বিদ্যমান বাজারে সাফল্য অর্জন এবং নতুন বাজারে প্রবেশ করতে হলে যেকোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকেই তাদের কর্মশক্তি দক্ষতার সাথে ব্যবহার করতে হবে। আইডিয়া ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম কাজে লাগালে প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের অংশগ্রহণ বাড়ে। এ ধরনের অংশগ্রহণে কেবল ব্যবসার উন্নতিই হয় না, কর্মীদের মনোবলও বাড়ে। ফলে কর্মীরাও সন্তুষ্ট থাকে।
আইডিয়া ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার দিয়ে সুসংগঠিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ করা যায়। এতে কাজের ফলাফলের ঘনিষ্ঠ মূল্যায়ন নিশ্চিত করার পাশাপাশি নির্দিষ্ট ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য সম্পর্কে কর্মীদের পরামর্শও পাওয়া যায়।
আইডিয়া ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে যে সুবিধাগুলি দেয়, সে সম্পর্কে একে একে ধারণা নেয়া যাক।
দক্ষ এবং দ্রুত মূল্যায়ন-
আইডিয়ার পর্যায় থেকে পেটেন্ট পর্যন্ত একটি ব্যবসায়িক ধারণার পরিণত রূপ লাভ করার সময়টুকু কমিয়ে আনতে সহায়তা করে আইডিয়া ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার। এর মাধ্যমে দুর্বল আইডিয়াগুলি বাদ দিয়ে সেরা আইডিয়াগুলির দ্রুত চিহ্নিতকরণ, বাস্তবায়ন, পর্যালোচনা এবং মূল্যায়ন সম্ভব হয়।
চিন্তায় বৈচিত্র্য-
যেসব আইডিয়া বিভিন্ন অভিজ্ঞতা বা পর্যবেক্ষণ থেকে আসে, সেগুলিই পরবর্তীতে সবচেয়ে কার্যকর প্রমাণিত হয়। সৃজনশীল হওয়ার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করার জন্য পরিণতি সম্পর্কে চিন্তা না করেই কর্মীদের বিভিন্ন দৃষ্টিতে চিন্তাভাবনা করার মানসিক স্বাধীনতা প্রয়োজন।
সবার মধ্যে সহযোগিতা জোরদার-
আইডিয়া ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম-এর সাহায্যে কর্মীদের মধ্যে হওয়া আলোচনা বিশৃঙ্খল যোগাযোগে রূপান্তরিত হয় না। বরং সহযোগিতার মাধ্যমে সম্পৃক্ত হওয়াটা আরো সহজ করে তোলে। আইডিয়া ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারে ডেটা ইনপুট করার মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা আইডিয়ার অগ্রগতি, আইডিয়ার সংরক্ষণ এবং আইডিয়াকে আরো উন্নত করার সম্ভাব্য সব উপায়ের ওপর নজর রাখতে পারে।
কর্মীদের প্রচেষ্টায় আরও বেশি মনোযোগ-
ব্যবসার লক্ষ্য পূরণের দিকে কর্মীদের সৃজনশীল শক্তিকে পরিচালিত করার মাধ্যমে পরামর্শের মান এবং প্রাসঙ্গিকতা উন্নত করা যায়। আইডিয়া ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ব্যবসায়িক লক্ষ্য এবং এমনকি নির্দিষ্ট ব্যবসায়িক প্রক্রিয়াগুলি হাইলাইট করার মধ্য দিয়ে পরামর্শ বা মতামত সংগ্রহ করা যায়।
উদ্ভাবনের ব্যাপারে উৎসাহ-
রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো বিভিন্ন ধারণা। কারণ একটি ধারণাই গুরুত্বপূর্ণ এবং নতুন কোনো উদ্ভাবনের মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করে। একটি ধারণা থেকেই যেকোনো ব্যবসার কার্যক্রম মৌলিকভাবে বদলে যেতে পারে বা নতুন প্রডাক্ট তৈরি হতে পারে। যেকোনো প্রোটোটাইপ থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ পেটেন্টযোগ্য প্রডাক্ট তৈরির দায়িত্বে থাকে রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এর মতো বিশেষায়িত বিভাগ। আর তাদের কাজের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য সকল বিভাগের প্রতিক্রিয়া এবং পরামর্শের প্রয়োজন হয়।
আইডিয়া ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম কীভাবে উদ্ভাবন এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, তার একটি বড় উদাহরণ হল ‘টয়োটা ক্রিয়েটিভ আইডিয়া অ্যান্ড সাজেশন সিস্টেম’, যাকে সুংক্ষেপে ‘টিসিআইএসএস’ বলা হয়।
১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ‘টিসিআইএসএস’ ৪০ মিলিয়নেরও বেশি সৃজনশীল ধারণা পেয়েছে। আর এর মাধ্যমেই গুণমান, নির্ভরযোগ্যতা এবং স্থায়িত্বের জন্যে টয়োটার বিভিন্ন প্রোডাক্ট বিশ্বখ্যাত হতে পেরেছে।
চিন্তাভাবনা ম্যাপিং করা-
নতুন নতুন ধারণা সৃষ্টির প্রক্রিয়া লিপিবদ্ধ করার মান নির্ধারণ এবং স্বয়ংক্রিয়তা আইডিয়া ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এর মাধ্যমে দ্রুত, সর্বাঙ্গীন এবং আরো নির্ভরযোগ্য অনুসন্ধানের পাশাপাশি তথ্যও সংরক্ষণ করা যায়।
আইডিয়া ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে এভাবে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে আইডিয়া লিপিবদ্ধ করে মানসম্পন্ন ডেটা পাওয়া যায়। একইসাথে প্রযুক্তিগত দক্ষতা হারানোর ঝুঁকি থেকেও প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করা যায়।
পেটেন্ট ফাইলিংয়ে সহজগম্যতা-
পেটেন্টের জন্যে আবেদন করার সময় এমন পদক্ষেপ নিতে হয়, যার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট পণ্য বা প্রক্রিয়া আরও উন্নত করা যায়। আইডিয়া ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে প্রোডাক্টের প্রোটোটাইপ থেকে শুরু করে মূল প্রোডাক্ট তৈরির জন্যে বিভিন্ন তথ্যের ইনপুট এবং তার ফলাফলগুলি যাচাই করা যায়।
মোটকথা, আইডিয়া ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম প্রয়োগের মাধ্যমে কর্মীদের সম্পৃক্ততা এবং মনোবল বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যবসার কার্যক্রম আরো উন্নত করার মতো অসংখ্য সুবিধা পাওয়া যায়।
তাই অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই প্রতিযোগিতায় সুবিধা লাভের জন্যে এর গুরুত্ব বুঝতে পারছে এবং ভালো মানের আইডিয়া ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারের পেছনে নতুন করে বিনিয়োগ করছে।
জনপ্রিয় কয়েকটি আইডিয়া ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারের নাম- Infinity, Confluence, Miro, Aha, Codigital, Idea Box, Ideanote, Planbox Innovate ইত্যাদি।