে পারে না। তাই কম্পিউটারেরকে কমান্ড করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ল্যাঙ্গুয়েজ এর আবির্ভাব হয়েছে। এ ধরনের ল্যাঙ্গুয়েজ গুলো প্রতিটি ভাষার ব্যাকরণ এর মত নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলে। মানুষের মধ্যে যে মস্তিষ্ক রয়েছে তার মাধ্যমে ভাষায় ছোটখাটো ভুলগুলো সে সহজে অনুধাবন করতে পারে। কিন্তু কম্পিউটারের ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয় না। কম্পিউটার যেমন বুঝবে তেমন ভাবেই তাকে তার ভাষায় বোঝাতে হবে।
কম্পিউটারের বোধগম্য বিভিন্ন ভাষা রয়েছে। যেগুলোকে সহজেই বলা যায় প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ অর্থাৎ কোন মানুষ যদি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে কম্পিউটারকে কমান্ড করে, তাহলে কম্পিউটার উক্ত কার্য সম্পাদন করতে পারে।
আজকে আমরা জানবো কম্পিউটার প্রোগ্রামিং সম্পর্কে। আরও জানবো প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ কি কি, কেন শেখা উচিত, এবং একজন নবীন কোথা থেকে প্রোগ্রামিং শুরু করবে এই সম্পর্কিত তথ্য।
কম্পিউটার প্রোগ্রামিং কি?
কম্পিউটারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের উদ্দেশ্যে কম্পিউটারের বোধগম্য ভাষায় লেখা কোড কে বলা হয় সোর্স কোড। সোর্স কোড যিনি লেখেন তাকে বলা হয় প্রোগ্রামার, কোডার, এবং ডেভলপার। প্রতিটি ভাষার যেমন নিজস্ব ব্যাকরণ শৈলী রয়েছে তেমনি প্রতিটি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ-এর নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন রয়েছে। এই সকল নিয়মকানুন মেনে সোর্স কোডের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কার্য সম্পাদন করার পুরো প্রক্রিয়াটা এই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং।
আমরা প্রত্যেকেই জানি যে কম্পিউটার শুধুমাত্র বাইনারি ল্যাঙ্গুয়েজ বুঝতে পারে। বাইনারি ল্যাঙ্গুয়েজ হচ্ছে 0 এবং 1। অর্থাৎ কম্পিউটার শুধুমাত্র এই বাইনারি ছাড়া আর কিছুই বুঝতে পারে না। তাই কম্পিউটারকে সব ধরনের কার্য সম্পাদন করতে হয় এই বাইনারি ল্যাঙ্গুয়েজ এর মাধ্যমে।
সোর্স কোড কি?
সোর্স কোড প্রোগ্রামিংয়ের একেবারে প্রাথমিক উপাদান। যা একজন প্রোগ্রামার দ্বারা লেখা হয়ে থাকে এবং সোর্সকোড এর একটি বিশেষত্ব হচ্ছে এটি মানুষ উভয়ে বুঝতে পারে। একজন প্রোগ্রামার কম্পিউটারকে কমান্ড করার জন্য যে কোডগুলো লেখে থাকে তাই সোর্স কোড।
অবজেক্ট কোড কি?
সোর্স কোড মূলত মানুষের বোধগম্যের জন্য তৈরি, কিন্তু কম্পিউটার তো সরাসরি সোর্স কোড বুঝতে পারে না। কম্পিউটার শুধু বাইনারি কোড বুঝতে সক্ষম। তাই আপনি যে ধরনের ল্যাঙ্গুয়েজে কম্পিউটার কে কমান্ড করেন তা কম্পাইলার এর মাধ্যমে রূপান্তরিত হয়ে অবজেক্ট কোড-এ পরিণত হয়। অবজেক্ট কোড হচ্ছে বাইনারিতে রুপান্তরিত কোড৷
প্রোগ্রামার কাকে বলে?
