পাঠাও অ্যাপস বাংলাদেশের তৈরি একটি মিলিয়ন ডলারের অ্যাপস। ২০১৫ সালে তৈরি এই অ্যাপসটির রেভিনিউ এখন ১৪ মিলিয়ন ডলার। উবারের কনসেপ্টকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের মত একটি থার্ড-ওয়ার্ল্ড কান্ট্রিতে এত ভালো করা অবুশ্যই তাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল। কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জকে তারা মোকাবিলা করতে পেরেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে এখনও অবধি সবচেয়ে ভ্যালুয়েবল ক্যারিয়ার হচ্ছে সফটওয়ার ডেভেলপমেন্ট জব, যা দ্বিতীয় নাম্বারে র্যাঙ্ক করছে। এই সফটওয়ার ডেভেলপমেন্ট জবের বাৎসরিক আয় ১০৭,৫১০ ডলার।
বাংলাদেশেও এই অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট এবং সফওয়ার ডেভেলপমেন্ট সেক্টরটি বেশ গ্রো করছে। কারন হিসেবে ধরা যায়, অনলাইনে যেকোন সুবিধা প্রদান কিংবা গ্রহনের ক্ষেত্রে সবাই সফটওয়ার ভার্সন পছন্দ করে। ওয়েব ভার্সন সকলের কাছে বোধগম্য না হওয়ার কারনে এই সেক্টরের এত উত্থান।
বাংলাদেশে প্রচুর পরিমানে মোবাইল অ্যাপলিকেশন তৈরি হয়েছে, হচ্ছে, এবং আরও হবে। সরকারি বেসরকারি নানান প্রতিষ্ঠান তাদের সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে সফটওয়ার ডেভেলপমেন্টকে সর্বোচ্চ প্রধান্য দিচ্ছে। বাংলাদেশের বেশ কিছু অ্যাপস আপনার জীবন যাত্রাকে এত সহজ করে দিবে যা আপনাকে অবাক করেই ছাড়বে।
ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে শুরু করে অনলাইনে ডাক্তারের সেবা পাওয়া অবধি, সব যায়গায় অ্যাপস এর বয়াবহ রকম বৃদ্ধি আপনাকে ভাবতে বাধ্য করবে যে আপনি ডিজিটাল বাংলাদেশে অবস্থান করছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপার কত ধরণের?
মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপার সাধারণত দুই ধরণের হয়ে থাকে। যেমন- আইওএস, এবং অ্যান্ড্রয়েড। এছাড়াও অন্যান্য যে সকল অপারেটিং সিস্টেম ছিল তা এখন প্রায় হারিয়ে গিয়েছে বলতে হয় বা সেগুলোর ইউজার সংখ্যা এত কম যা সফটওয়ার তৈরে করতে যা খরচ হতে তার তুলনায় ফলাফল শুন্যের কাছাকাছি। যেমন ব্লাকবেরি ওএস, সিম্বিয়ান ওএস, জাভা ওএস ইত্যাদি। নতুন করে হুয়াওয়ের অপারেটিং সিস্টেম চালু হওয়ার হাইপ থাকলেও তা মার্কেটে এখনও এত প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি।
আইওএস ডেভেলপার-
আইওএস ডেভেলপাররা অ্যাপস ডেভেলপ করে শুধুমাত্র অ্যাপলের তৈরি পন্যের ব্যবহারের জন্য। বাংলাদেশে কিন্তু প্রায় ১.৫ মিলিয়ন অ্যাপল ডিভাইস এক্টিভ রয়েছে। এই অসাধারণ জনগোষ্ঠীকে কিছুতে হেলায় এড়িয়ে যাওয়ার মত নয়।
এদের বেশিরভাগ ইউজার এলিট শ্রেনীর লোকজন। বাংলাদেশে কোন কম্পানী অ্যাপস লঞ্চ করতে চাইলে আইওএস-এর জন্য অ্যাপস ডেভেলপের কথাও চিন্তা করতে হয়। আইওএস ডেভেলপাররা ব্যবহার করে Xcode, swift ইত্যাদি প্রোগ্রামিং টেকনোলজি এবং ল্যাঙ্গুয়েজ।
অ্যান্ড্রয়েড ডেভেলপার-
বাংলাদেশে সিংহভাগ স্মার্টফোন ইউজার অ্যান্ড্রয়েড ইউজার। এটি একটি ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম হওয়ার কারণে ব্যবহার এবং কাস্টমাইজেশন করা সহজ অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমের তুলনায়। স্ট্যাটিস্টিয়ার তথ্য মতে, বাংলাদেশে প্রায় ৯৫.৯ শতাংশ লোক অ্যান্ড্রয়েড ইউজার। তাই যে কেউ কোন প্রকার অ্যাপলিকেশন লঞ্চ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলে তা প্রথমে অ্যান্ড্রয়েড ইউজারদের টার্গেট করেই তৈরি করে।
বাংলাদেশে সবচেয়ে কম দামে অ্যান্ড্রয়েড ফোন পাওয়া যায়। মাত্র ২৯ ডলারে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন পাওয়া যায় এই দেশে। এটি ছাড়াও ভালো মানের যে কোন প্রকার অ্যান্ড্রয়েড ফোন আইওএস অপারেটিং সিস্টেমের ডিভাইসের তুলনায় সস্তা হওয়ায় সবাই অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে নিজেদের আবদ্ধ করে রাখছে।
মোবাইল অ্যাপস কত ধরণের হয়ে থাকে?
