গেমিং ইন্ডাস্ট্রির আদৌ যে ভবিষ্যত আছে তা আমাদের বেশিরভাগ অভিভাবক মানতে চান না। কিন্তু তাদের মানতে চাওয়া না চাওয়ার মাঝে পৃথিবী সীমাবদ্ধ নয়। পৃথিবী অনেক এগিয়ে গেছে। গেমিং ইন্ডাস্ট্রি এখন দিন দিন বড় হচ্ছে। এখন গেমিং করেই প্রচুর পরিমাণ আয় করছে অনেক মানুষ। সে তুলনায় বাংলাদেশের এই ইন্ডাস্ট্রিতে পদচারণা খুব বেশি না।
গেমিং যে আসলে একপ্রকার স্কিল সেটাই অনেকে বুঝতে চেষ্টা করেন না। যদি কোন গেইমার যখন গেম খেলে তাকে, একইসাথে গেমে মনোযগী হতে হয় এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থার দিকেও নজর রাখতে হয়। গেমের প্রতিটি ক্যারেক্টার কে কন্ট্রোল করার জন্য কি পরিমাণ মেধার প্রয়োজন হয় সেটি হয়তো আমাদের অনেকের ধারনা নেই।
বিশ্বের অনেক নামিদামি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে গেইমিং স্কেলটি ব্যবহার করে অনেক রকম চাকরি নেয়া যায়। যেমন কেউ যদি ‘সিভিলাইজেশন’, ‘টোটাল ওয়ার’ মতো গেম খেলেন তাহলে ম্যানেজার পদের জন্য তিনি হবেন সবচেয়ে ভালো ক্যান্ডিডেট।
বর্তমানে অনেক ধরনের প্রতিষ্ঠান কাজ করছে কিভাবে গেইমারদের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক উন্নতি লাভ করা যায়। গেমারদের কিছু বৈশিষ্ট্য সব কোম্পানি আগ্রহের চোখে দেখে। কারণ এরা খুব শান্ত স্বভাবের মাধ্যমে যেকোনো ধরনের সমস্যা সমাধান করতে পারে এবং দ্রুত ভালো পদক্ষেপ নিতে পারেন।
আজকে আমরা কথা বলবো ই-স্পোর্টস নিয়ে। সাথে আরও জানার চেষ্টা করবো কিভাবে একজন গেইমার আয় করে থাকেন এবং এই ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যত নিয়ে।
ই-স্পোর্টস কি?
ই-স্পোর্টস বা ইলেকট্রনিক স্পোর্টস হচ্ছে একপ্রকার কম্পিটিশন, যেখানে ভিডিও গেইমের মাধ্যমে প্রতিযোগীদের যাচাই করা হয়। এই ধরণের কম্পিটিশন গুলো সিংগেল প্লেয়ারের মধ্যেও হতে পারে, আবার মাল্টিপ্লেয়ার এর মাঝেও হতে পারে। এছাড়া টিমের মাধ্যমেও এই ই-স্পোর্টস কম্পিটিশন করা যায়।
এই ধরণের কম্পিটিশনে যুক্ত হতে হলে প্রতিযোগীকে একজন প্রফেশনাল গেইমার হতে হয়।
প্রফেশনাল গেমাররা কি করে?
প্রফেশনাল গেমাররা সাধারণত বিভিন্ন ড্রিলের মাধ্যমে কোন একটা স্পেসিফিক গেমে নিজেদের দক্ষ করে তোলে। যাতে কোনো ধরনের কম্পিটিশনে গেলে ভালো করতে পারে। বর্তমানে আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে প্রফেশনাল গেইমার তৈরি হচ্ছে, যা ইন্ডাস্ট্রির জন্য একটি সুখকর বিষয়। বাংলাদেশের বিশেষ ভাবে আলোচিত গেইম হচ্ছে পাবজি গেইম, ফিফা, পেস ইত্যাদি।
প্রফেশনাল গেমাররা সাধারণত বিভিন্ন ধরনের কম্পিটিশনে যোগ দেয়। অনেকটা প্রিমিয়ার লিগ বা যেকোনো ধরনের টুর্নামেন্টের মত। যদি টুর্নামেন্টে কোন প্লেয়ার ভালো করতে পারে এরপর থেকে তার বিভিন্ন দিক উন্মুক্ত হয়ে যায়। বিভিন্ন ধরনের স্পন্সরশিপ থাকে গেইমারদের জন্য। এভাবে আসলে সে গেমিং ইন্ডাস্ট্রির সাথে যুক্ত হতে পারে।
গেমাররা কিভাবে আয় করে?
