ইন্টারনেট অফ থিংস বা আইওটি (IOT) এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা অনেক। গাড়ি, বাড়ি, পাইপলাইন বা মোবাইল টাওয়ারের মতো আধুনিক অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি যেসব স্থাপনা বা যেখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া সম্ভব, সেসব জায়গায় সংযোজিত সেন্সরের মাধ্যমে কাজ করবে আইওটি।
এর ফলে তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য ব্যবহার করে ব্যবসা পরিচালনার কৌশল উন্নত করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে নতুন সব উদ্ভাবনের মাত্রাও বাড়বে এবং ব্যবসার আয়বৃদ্ধির নতুন সব উৎস তৈরি হবে। অর্থাৎ, এই প্রযুক্তি ব্যবসা-বাণিজ্যের ধারাই বদলে দিতে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ের আগে আইওটি প্রযুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে অনেক আলোচনা হলেও বিশেষজ্ঞদের অনেকেই এ নিয়ে সন্দেহের মধ্যে ছিলেন। কিন্ত ফাইভ-জি প্রযুক্তি আসার ফলে ব্রডব্যান্ড সংযোগ আরো দ্রুত হয়েছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই (Ai) প্রযুক্তি অনেক এগিয়ে গেছে এবং অনুমাননির্ভর অ্যানালিটিক্স ও ক্লাউড টেকনোলজিও উন্নত হয়েছে।
ফলে আইওটি থেকে প্রাপ্ত ডেটা এখন সহজেই যেকোনো ধরনের কাজের সাথে সরাসরি সমন্বিত করা যায়। এতে বিভিন্ন শিল্পে কাজ করা প্রতিষ্ঠানও ডেটার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারছে।
আধুনিক যুগে এসে অনেক প্রতিষ্ঠানই ডিজিটাল রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সেজন্য অনেকেই ক্লাউড নির্ভর আইওটি প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। কারণ, আইওটির মাধ্যমেই প্রতিনিয়ত তথ্যপ্রাপ্তির নতুন নতুন উৎস তৈরি হচ্ছে।
আইওটি’র সাহায্যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাজ করা অনেক ম্যানুফ্যাকচারিং প্রতিষ্ঠান এখন সহজেই তাদের অ্যাসেম্বলি লাইনে ত্রুটিপূর্ণ প্রোডাক্ট শনাক্ত করতে পারছে। খুচরা বিক্রেতারাও আইওটি ব্যবহার করে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পাইকারদের কাছ থেকে পণ্য কিনছে এবং দোকান সাজাচ্ছে।
আইওটি প্রত্যাশা বনাম প্রাপ্তি-
ম্যানেজমেন্ট কনসাল্টিং প্রতিষ্ঠান ‘ম্যাককিনজি’র মতে, ২০২৫ সালের মধ্যে আইওটি থেকে ট্রিলিয়ন ডলার আয় আসবে। এছাড়াও জুনিপার রিসার্চে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহৃত আইওটি সেন্সরের সংখ্যা ২০২৫ সালের মধ্যে দ্বিগুণ হয়ে ৩৬.৮ বিলিয়নে দাঁড়াবে।
তবে আইওটি নিয়ে যত বেশি আলোচনা হয়েছে, সেই তুলনায় এই প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ খুব বেশি হয়নি। ফলে গত কয়েক বছরে আইওটি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের যতটা প্রত্যাশা ছিল, তার চেয়ে অনেক কম ফলাফল পাওয়া গেছে।
বছরখানেক আগেও অনেক প্রতিষ্ঠান আইওটি প্রযুক্তির প্রয়োগ নিয়ে সেভাবে ভাবেনি। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন আইওটি সেন্সরের মাধ্যমে ডেটা সংগ্রহ করলেও তারা জানতো না যে, এসব ডেটা তারা কীভাবে ব্যবহার করবে।
অর্থাৎ, মূল বাধা আসলে প্রযুক্তি না, বাধা হচ্ছে ডেটা নিজেই। তাই নানান শিল্পে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলির উচিৎ বিভিন্ন কেইস স্টাডি করে নতুন উদ্যোগ নেয়া, সমস্যার সমাধান করা এবং পেছন ফিরে তাকানো যে, এই সমস্যার সমাধানে ডেটা থেকে পাওয়া আইডিয়া কীভাবে কাজে লাগানো যায়।
সিমেন্স এবং জেনারেল ইলেকট্রিক-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলি বর্তমানে (IOT) প্রযুক্তিতে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে, যাতে তাদের কারখানার কার্যক্রমে আরো দক্ষতা আনা সম্ভব হয়।
এছাড়াও অনেক প্রতিষ্ঠানই এখন তাদের বিভিন্ন ফ্লোরে থাকা ক্যামেরা ও অন্যান্য সেন্সর থেকে প্রাপ্ত ডেটা সংগ্রহ করে সেখান থেকে অ্যাসেম্বলি লাইনের ত্রুটি বের করছে।
অর্থাৎ, কেবল ডেটা সংগ্রহ করাই যথেষ্ট না, ডেটা থেকে পাওয়া ইনসাইট কাজে লাগিয়ে ব্যবসার জটিল সমস্যাগুলির সমাধান বের করতে হবে। আর তখনই কষ্ট ও অর্থ বিনিয়োগ করে সংগ্রহ করা ডেটা থেকে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যাবে।