মোবাইল অ্যাপস সাধারণত তিন ধরণের হয়ে থাকে। যেমন- নেটিভ অ্যাপস, হাইব্রিড অ্যাপস, এবং ওয়েব অ্যাপস।
নেটিভ অ্যাপস-
নেটিভ অ্যাপস হলো ডেডিকেটেড ওয়ান ফ্লাটফর্ম অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট। অর্থাৎ স্পেসিফিক কোন অপারেটিং সিস্টেমকে টার্গেট করে অ্যাপস তৈরি করাই হলো নেটিভ অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট। হতে পারে শুধু মাত্র অ্যান্ড্রয়েডের জন্য, বা আইওএস-এর জন্য। একটি অপারেটিং সিস্টেম সিলেক্ট করে সুন্দর করে অপটিমাইজ করাই হলো নেটিভ অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট।
এই ধরণের অ্যাপস গুলো অনেক ভালো ইউজার এক্সপেরিয়েন্স হয়ে থাকে। এগুলো নির্দিষ্ট কাজ করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট স্মুথ।
হাইব্রিড মোবাইল অ্যাপস-
হাইব্রিড মোবাইল অ্যাপস সাধারণত উভয় ভার্সনে ব্যবহার করা যায়। মোবাইলে এবং ওয়েবে একই সাথে। যেমন সুরক্ষা অ্যাপস। এটি আপনি চাইলে মোবাইলেও ব্যবহার করতে পারেন অথবা সুরক্ষা ডট কমে গিয়েও ব্যবহার করতে পারেন। এই ধরনের অ্যাপসকে হাইব্রিড অ্যাপস বলা হয়ে থাকে।
এই হাইব্রিড মোবাইল অ্যাপস তৈরিতে ব্যবহার করা হয় HTML5 প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। যদিও এটি নেটিভ অ্যাপস এত মত এত ফাস্ট এবং রিল্যায়বল না, তাও এটি কার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে অনেক সুবিধে দিয়ে থাকে।
যেমন সুরক্ষা অ্যাপস এর কথা চিন্তা করুন। এখানে সরকার সকল ধরনের মানুষের কথা চিন্তা করেই অ্যাপসটি ডেভেলপ করেছে। এখন কারো কাছে হয়তো অ্যান্ড্রয়েড ফোন নাও থাকতে পারে, অথবা ডেস্কটপ ভার্সন নাও থাকতে পারে। কিংবা ইউজার ভিন্ন কোন অপারেটিং সিস্টেম ইউজারও হতে পারে। বিশেষ করে আইওএস ডিভাইস ইউজার হতে পারে। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। তাই হাইব্রিড অ্যাপস এর সাহায্য নিতে হয়।
ওয়েব অ্যাপস-
ওয়েব অ্যাপস-এর একটি বড় সুবিধে হচ্ছে এটি সব ধরণের ডিভাইসে ব্যবহার করা যায়। যেমন সুরক্ষা ডট কম, কিংবা অনলাইনে পাবলিক পরিক্ষা গুলোর রেজাল্ট, চাকুরির আবেদন ইত্যানি নানান রকম কার্য সম্পাদনের জন্য ওয়েব অ্যাপস এর ভূমিকা অনেক বেশি। এই বিষয়টি সকল সফটওয়ার ডেভেলপারদের মাথায় রাখা দরকার যদি তারা নিরবিচ্ছিন সফটওয়ার সুবিধে দিতে চায়।
এমন অনেক অ্যাপলিকেশন রয়েছে, যেগুলো শুধুমাত্র একটি অপারেটিং সিস্টেমকে টার্গেট করে তৈরি করলেই চলে। কিন্তু যখন কোন বড় পরিসরের অডিয়েন্সকে টার্গেট করা হয় তখন অবুশ্যই ওয়েব অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট-এর কথা মাথায় রাখা প্রয়োজন।
বাংলাদেশে একজন সফটওয়ার ডেভেলপার কিভাবে আয় করতে পারে?