একজন প্রফেশনাল গেমারের অ্যাভারেজ আয় ৬০ হাজার ডলার। এই সেক্টরে সর্বোচ্চ আয় হচ্ছে ঘণ্টায় প্রায় ১৫ হাজার ডলার। এদের মধ্যে অনেকে আবার শখের বসে গেম খেলে আয় করে থাকেন। আমরা হয়তো অনেকে জনপ্রিয় ইউটিউবার ‘ফিউডিফাই’ কে চিনি। তিনিও একজন গেমার। তবে তিনি মূলত এন্টারটেইনিং মিম শেয়ার গেইমার। বিভিন্ন মজাদার ক্লিপ এর সমন্বয়ে ভিডিয়ো কন্টনেট তৈরি করে থাকে।
এছাড়াও একজন গেইমার স্পন্সরশীপের মাধ্যমে আয় করতে পারেন। রিসেন্টলি দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের কোর্স তৈরি হচ্ছে কিভাবে গেইমে প্রফেশনালি ভালো করা যায়। এক্ষেত্রে কোর্স বানিয়েও আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
একজন প্রফেশনাল গেমার আর বিভিন্ন রকম হতে পারে। আজকে আমরা কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব যেভাবে আসলে গেমাররা আয় করে থাকেন-
কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স টেস্টার- গেইম ইন্ডাস্ট্রিগুলো গেম গুলো তৈরি করে থাকে মূলত গেমারদের জন্য। এই গেমাররা যদি কোন গেম কে ভালো বলে স্বীকৃতি দেয় অর্থাৎ তাদের নতুন আপগ্রেড কে গ্রহণ করে তবেই গেমিং ইন্ডাস্ট্রির সার্থকতা। তাই এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় একজন প্রফেশনাল গেমারের থেকে তাদের নতুন আপগ্রেডটি কেমন হয়েছে তা সম্পর্কে জানা। সে ক্ষেত্রে একজন গেইমার কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স টেস্টিং এর মাধ্যমে কোম্পানীকে সহায়তার পাশাপাশি নিজেও আয় করতে পারেন।
গেইম টেস্টার- কোয়ালিটি অ্যাসুরান্স টেস্ট এবং গেইম টেস্টারদের মধ্যে কিছু সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে। গেইম টেস্টাররা মূলত গেমের বিভিন্ন ধরনের প্রবলেম সলভিং বিষয়ে সাহায্য করে অর্থাৎ তারা আসলে ‘কেন’ প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকে। কেন এই ফিচারটি গেমারদের সন্তুষ্ট করতে পারবে না এবং কি করলে গেমটি আরও ভালো করতে পারবে এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকে এই গেমটা টেস্টাররা।
প্রফেশনাল গেইমার- একজনকে গেইমার প্রফেশনালি বিভিন্ন ধরনের চ্যাম্পিয়নশীপ কম্পিটিশন খেলে আয় করতে পারে।
স্ট্রিমার- স্ট্রিমিং এর মাধ্যমেও গেমিং ইন্ডাস্ট্রির গেমাররা আর্নিং করতে পারে। যেমন আমরা দেখেছি ইউটিউবে ডেডিকেটেড স্ট্রিমিং ফিচার রয়েছে। এছাড়াও বেশ কিছু জনপ্রিয় ইউটিউভার রয়েছে(ফিউডিফাই) রয়েছে যারা শুধুমাত্র স্ট্রিমিং এর মাধ্যমে এন্টারটেইন করে যাচ্ছে একই সাথে আর্নিংও করছে।
টুইচ- টুইচ গেইমারদের কাছে পরিচিত হলেও আমাদের অনেকের কাছে এটি পরিচিত নয়। এর মাধ্যমে স্ট্রিমিং করে আর্নিং করা যায়। তবে এটির একমাত্র বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে শুধু গেম স্ট্রিম করা যায় এছাড়া অন্য কোন কিছু স্ট্রিম করা যায় না। বলা যায় এটি ডেডিকেটেড স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম যেখানে মনিটাইজেশন এর মাধ্যমে আর্ন করা সম্ভব।
স্পন্সর- একজন গেইমার যখন কোন মেজর টুর্নামেন্ট জয় করে বা একটা মেজর টুর্নামেন্টের ভালো পর্যায়ে যেতে পারে, তখন তার জন্য স্পন্সর ম্যানেজ করা সহজ হয়ে যায়। এ ধরনের স্পন্সরশীপের মাধ্যমেও একজনকে একজন গেইমার আর্ন করতে পারে।
গেইম টিউটোরিয়াল- গেইমার্জপ্লাস নামক একটি ওয়েবসাইট ডেডিকেটেড ভাবে গেমিং টিউটোরিয়াল গুলো বিক্রি করে থাকে। সেখানে ইউডেমি স্কিলশেয়ার এর মত গেমিং কোর্সগুলো তৈরি করে সেখান থেকে আর্নিং শুরু করতে পারেন।
ভিডিও গেইম স্কিল দিয়ে কি চাকুরি পাওয়া যায়?