যিনি প্রোগ্রাম রচনা করেন তাকে প্রোগ্রামার বলা হয়৷ অর্থাৎ সোর্সকোড রচয়িতাই প্রোগ্রামার। যারা সফটওয়্যার ডেভেলপার হিসেবেও পরিচিত। পৃথীবির প্রথম প্রোগ্রামার বলা হয় ব্রিটিশ গণিতবিদ অ্যাডা লভেলিসকে। তখনকার সময়ে চার্লস ব্যবেজের তৈরি অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিনটি ফাংশনাল স্ট্যান্ডার্ড-এ ছিল না। কারণ ফাংশনাল অ্যানালিটিক্সের জন্য প্রোগ্রাম রচনা করার প্রয়োজন ছিল।
প্রোগ্রামিং বলতে কি বোঝায়?
কম্পিউটারের বোধগম্য ভাষায় রচয়িত যে সোর্স কোড নির্দিষ্ট কার্যসম্পাদনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয় তার পুরো প্রক্রিয়াকে বলা হয় প্রোগ্রামিং। প্রথমে কম্পিউটারকে ইনস্ট্রাক্ট করা হয়, তারপর কম্পিউটার সে অনুযায়ী কাজ করে।
প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ-
প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজের মাধ্যমে কম্পিউটারের সাথে মানুষের যোগাযোগের একটি পথ সৃষ্টি হয়। এতে করে কম্পিউটারকে বিভিন্ন রকম কার্য সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া সম্ভব হয়। আজকের এই প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজের কারণে আমাদের জীবনযাত্রা সহজ হয়ে উঠেছে। সেলফোন থেকে শুরু করে ইন্টারনেট, কম্পিউটার, ওয়েব ব্রাউজার, ওয়েবসাইট সবকিছুই প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজের উপর ভর করে আছে।
প্রতিটি চ্যালেঞ্জিং কাজের জন্য কম্পিউটারকে নতুন কমান্ড দেয়ার প্রয়োজন পড়ে। সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উপায় নতুন নতুন ল্যাঙ্গুয়েজ এর সৃষ্টি হয়েছে এবং কিছু ল্যাঙ্গুয়েজ এখনও সৃষ্টি হচ্ছে। ল্যাঙ্গুয়েজ গুলো নির্দিষ্ট কোন কাজ কে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয় যাতে করে ঐ স্পেসিফিক কাজটি সম্পাদনের পথ সহজ হয়।
কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ গুলো হল- পাইথন, জাভা, রুবি, এইচটিএমএল, জাভাস্ক্রিপ্ট, সি ল্যাঙ্গুয়েজ, সি++, সি#, পিএইচপি, এসকিউএল, এবং সুইফট।
প্রতিটি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ তার বিশেষত্ব নিয়ে মার্কেটে অবস্থান করে আছে। এরমধ্যে সুইফট ল্যাঙ্গুয়েজ টি অ্যাপলের তৈরি নিজস্ব ল্যাঙ্গুয়েজ আইওএস অ্যাপ্লিকেশন তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
কেন কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শেখা উচিত?