বাংলাদেশে একজন সফটওয়ার ডেভেলপার আয় বিভিন্ন উপায়ে করতে পারে। দেশে এই সেক্টরটি একটি ক্রমবর্ধমান সেক্টর। সম্ভাবনাময় সেক্টর। এছাড়াও প্রতি বছর প্রচুর পরিমানে ছেলেরা আইটি সাবজেক্ট নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করছে। এই সকল ছাত্রদের কর্মক্ষেত্রের পরিধিও অনেক বিশাল।
আইটি ফার্ম-
তথ্য প্রযুক্তির উন্নতির ফলে বাংলাদেশে প্রচুর পরিমানে আইটি ফার্ম সৃষ্টি হয়েছে। দেশে এখন মিলিয়ন ডলারের উপর রেভিনিউ আর্ন করা প্রচুর পরিমানে আইটি ফার্ম রয়েছে। একজন সফটওয়ার ডেভেলপার এই সকল আইটি ফার্ম গুলোতে জব নিতে পারে।
সরকারি প্রজেক্ট-
বাংলাদেশ সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় সফটওয়ার-এর ভূমিকা অপরিসীম। সরকারের বেশ কিছু ভালো ভালো সফটওয়ার রয়েছে। এছাড়াও আগামীতে প্রায় সব ধরণের সরকারী কার্যক্রমকে সফটওয়ারের আওতায় নিয়ে আসার মাস্টার প্লান রয়েছে।
ফ্রিল্যান্সিং
ফ্রিল্যান্সিং একটি লুক্রেটিভ সেক্টর। এই সেক্টরে অন্যান্য সেক্টরের তুলনার আয়ের পরিমান অনেক বেশি। কারন বাংলাদেশে এখনও সফটওয়ার খাত যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ফার্স্ট-ওয়ার্ল্ড কান্ট্রির মত বড় নয়। তাই এখানে কাজের পরিমান কম থাকবে স্বাভাবিক। কিন্তু একই কাজ অন্যান্য দেশে প্রচুর পরিমানে ডিমান্ডেবল। একজন দক্ষ সফটওয়ার ডেভেলপার ঘরে বসে ফার্স্ট-ওয়ার্ল্ড কান্ট্রির মত পে স্কেলে আয় করতে পারে।
এজেন্সি
নিজেই কিছু সহকর্মী নিয়ে এজেন্সির মত কাজ শুরু করে দিতে পারে সফটওয়ার ডেভেলপাররা। কারণ যারা সফটওয়ার বানাতে চায়, তাদের বাজেট বেশ ভালোই থাকে। তারা অন্য কোন ধরণের অতিরিক্ত হ্যাসেল নিতে চায় না বিধায় সব ধরণের কাজ একজনের বা একটি প্রতিষ্টানের উপর ন্যাস্ত করতে আগ্রহী। এক্ষেত্রে কেউ চাইলে নিজের টিম তৈরি করে সফটওয়ার ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস দিয়ে আর শুরু করতে পারে।
বাংলাদেশে একজন সফটওয়ার ডেভেলপার-এর আয় কত?
বাংলাদেশে সফটওয়ার ডেভেলপারদের পে-স্কেলের অবস্থান চতুর্থ নাম্বারে। পেস্কেলের তথ্য মতে বাংলাদেশে একজন সফটওয়ার ডেভেলপারের বাৎসরিক আয় ৪৯৫,৮৫১ টাকা।