গেমিং ইন্ডাস্ট্রি এখন এত বিশাল যে চলচ্চিত্র এবং সঙ্গীত এ দুইয়ের সমষ্টির সমস্ত আয়ের অধিক আয় হয় এই গেমিং ইন্ডাস্ট্রির মাধ্যমে।
একজন গেইমারকে কি পরিমাণ পরিশ্রম করতে হয় এবং কতটুকু মেধা শক্তি থাকলে সে গেইমিং এনভারমেন্ট এর মধ্য থেকে বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারে, সেই গুরুত্ব এখন গেমিং ইন্ডাস্ট্রির লোকজন বুঝতে শুরু করেছে। তারা এখন চিন্তা করছে কিভাবে এই গেমিং ইন্ডাস্ট্রির গেমারদের স্কিলগুলো কাজে লাগানো যায়।
যারা অনলাইন গেমিং করেন তাদের বিভিন্ন রকম ডাটা অনলাইনে স্টোর করা থাকে। সেখান থেকে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে একজন স্পেসিফিক গেমারকে ট্রেইন করে আরও স্পেসিফিক কাজে দক্ষ করে তোলা সম্ভব বলে মনে করছেন এই ইন্ডাস্ট্রির লোকজন। এই ব্যাপারটি নিয়ে অনেক একাডেমি কাজ করে যাচ্ছে।
গেইমিং ইন্ডাস্ট্রির ফিউচার কি?
গেমিং ইন্ড্রাস্ট্রি ধারণা করা হচ্ছে ২০২১ সালের মধ্যে ১৮০ বিলিয়ন ডলারের ইন্ডাস্ট্রি হতে যাচ্ছে যা গতবছর ছিল ১৫৯ বিলিয়ন ডলার-এর ইন্ডাস্ট্রি। বিভিন্ন ধরনের ক্রিটিক্যাল problem-solving এর জন্য এই ইন্ডাস্ট্রি বেশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। এছাড়াও গেইম দিন দিন মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ার কারণে এই ইন্ডাস্ট্রিতে লোকজনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সেইসঙ্গে এডভারটাইজিং কমিউনিটি গ্রো করছে।
বর্তমানের গেমগুলো অনেক ডায়নামিক। বিশেষ করে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটি মাধ্যমে সৃষ্ট গেমগুলো ব্যাপক সাড়া ফেলেছে কনজিউমারদের মধ্যে। যেহেতু এটি খুব অল্প সময়ে সিনেমা এবং মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির মোট আয়ের সমষ্টিকে কে ছাড়িয়ে গিয়েছে, এবং যেভাবে অ্যাপ্রোচ করছে তাতে ধারণা করা হচ্ছে গেমিং ইন্ড্রাস্ট্রির ফিউচার যথেষ্ট ব্রাইট। এই ধরনের ইন্ডাস্ট্রিতে কেউ চাইলে তার ক্যারিয়ার গড়ে নিতে পারে। বাংলাদেশের জনপ্রিয় ফুড ব্লগার ‘রাফসান দ্যা ছোটভাই’ও তাঁর ক্যারিয়ারের শুরু করেছিলো একজন ই-স্পোর্টার হিসেবে।