করোনা প্যানডেমিক এর কারণে মানুষ বুঝতে শুরু করেছে ইন্টারনেট বেইজড ওয়ার্ল্ড হচ্ছে ফিউচার। কারণ সবকিছুই ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল হয়ে যাবে। টাকা পয়সার লেনদেন থেকে শুরু করে অফিশিয়াল কাজকর্ম সব কিছুই অনলাইন নির্ভর হচ্ছে দিন দিন। এক্ষেত্রে অনলাইনে যে কোন কার্য সম্পাদনের জন্য অবশ্যই কম্পিউটার সফটওয়্যার বা ওয়েব সফটওয়্যার প্রয়োজন রয়েছে। যদি যদি এই ধরনের কম্পিউটার সফটওয়্যার এর চাহিদা বাজারে থাকে তাহলে একজন কম্পিউটার সফটওয়্যার বা একজন কম্পিউটার প্রোগ্রামিং জানা লোকের এর চাহিদা অবশ্যই তুঙ্গে থাকবে নিয়ে কোন দ্বিমত নেই।
নতুন ভাষা জানা মানুষ-এর সামনে যেমন নতুন দিগন্তের সূচনা সৃষ্টি হয়, তেমনি কম্পিউটারের একটি প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ জানা থাকলে যে কারও নতুন সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের দুয়ার খুলে যায়। করোনার কারণে পৃথিবীতে প্রচুর পরিমাণে মানুষ বেকায়দায় পড়ে গিয়েছে। কিন্তু একটু সূক্ষ্ম নজরে যদি আমরা দেখার চেষ্টা করি, তাহলে দেখতে পাব ইন্টারনেট রিলেটেড যেকোনো ইন্ডাস্ট্রির গ্রাফ উন্নয়নের দিকেই ধাবিত হয়েছে। এমনকি বাংলাদেশেও প্রচুর পরিমান আইটি ফার্মের মোট রেভিনিউ দুই থেকে তিন গুন বৃদ্ধি হয়েছে।
একজন কম্পিউটার প্রোগ্রামিং জানা ব্যক্তি যদি থার্ড ওয়ার্ল্ড কান্ট্রি থেকেও আসে, তার স্যালারি কিন্তু একজন ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড কান্ট্রি লোকজনের প্রায় সমান। বাংলাদেশের মতো চরম বেকারত্বের একটি দেশেও ভালো মানের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
যেহেতু পৃথিবীর সবকিছুই অনলাইন নির্ভর হয়ে যাচ্ছে, তাই সব ধরনের কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য আমাদের কম্পিউটার নেটওয়ার্ক-এর শরণাপন্ন হতে হয়। এ ক্ষেত্রে কম্পিউটারের একটি প্রোগ্রামিং বা তার অধিক প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ জেনে রাখা ব্যক্তিকে অবশ্যই বাকি আট-দশজন থেকে এগিয়ে রাখবে।
এছাড়াও নতুন নতুন সফটওয়্যার সৃষ্টির মাধ্যমে ছোট সমাধান ছোট ছোট সমস্যার সমাধান আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে অনেক সহজ করে দেয়। উবার কিংবা পাঠাও’র কথা অথবা ফুডপাণ্ডার কথাও যদি বলি, দেখুন কিছু ছোট আইডিয়া এক্সিকিউট করে কি পরিমাণ রেভিনিউ জেনারেট করছে। এই ধরনের ছোট ছোট সমস্যার সমাধানের জন্য অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করে নিজের এবং দেশের সকলের উপকার করা সম্ভব।
নবীনরা কোথায় থেকে প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ শেখবে?
বর্তমানে সবকিছু অনলাইন নির্ভর হয়ে গেছে। শিক্ষা পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এখন কোন ব্যক্তি যদি নতুন কিছু শিখতে চায়, তা আগের যে কোন সময়ের তুলণায় সহজ। অনলাইনে গুগল, ইউটিউব, ইউডেমি, স্কিলশেয়ার, এবং লিংকেডইন লার্নিং সহ নানা রকম প্লাটফর্ম রয়েছে, যেখানে অনলাইনে প্রায় সব ধরণের সফট স্কিল শিখে নেয়া যায়।
প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ শেখার জন্য প্রথমে অবুশ্যই নির্বাচন করতে হবে, শিক্ষার্থী কোন ল্যাঙ্গুয়েজটি শিখতে চায়। এরপর ঐ ল্যাঙ্গুয়েজের জন্য প্রয়োজনীয় ম্যাটেরিয়ালস অনলাইন থেকে খুঁজে বের করে পড়া শুরু করে দেয়া যায়।
ইন্টার্নেটের ভাষ্যমতে, একজন নবীনের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ শেখা শুরু করা উচিত পাইথন দিয়ে। পাইথন হচ্ছে দ্রুত, সৃষ্টি এবং ব্যবহার খুব দ্রুততম সময়ে করা যায়। ইউটিউব, ইন্সটাগ্রাম, পিন্টারেস্ট সহ অনেক জনপ্রিয় ওয়েবসাইট পাইথন দিয়ে তৈরি।